
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের বাংলাদেশ সফরের তাৎপর্য এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছেন চীনের উদ্যোগে নেওয়া বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এবং বাংলাদেশের ভিশন ২০৪১ আরও একীভূত করার বিষয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এর সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা ট্রিবিউনের প্রবীর কুমার সরকার। তাদের এই বিশেষ আলাপচারিতা পাঁচটি পর্বে প্রকাশিত হবে।
আজকের পর্বে চীনের স্টেট কাউন্সিলর এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের বাংলাদেশ সফরের তাৎপর্য এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর গুরত্ব উঠে এসেছে।
চীনের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের বাংলাদেশ সফরে কী অর্জন এসেছে বলে মনে করেন?
লি জিমিং: চীন ও বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং পারস্পারিক সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদার। চীনের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সফরের লক্ষ্য ঐতিহ্যগত বন্ধুত্ব অব্যাহত রাখা এবং পারস্পরিক উপকারভোগী সহযোগিতার উন্নতি ঘটানো।
ঢাকায় আগমনের পর ওয়াং ইয়ে প্রথমে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ মিথস্ক্রিয়ার ইতিহাস স্মরণ করেন এবং আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দৃঢ় ঐতিহাসিক, সামাজিক এবং জনগণের মধ্যকার ভিত্তির কথা উল্লেখ করেন।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশও চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বকে লালন করে বলে উল্লেখ করেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, শান্তি বজায় রাখা ও অভিন্ন উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বাংলাদেশ চীনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখে এবং চীনের সঙ্গে সংহতি ও সহযোগিতাকে আরও গভীর করার জন্য এর বিকল্প নেই। বাংলাদেশ এক-চীন নীতিতে অটল থাকবে এবং তাইওয়ানকে চীনা ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেখে।
দুই পক্ষ পারস্পরিক রাজনৈতিক বিশ্বাস জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতির উপর ভিত্তি করে আমরা স্বাধীনতা, জাতীয় মর্যাদা এবং মূল স্বার্থ রক্ষা করতে নিজ নিজ জাতীয় অবস্থার ক্ষেত্রে উপযুক্ত উন্নয়নের পথ অনুসরণ করতে একে অপরকে সমর্থন করি। আমরা দেশ পরিচালনায় দুই পক্ষের পারস্পারিক বিনিময়ে আগ্রহী।
উভয় পক্ষ উন্নয়ন কৌশল নিয়ে আরও ঘনিষ্ঠ পারস্পারিক সমন্বয় করতে সম্মত হয়েছে।এর মাধ্যমে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এবং ভিশন ২০৪১ পরিকল্পনা আরও একীভূত হবে।
অবকাঠামো, ডিজিটাল অর্থনীতি, সবুজ উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও গভীর হবে। চীনে বাংলাদেশের রপ্তানিকে আরও উত্সাহিত করার জন্য বাংলাদেশি পণ্যের ৯৮% ট্যারিফ লাইন শুল্কমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
উভয় পক্ষ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। আমরা একটি নতুন সংস্কৃতি ও পর্যটন বিনিময় কর্মসূচিতে স্বাক্ষর করেছি এবং দারিদ্র্য নিরসনে বিনিময় ও সহযোগিতাকে আরও উন্নত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার জন্য পুনরায় চীনে যেতে স্বাগত জানানো হয়েছে। ধীরে ধীরে দুই দেশের ফ্লাইট বাড়ানো হবে।
এই সফরের মাধ্যমে চীন ও বাংলাদেশ ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। এক-চীন নীতি পুনর্ব্যক্ত করেছে, কৌশলগত একীকরণকে আরও গভীর করতে সম্মত হয়েছে এবং ব্যবহারিক সহযোগিতা আরও উন্নত করতে সম্মত হয়েছে। যার ফলে একটি অস্বস্তিকর আন্তর্জাতিক পরিবেশের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলে এবং এর বাইরে স্থিতিশীলতার যৌথ শক্তি সঞ্চারিত হয়েছে। এই সফর ফলপ্রসূ ছিল এবং এর মাধ্যমে অনেক কিছু অর্জিত হয়েছে।
ঢাকা ট্রিবিউন: চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টুডেন্ট ভিসা পুনরায় চালু করার ঘোষণা দিয়েছেন। চীনে এখন কতজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে? এই সঙখ্যা বাড়ানোর জন্য কি করা যেতে পারে?
লি জিমিং: চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে (করোনাভাইরাস মহামারির আগে) প্রায় ১৫,০০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছিল। তাদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চীন সরকারের বৃত্তি পেয়েছে এবং বেশিরভাগ শিক্ষার্থী অন্যান্য চীনা বৃত্তি (প্রদেশ, পৌরসভা, বিশ্ববিদ্যালয়, সিল্ক রোড স্কলারশিপ, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট স্কলারশিপ, ইত্যাদি) থেকে তহবিল পেয়েছে। চীনে নিজ খরচে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী ছিল, যদিও এই সংখ্যাটি খুব কম।
সম্প্রতি, বাংলাদেশে চীনা দূতাবাস স্টুডেন্ট ভিসা পুনরায় চালু করার ঘোষণা দিয়েছে এবং বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের চীনা ক্যাম্পাসে ফিরতে পরামর্শ এবং শিক্ষার্থীদের অনলাইন আবেদনের প্রক্রিয়াসহ সংশ্লিষ্ট কাজ শুরু করেছে।
ঘোষণার পর গত ৯ আগস্ট একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা ইস্যু করা হয়। আমরা এই কাজটি ত্বরান্বিত করতে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের চীনা ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে সহায়তা করার চেষ্টা করছি।