
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ঔপনিবেশিক শাসনবিরোধী জনমানস ও স্বাধীনতার প্রবল আকাঙ্ক্ষা দানা বেঁধে উঠেছে, তখন ১৯২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের এক রাতে ২২ বছরের তরুণ নজরুল লিখেছিলেন রক্তে দোলা জাগানো ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি। বিজলী পত্রিকায় কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি। গত একশ বছরে বহু আন্দোলন-সংগ্রামে বাঙালিকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে এই কবিতা। ‘বিদ্রোহী’র শতবর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে দেশ-বিদেশে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে ‘বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ উদযাপন কমিটি’।
শুক্রবার সকালে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে ‘বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ’ উদযাপন উপলক্ষে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করা হয়। শতবর্ষ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ আতাউল্লাহ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- কবির নাতনি খিলখিল কাজী, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক উপমন্ত্রী সাদেক সিদ্দিকী, উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কর্নেল (অব.) আশরাফ আল দীন, সদস্য সচিব শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে খিলখিল কাজী বলেন, “এই কবিতা আমাদের শির উঁচু করতে শিখিয়েছে। ঘুমন্ত বাঙালিকে এই ‘বিদ্রোহী’ কবিতার মাধ্যমে কবি নজরুল জাগিয়ে তুলেছিলেন। ‘ধূমকেতু’র কাঁধে চড়ে, ‘বিদ্রোহী’কে সঙ্গে নিয়ে তিনি বাঙালি সাহিত্যে এসেছিলেন। এটা অভাবনীয় যে, মাত্র একুশ বছর বয়সে তিনি এমন কবিতা রচনা করেছিলেন।”
স্বাধিকার আন্দোলনে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার অবদান সম্পর্কে খিলখিল কাজী বলেন, ‘কবি এক রাতে একটি কাঠপেন্সিল দিয়ে অসাধারণ এই কবিতা রচনা করেন। তখনকার যুব সমাজ এ কবিতার মাধ্যমে আন্দোলিত হয়েছিল, দলে দলে তরুণ স্বদেশি আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। সে সময় অত্যাচার, অবিচার ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সব বাঙালিকে এই ‘বিদ্রোহী’ কবিতা সাহস জুগিয়েছিল। ‘বিদ্রোহী ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যেভাবে সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছিল, আজও একইভাবে আমাদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে।’
‘বিদ্রোহী কবিতা সকল কালের জন্য এবং সকল সময়ের জন্য’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আজকে পৃথিবীতে যত ভেদাভেদ ও জাতিগত লড়াই হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে সংগ্রামে আমরা এখনও ‘বিদ্রোহী’কে কাঁধে নিয়ে চলতে চাই। বিদ্রোহীকে আমরা কোনোদিন ভুলতে পারব না। এটি কালজয়ী কবিতা। যতদিন বাঙালি আছে, সংগ্রাম আছে, অত্যাচার ও অত্যাচারিত মানুষ আছে, নিপীড়িত মানুষ আছে, ততদিন ‘বিদ্রোহী’ কবিতা আমাদের সঙ্গে থাকবে।”
সভাপতির বক্তব্যে আতাউল্লাহ খান বলেন, ‘এই কবিতা শুধু একটি কবিতা নয়, এটি ব্রিটিশদের কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এই কবিতা সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছিল। এই কবিতা একটি স্বাধীন বাংলাদেশ, একটি স্বাধীন জাতিসত্তা। তাই এই কবিতার প্রচার-প্রসার ও চর্চার জন্য ‘বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ উদযাপন কমিটি’ বছরব্যাপী দেশ ও বিদেশে অনুষ্ঠানমালা আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি প্রাঙ্গণে কবির রচিত ‘রণসংগীত’ বাজিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। এরপর ‘বিদ্রোহী’ কবিতা আবৃত্তি করেন আবৃত্তিকার রিয়াজুল হোসাইন টিটু। একদল শিশু-কিশোর আবৃত্তি করে ‘সৃষ্টিসুখের উল্লাসে’।
এর আগে ‘বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ উদযাপন কমিটি’, শিল্পবৃত্ত, জাতীয় জাগো নারী ফাউন্ডেশন, তর্কবাগীশ সাহিত্য পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এ ছাড়া ‘স্বপ্নের বাংলাদেশ’ কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে শতকণ্ঠে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা আবৃত্তি করে।