
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :প্রকৃতির রিক্ততায় শীত কাটিয়ে এবার উষ্ণ পরশ দিতে ডানা মেলে সেজেছে ঋতুরাজ বসন্ত। সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বৃহৎ শিমুল বাগানের এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রিয়জনদের সাথে নিয়ে ছুটে আসছেন প্রকৃতি প্রেমীরা। ষড় ঋতুর বাংলাদেশে বসন্তকাল যেন সার্থক হয়ে উঠেছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় যাদুকাটা নদীর তীরে। প্রতি বছরের মতো এবারো ঋতুরাজ বসন্তে এই শিমুল বাগানের তিন হাজার গাছ ছেয়ে গেছে লাল রঙের ফুলে ফুলে। প্রকৃতির এই অনন্য সুন্দর দৃশ্য প্রাণ ভরে উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাগানে ছুটে অসছেন সৌন্দর্য পিপাষু মানুষ।
কেউ পরেছেন বাসন্তী রঙের শাড়ি, কেউ নীল। খোঁপায় গুঁজেছেন টকটকে লাল শিমুল। বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি বা ফতুয়া পরে তাদের সঙ্গে এসেছেন প্রিয়জন। কেউ তুলছেন ছবি আবার কেউ ঘুরে ঘুরে দেখছেন। ফুলের সৌন্দর্য আর পর্যটকদের পদভারে মেতে উঠেছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের শিমুল বাগান।
প্রতিদিনই উৎসবের আমেজে লাল ফুলের রঙে সাজছে তরুণীরা। বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে খোঁপায় গুঁজেছে টকটকে লাল শিমুল ফুল, মাথায় টায়রা আর হাতে পরেছে বিভিন্ন রঙের চুড়ি। বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি বা ফতুয়া পরে এসেছে শিমুল বাগানে তরুণরাও। ফুলের সৌরভে আর পর্যটকদের ভিড়ে মেতে উঠেছে বাগানের চারপাশ।
সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে শিমুল বাগানের অবস্থান। মানিগাঁও গ্রামে ১০০ একর জায়গার উপর গড়ে উঠা শিমুল বাগানের প্রতিটি গাছে এসেছে ফুল। সবুজ জলের যাদুকাটা নদী পেরিয়ে যেতে হয় এই বাগানে। বিস্তৃর্ণ বালুচর পায়ে হেঁটে গিয়ে শিমুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হয়। শিমুল বাগানে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই ফুল ফুটতে শুরু করে। লাল ফুলের কল্যাণে পুরো এলাকায় হয়ে ওঠে রক্তিম আভা। ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে, মাঝে যাদুকাটা নদী আর এপারে শিমুল বাগান।
স্থানীয়দের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতি বছর ফাগুনে আগুনরাঙা প্রকৃতির এই রূপ উপভোগ করতে তাহিরপুরে আসেন পর্যটকরা। এবছরও পহেলা ফালগুন ও ভালোবাসা দিবসে পর্যটকদের উপচেপড়া ঢল নামে যাদুকাটা ও মাহারাম নদীর তীরের জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা প্রতিদিনই আসছেন ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। গাছে গাছে রক্তরাঙা শিমুল। এ বছর বাগানের তিন হাজার শিমুল গাছের মধ্যে দুই হাজার শিমুল গাছে ফুল ফুটেছে।
উপজেলার সোহালা গ্রামের বৃক্ষপ্রেমী প্রয়াত জয়নাল আবেদীন ২৫ বছর আগে তিন হাজার শিমুলের চারা রোপণ করে গড়ে তুলেন এই বাগান। ২০১২ সালে বাগানে প্রথন শিমুল ফুল ফোটে। ধীরে ধীরে এই বাগানের সৌন্দর্য বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পর্যটকদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। বাগানটি এখন দেখভাল করেন জয়নাল আবেদীনের ছেলে রাখাব উদ্দিন। তিনি জানান, পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিশুদের খেলাধুলার জন্য বিভিন্ন রাইড করা হবে। বাগানের পাশে গড়ে তোলা হবে রেস্ট হাউজ, বাড়ানো হবে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা।
চলতি বছর বাগানে আরও তিন শতাধিক শিমুলের চারা লাগানো হয়েছে বলেন জানান বাগান মালিক।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, সুনামগঞ্জের পর্যটন শিল্পের বিকাশে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে রিসোর্ট স্থাপন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’