ইউকে মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
হেডলাইন

যে গ্রামে মানুষ এবং পশুপাখি জন্মের পরই অন্ধ হয়ে যায়!

যে গ্রামে মানুষ এবং পশুপাখি জন্মের পরই অন্ধ হয়ে যায়!

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :চারপাশে ঘন জঙ্গল। গাছপালা, লতাপাতার সঙ্গে বিভিন্ন জীবজন্তুর বাস। আলো আঁধারিতে এমনিতেই একটা রহস্যময় পরিবেশ তৈরি হয়ে থাকে সেখানে। সেই জঙ্গলের মাঝেই ছোট্ট একটি গ্রাম, নাম টিলটেপেক

বাইরে থেকে সাধারণ আর পাঁচটা গ্রামের মতোই দেখতে লাগবে একে। ভেতরে ঢুকলেও তাই। কিন্তু কোথাও যেন একটা অন্যরকম ব্যাপার রয়েছে। একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন সেই রহস্য। গ্রামে যে মানুষেরা রয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই অন্ধ! চোখে দেখতে পান না কেউই! আট থেকে আশি – গোটা গ্রামই অন্ধত্বের কবলে পড়েছে। তাও আজ থেকে নয়, বহু বছর ধরেই নাকি এখানকার ছবিটা এমন।

মধ্য আমেরিকার অন্যতম দেশ মেক্সিকো। ফুটবল থেকে ড্রাগ, বন্যপ্রাণ – নানা কারণে গোটা বিশ্বে এই দেশের নাম ছড়িয়ে রয়েছে। সেই দেশেরই অদ্ভুত একটি গ্রাম এই টিলটেপেক। মেক্সিকোর অন্যতম প্রান্তিক এই গ্রামে বসবাস করেন জাপোটেক গোষ্ঠীর মানুষেরা।

আজ থেকে নয়, বহু বছর ধরে এই গ্রাম, এর আশেপাশের জঙ্গলই তাঁদের সহায়সম্বল। ৩০০-রও বেশি মানুষ এখানে বসবাস করেন। গ্রামের অবস্থা যে খুব একটা ভালো, তা নয়। তবে সবকিছুর বাইরে অদ্ভুত এই রহস্যের জন্য গোটা পৃথিবীর কাছে টিলটেপেকের নাম ছড়িয়ে পড়েছে।

একটা গ্রামের সমস্ত মানুষ অন্ধ! এমনটা বিশ্বাস করা একটু কঠিন কাজ, তাই না? কিন্তু টিলটেপেকের ছবিটা তাই। তবে রহস্যের এখানেই শেষ নেই। কেবল মানুষই নয়, এই গ্রামের ভেতর যত পশুপাখি রয়েছে, প্রত্যেকেই অন্ধ! কিন্তু শুরুতে নাকি এমন পরিস্থিতি থাকে না!

পশুপাখি হোক বা মানুষ, সুস্থ শরীরেই সবাই জন্মগ্রহণ করে। নবজাতকরাও চোখ মেলে পৃথিবীর আলো দেখে। সবকিছুই থাকে স্বাভাবিক। কিন্তু এই ‘আচ্ছে দিন’-এর মেয়াদ মাত্র কয়েকদিনের। তারপরই অন্ধত্ব গ্রাস করে সেই শিশুদের। ‘অজানা কারণে’ জন্মের কয়েকদিন পরই সমস্ত নবজাতক অন্ধ হয়ে যায়। পশু, পাখি, মানুষ, গৃহপালিত প্রাণী, সবার অবস্থাই এমন। কিন্তু কেন?

বহু বছর ধরে এই রহস্যেরই সমাধান করার চেষ্টায় রয়েছেন মেক্সিকো প্রশাসন ও বিজ্ঞানীরা। টিলটেপেক গ্রামের জাপোটেক গোষ্ঠীর মানুষদের অবশ্য বিশ্বাস অন্য। গ্রামের ভেতরেই ঘুরে বেড়ায় লোককথা। গ্রামবাসীদের দাবি, ঘন জঙ্গলের ভেতর এক প্রকারের গাছ আছে। স্থানীয়রা তাকে ‘লাবজুয়েলা’ বলেন।

টিলটেপেকের বাসিন্দাদের বিশ্বাস, ওই গাছটি অভিশপ্ত। আর সেই অভিশাপের কবলেই পড়েছে গোটা গ্রাম। তাই জন্মের কয়েকদিন পরই সবাই অন্ধ হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা অবশ্য এই তত্ত্ব বিশ্বাস করেননি। এমন কোনও অভিশপ্ত গাছ তাঁদের নজরেও আসেনি। তবে রহস্যের সন্ধানে বেরিয়ে একটু বিশেষ তথ্য পেয়েছেন তাঁরা।

টিলটেপেক গ্রামের চারদিকটা ঘন জঙ্গল দিয়ে ঘেরা। আর আমেরিকার এই জঙ্গলে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী বসবাস করে। সেরকমই একটি প্রাণী হল ‘ব্ল্যাক ফ্লাই’। সামান্য মাছির মতোই দেখতে, আকারে একটু বড়। কিন্তু স্বভাব আমাদের ঘরে, মিষ্টির দোকানে ঘুরে বেড়ানো মাছিদের মতো নয়। বরং ব্ল্যাক ফ্লাইকে একটু এড়িয়েই চলতে বলেন বিজ্ঞানীরা। তীব্র বিষাক্ত এই মাছি কামড়ানোর ফলে নানা রোগ দেখা যায়। আর এই মাছিই নাকি রহস্যের কেন্দ্রবিন্দুতে।

গবেষকরা বলছেন, মেক্সিকোর ওই গ্রামের আশেপাশে ঘন জঙ্গল। আর সেখানে প্রচুর পরিমাণে ব্ল্যাক ফ্লাইয়ের বসবাস। তারা গ্রামেও ঢুকে পড়ে। আর সেই বিষাক্ত মাছির কামড়ের ফলে জীবাণু শরীরের ভেতর ছড়িয়ে পড়ে। তার জেরেই নাকি সবাই অন্ধ হয়ে যায়। এনিয়ে আরও গবেষণা চলছে।

আরও কিছু কারণ রয়েছে কিনা, সেটা জানার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। মেক্সিকো প্রশাসনও টিলটেপেক গ্রামের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয় সেই চেষ্টা। গ্রামের মানুষগুলোই নিজেদের জায়গা ছেড়ে নড়তে চাইছে না। বহু বছর ধরে চলা এই অন্ধত্বের প্রথাকে তাঁরা একপ্রকার ‘বরণ’ করে নিয়েছে। রহস্য তাই এখনও জারি রয়েছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ

ukbanglaonline.com