ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশের নীল নদ খ্যাত সর্ববৃহৎ নদী হচ্ছে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার সারী নদী। এ নদীতে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বোমা মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করতে শুরু করেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। এ চক্র সিলেট জেলা প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে এ অপতৎরতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চক্রটি সোমবার (১২ ডিসেম্বর) বালু উত্তোলন শুরু করলে এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে তা বন্ধ করে। তবে বোমা মেশিন এখনও বসিয়ে রেখেছে তারা।
অভিযুক্তরা বলছেন- সারী নদী খননের জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসকের সাথে চুক্তি (ডিড) রয়েছে। তবে বিষয়টি ‘মিথ্যা’ বলছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন।
১৪২৯ বাংলা সনে জৈন্তাপুরের সারী নদী তিন অংশে বিভক্ত করা হয়। এর মধ্যে মধ্যম বা দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের সারী ব্রিজ হতে লালখাল পর্যন্ত। এ অংশ থেকে শ্রমিকদের মেশিন ছাড়া বালতি দিয়ে বালু-পাথর উত্তোলনের জন্য ইজারা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু ইজারাদার না হয়েও স্থানীয় সোহেল তাজের নেতৃত্বে প্রভাবশালী একটি চক্র নদীর (উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের কামরাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন) এ অংশে বোমা বা ড্রেজার মেশিন বসিয়ে খনরের নামে বালু উত্তোলনের প্রস্তুতি নেয় এবং সোমবার থেকে উত্তোলন শুরুও করে। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় বাসিন্দা ও বালু শ্রমিকরা বাঁধা প্রদান করেন। এদের প্রতিবাদের মুখে সাময়ীকভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ রাখলেও বোমা মেশিন এখনও বসানো রয়েছে এবং সোহেল তাজ ও তাঁর সহযোগিরা ফের বালু উত্তোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে সোহেল তাজের ঘনিষ্টজন মাসুম আহমদ বলেন- আমরা সরকারের সাথে অনুমতি নিয়ে সারী নদী খননের জন্য সিলেটের ডিসি মহোদয়ের সাথে চুক্তি (ডিড) করে এ প্রস্তুতি নিয়েছি। নদীর নাব্যতা রক্ষায় সারী নদী খননের অনুমতি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মহোদয়।
তবে জেলা প্রশাসকের চুক্তি বা কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখতে চাইলে তারা কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। এমনকি সোহেল তাজ এলাকায় অবস্থান করলেও তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে সরাসারি কথা বলতে সম্মত হননি।
পরে সোহেল তাজের সহযোগীরা এ প্রতিবেদককে এ বিষযে সংবাদ লেখা থেকে বিরত থাকতে নানাভাবে প্রলোভন দেখান।
এদিকে, সোহেল তাজ চারিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্যের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় জানান- আমার সাথে সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাথে সারী নদী খননের নামে চুক্তি (ডিড) হয়েছে। সেজন্য আমি নদী খনন কাজ শুরু করেছি।
স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন অবগত আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেখানে ডিসির সাথে চুক্তি হয়েছে সেখানে উপজেলা প্রশাসনকে জানানোর প্রয়োজন নেই। অনুমতির কাগজ দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি।
নিজপাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইন্তাজ আলী বলেন, আমি জেনেছি- তারা গায়ের জোরে বোমা মেশিন বা ড্রোজার মেশিন বসিয়ে কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই নদী খননের নামে বালু উত্তোলন কাজ শুরু করেছে। কিন্তু সারী নদীর প্রধান শাখা নদী বড় নায়াগাং নদীর ১০কিলোমিটার এলাকা বালুতে ভর্তি হয়ে পানি শুকিয়ে গেছে। সেই নদীর তীরের বাসিন্দারা পানির জন্য হাহাকার করছেন। সেই বড় নয়াগাং নদী খননের প্রয়োজন, কিন্তু সেই নদী খনন না করে সারী নদীর নাব্যতা থাকার পরও প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে খনন কাজের নামে বালু লুট করতে নেমেছে। তাদের কোনো অনুমতি আছে বলে আমার জানা নেই। শ্রমিকদের স্বার্থে যন্ত্রদানব জব্দ করে এ চক্রকে দ্রুত শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানাচ্ছি।
জৈন্তাপুর উপজেলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ এ বিষয়ে বলেন, সারী নদী খননের কোনো অনুমতি নেই। যুগ যুগ ধরে সারী নদীতে যেটি হচ্ছে- যেখানে বালু জমছে সেখান থেকে শ্রমিকরা বালতি দিয়ে বালু তুলে নিচ্ছে এবং ইজারার মাধ্যমে রাজস্ব পাচ্ছে সরকার। কেউ বোমা কিংবা ড্রেজার মেশিন বসানোর অনুমতি নেই। যারা বোমা কিংবা ড্রেজার মেশিন বসিয়েছে তারা অবৈধ কাজ করেছে। প্রশাসনের উচিত- দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল বশিরুল ইসলাম বলেন- ডিসি স্যার অনুমতি প্রদান করলে উপজেলা প্রশাসন অবশ্যই পত্র পেতো। কিন্তু নদী খননের বিষয় আমাদের কোনো কিছু জানা নেই। এলাকাবাসী আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।










