ইউকে সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
হেডলাইন

আজমিরীগঞ্জে ৬ প্রাথামিক বিদ্যালয়ে নেই শৌচাগার, দুর্ভোগ শিক্ষার্থী

আজমিরীগঞ্জে ৬ প্রাথামিক বিদ্যালয়ে নেই শৌচাগার, দুর্ভোগ শিক্ষার্থী

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে ছয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই শৌচাগার। নিজস্ব স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব বিদ্যালয়ের প্রায় ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী ও ৩৫ জন শিক্ষককে।

এসব বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শৌচাগারের অভাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। ক্লাস শুরুর সময় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেশি থাকলেও দুপুরের দিকে কমে যায়। অনেক শিক্ষার্থী প্রাকৃতিক কাজ সারতে তাদের বাড়িতে গেলে সেদিন আর ক্লাসে ফেরে না। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষার মান উন্নয়ন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আজমিরীগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা মোট ৬৫টি। এর মধ্যে শুক্রিবাড়ি, পাহাড়পুর, উদয়পুর, শাহ নগর, রামনাথ ও উত্তর রসুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শৌচাগার নেই। তবে দু-একটি বিদ্যালয়ে অস্থায়ীভাবে টয়লেট নির্মাণ করা হলেও সেগুলো অস্বাস্থ্যকর। সেগুলো ব্যবহারে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনীহা থাকলেও জরুরি প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে।

এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে পাহাড়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪০১ জন ও শিক্ষক ৮ জন রয়েছেন, উদয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৯৩ জন ও ৬ জন শিক্ষক, শাহ নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১২৮ জন শিক্ষার্থী ও ৩ জন শিক্ষক, রামনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৮৩ জন শিক্ষার্থী ও ৫ জন শিক্ষক, উত্তর রসুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০৪ জন শিক্ষার্থী ও ৬ জন শিক্ষক এবং শুক্রিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২১৬ জন শিক্ষার্থী ও ৭ জন শিক্ষক রয়েছেন। বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার না থাকায় অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সময়মতো টয়লেট করতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে অনেকেই বাসা-বাড়িতে চলে যান। অনেকে টয়লেট চেপে রাখায় মূত্রতন্ত্র সংক্রমণ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

শুক্রিবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দীপা আক্তার বলে, স্কুলে ভালো টয়লেট না থাকায় খুব সমস্যা হচ্ছে। বাথরুমে যেতে হলে আমরা বাড়িতে চলে যাই।

একই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়মন মিয়া বলে, স্কুলে যে টয়লেটটি আছে, সেটি খুবই নোংরা। দুর্গন্ধ ছড়ায়। টয়লেটে যেতে ইচ্ছে করে না।

শিক্ষার্থী অভিভাবক জিহান আহমেদ বলেন, শুক্রিবাড়ি গ্রামে একটি বিদ্যালয় থাকায় শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি। তবে বিদ্যালয়ে টয়লেট না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী তাদের বাড়িতে চলে যায়। এতে তাদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।

শুক্রিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গীতাঞ্জলি দেব বলেন, স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণের পর থেকেই টয়লেট নেই। এতে বিরাট সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিদ্যালয়ের আশপাশে থাকা বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী তাদের বাড়িতে গেলে আর ফিরে আসে না। পরে বাধ্য হয়ে অস্থায়ীভাবে একটি টয়লেট নির্মাণ করেছি। তবে সেটি খুবই অস্বাস্থ্যকর।

পাহাড়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গণেন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, তাদের বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নেই। যে কারণে রিং বসিয়ে অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের অসুবিধা হচ্ছে। তবে বিদ্যালয়ে শৌচাগার নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. সোহরাব বলেন, সময়মতো মলত্যাগ না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। তা ছাড়া মলমূত্র চেপে রাখলে কিডনি বিকল হওয়ারও শঙ্কা থেকে যায়।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজনুর রহমান বলেন, কয়েকটি বিদ্যালয়ে শৌচাগার না থাকায় কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। আবার অনেক বিদ্যালয়ে শৌচাগার থাকলেও নষ্ট হয়ে গেছে। এসব বিদ্যালয়ের তালিকা তৈরি করে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ