ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক : ট্রাক চালকের সঙ্কটে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও নজিরবিহীন জ্বালানি সঙ্কটে যুক্তরাজ্য। পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে যেকোনো সময় দেশজুড়ে সৃষ্টি হতে পারে অস্বাভাবিক অবস্থার। এমনকি সম্ভাব্য জনরোষ ঠেকাতে সেনাবাহিনী নামানোর কথা বিবেচনা করছে সরকার।
সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বৃটিশ গণমাধ্যমগুলোর একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জ্বালানি সংকটে দেশটির বড় শহরগুলোর অধিকাংশ রিফুয়েলিং স্টেশন বন্ধ হয়ে আছে। জ্বালানীর নতুন সা’প্লাই কবে আসবে সেটিও সঠিকভাবে জানা নেই কারোরই।
যু’ক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক এ জ্বালানী সঙ্কটের প্রেক্ষাপট বেশ পুরোনো। দীর্ঘদিন ধরেই ব্রিটেনে পণ্য বহনকারী ভা’রি ট্রাকচালকের সঙ্কট চলছে। ব্রেক্সিটের কারণে অর্থনৈতিক সঙ্কটের আশ’ঙ্কায় অনেক ট্রাকচালকই ব্রিটেন ছেড়েছেন। আর করো’নামহামা’রির কারণে চালক সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে। এই মুহূর্তে ব্রিটেনের সরবরাহ ব্যবস্থাকে আবারও আগের অবস্থায় নিতে প্রয়োজন আরও প্রায় এক লাখ ট্রাক চালকের। চালক সঙ্কটের কারণে সব ধরণের পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রেই সমস্যা হচ্ছে। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে জ্বালানি তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে।
ব্রিটেনজুড়ে গত কয়েকদিনে জ্বালানি তেল সঙ্কটের কারণে শত শত গাড়ি পেট্রোল স্টেশনগুলোর সামনে জ্বালানির জন্য অ’পেক্ষারত। নতুন জ্বালানির সরবরাহ না আসায় অনেক পেট্রোল স্টেশন এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। গাড়িতে যথেষ্ট তেল না থাকায় অনেকে তাদের কর্মস্থলে বা জরুরি কাজে পর্যন্ত যেতে পারছেন না বলেও খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে ব্রিটিশ সরকার বলছে, ব্রিটেনে জ্বালানি তেলের কোনো ঘাটতি নেই, পর্যাপ্ত তেল মজুদ আছে। তবে জ্বালানি তেলের সরবরাহ সময়মতো পেট্রোল স্টেশনে পৌঁছাতে সমস্যা হচ্ছে। সরকারের মন্ত্রীরা বার বার আবেদন জানাচ্ছেন, মানুষ যেন আতংকিত হয়ে গাড়ির ট্যাংক ভর্তি করে জ্বালানি কেনার জন্য ভিড় না করে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি।
ব্রিটেনের পেট্রোল রিটেইলার অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, গতকাল রোববার নাগাদ দেশের আট হাজার পেট্রোল স্টেশনের অর্ধেকই জ্বালানী শূণ্য হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ যেরকম আতংকিত হয়ে তাদের গাড়িতে জ্বালানি ভরার জন্য ছুটছে, সেটাকেই এখন অনেকে এই সংকটের জন্য দোষারোপ করছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কয়েকদিন সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বলছে, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জ্বালানি তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক করতে প্রয়োজনে সে’নাবাহিনী তলবের কথা ভাবছেন। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের একজন মুখপাত্র বলেছেন , এ কাজে সে’নাবাহিনী নামানোর সম্ভাবনা আম’রা এখনও নাকচ করে দিইনি। এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে পাঁচ হাজার ট্রাক চালককে ব্রিটেনে আসার ভিসা দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে এতে কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
শুধু পেট্রোলের সংকট নয়, ব্রিটেনের প্রায় সকল ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রেই সংকট তৈরি হয়েছে প্রয়োজনীয় ট্রাক চালকের অভাবে, বিশেষ করে জ্বালানী ও খাদ্য পরিবহণে। আসন্ন ক্রিসমাসকে সামনে রেখে যখন এসব পণ্যের চাহিদা অনেকগুণ বাড়বে তখন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশ’ঙ্কা করা হচ্ছে।