ইউকে বাংলা অনলা্ইন ডেস্ক : বুধবার (২৬ জানুয়ারি) ৭৫ বছরে পা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১৯৪৮ সালের এই দিনে ঠাকুরগাঁওয়ে জন্ম নেন তিনি। তার ৭৫তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দলের সিনিয়র এবং তরুণ নেতারা।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান জানান, ১৯৪৮ সালের ২৬ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে মহাসচিব নির্বাচিত হন।
এর আগে, তিনি দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। ২০১১ সালের মার্চে তৎকালীন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর তিনি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পান।
১৯৯১ সালে পঞ্চম ও ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খাদেমুল ইসলামের কাছে পরাজিত হন।
মির্জা ফখরুল ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেনকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর নভেম্বরে বিএনপি সরকার গঠন করলে খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় প্রথমে তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও পরবর্তীতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০০৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।
মির্জা ফখরুল ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি একই সাথে ঠাকুরগাঁও-১ ও বগুড়া-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। বগুড়া-৬ আসনে নির্বাচিত হলেও নিজ আসন ঠাকুরগাঁও থেকে পরাজিত হন। পরবর্তীতে শপথ না নেওয়ায় নির্বাচন কমিশন বগুড়া-৬ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে এবং সেখানে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
৭৫তম জন্মদিন অনেকটা নীরবে পার হলেও দলের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন মির্জা ফখরুল। এ বছরও তার জন্মদিন উদযাপনের কোনো পরিকল্পনা বা ইচ্ছা নেই বলে জানান শায়রুল কবির খান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) পাস করা মির্জা ফখরুল ছাত্র রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন। তৎকালীণ পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন) এসএম হল শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন। মির্জা ফখরুলের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল শিক্ষক হিসেবে। ১৯৮০-এর দশকে তিনি মূলধারার রাজনীতিতে আসেন।
রাজনীতিতে আসার বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পরিবারের রাজনৈতিক ঐতিহ্যই এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রেখেছে। তার দাদা, বাবা ও দুই চাচা সবাই রাজনীতি করেছেন। এ কারণেই তিনি ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হন। পরে দেশের উত্তরাঞ্চলের সংগঠক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নেন।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭০ সালে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে শিক্ষকতার জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি, তাতে উত্তীর্ণ হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, এমন ধারণা করেছিলেন তিনি। সেই প্রেক্ষিতে শিক্ষকতাকেই উপযুক্ত পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তবে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে শেষ পর্যন্ত ১৯৮৮ সালে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মূল ধারার রাজনীতিতে ফেরেন তিনি। এর পরের বছরই তিনি যোগ দেন বিএনপিতে।
ব্যক্তিগত জীবনে মির্জা ফখরুল বিবাহিত এবং দুই মেয়ের বাবা। বড় মেয়ে মির্জা শামারুহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষে সেখানেই শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে কর্মরত আছেন। ছোট মেয়ে মির্জা সাফারুহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন।
তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী। বর্তমানে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মির্জা ফখরুলের বাবা মির্জা রুহুল আমিন একজন আইনজীবী ছিলেন এবং ঠাকুরগাঁওয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে ও পরে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
মির্জা ফখরুলের চাচা মির্জা গোলাম হাফিজ ছিলেন বিএনপি নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের ৪র্থ স্পিকার। মির্জা হাফিজ ১৯৭৮ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারে ভূমি মন্ত্রী, ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে স্পিকার এবং ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মির্জা ফখরুলের অপর চাচা উইং কমান্ডার এস আর মির্জা এপ্রিল ১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার, যেটি মুজিবনগর সরকার নামে খ্যাত, এই সরকার কর্তৃক ডাইরেক্টোরেট অব ইয়ুথ ক্যাম্পের পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন।