ইউকে শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
হেডলাইন

হেফাজতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে যা বললেন মির্জা ফখরুল

হেফাজতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে যা বললেন মির্জা ফখরুল

 

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :  গত ২৭ ও ২৮ মার্চ বিক্ষোভ ও হরতালের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের তাণ্ডবে সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত ও শিবির সম্পৃক্ত, বিএনপির মদদে এই তাণ্ডব চালানো হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে করা অভিযোগের জবাব দিয়েছে বিএনপি। দলটি বলেছে, হেফাজতের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

সারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।  নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপরে তারা আক্রমণ করেছে। অথচ সারাক্ষণ সরকারি নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রীরা, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ প্রচার চালাচ্ছে যে, তাণ্ডব, বিরোধীদলগুলোর হেফাজতী তাণ্ডব। হেফাজতের সঙ্গে আমাদের এই কর্মসূচিগুলোর কোনো সংশ্রব নেই।

বিএনপি দু’দিনের কর্মসূচির বিষয়ে মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) সরকারের মন্ত্রী-নেতাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি মহাসচিব এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।

এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন যে, প্রথম যে মিছিল হেফাজতের ছিল বায়তুল মোকাররমে। তারা একটা সাধারণভাবে প্রতিবাদ মিছিল করতে চেয়েছিল। সেই প্রতিবাদ মিছিলের উপর উত্তর দিক থেকে পুলিশ আক্রমণ করেছে। দক্ষিণের গেইট দিয়ে যখন পালাতে গেছে তখন আওয়ামী লীগের সশ্বস্ত্র সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করেছে এবং সেখানে বহু লোককে হতাহত করেছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার একটা প্রচারণা চালাচ্ছে যে, আমরা হেফাজতকে সমর্থন দিয়েছি, আমরা মৌলবাদকে সমর্থন দিয়েছি, আমরা সম্প্রদায়িক একটা সমস্যা তৈরি করার চেষ্টা করছি। পেছন দিক থেকে নাকি আমরা মদদ দিচ্ছি, উসকানি দিচ্ছি। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি নয়, উসকানি তো দিয়েছে সরকার। প্রথম থেকে উসকানি দিয়ে আজকে এই অবস্থার সৃষ্টি করেছে তারা।

তিনি আরো বলেন, ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের হাটাজারিতে। তারা যেখানে মিছিল করতে গিয়ে সেখান গুলি করেছে, সেই গুলিতে মারা গেছে। পরবর্তি শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপরে, সমাবেশের ওপরে তারা গুলি করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটা কলঙ্কজনক অধ্যায় সংগঠিত হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর যখন সমগ্র জাতি পালন করছে তখন এই অবৈধ সরকারের পুলিশ এবং আওয়ামী লীগে সন্ত্রাসী পেটুয়া বাহিনীর গুলিতে ও আক্রমণে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাক্ষণবাড়ীয়াতে সাধারণ মানুষের রক্ত ঝরেছে।

তিনি বলেন, এই হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ জানিয়েছি। সোমবার সারাদেশে মহানগরগুলো প্রতিবাদ সমাবেশ এবং আজকে জেলা সদরগুলোতে প্রতিবাদ সমাবেশ-মিছিল হয়েছে। দুইদিনে সারা দেশে আমাদের নেতা-কর্মীরা সমাবেশ করার চেষ্টা করেছে, বিভিন্ন জায়গায় সফল হয়েছে। বেশিরভাগ জায়গা পুলিশ ও আওয়ামী সশস্ত্র বাহিনী মারাত্মক অস্ত্রে সজ্জ্বিত হয়ে সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হয়েছে, আক্রমণ করেছে। গত কয়েকদিনে আমাদের হিসাব অনুযায়ী ১৫ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, আমাদের প্রতিবাদ ছিল স্বাধীনতা দিবসে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে।

ফখরুল বলেন , সরকার যেহেতু এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সেই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ আমরা করছি। আমাদের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে যে, যেকোনো দল বা সংগঠন তাদের মতপ্রকাশের জন্য তারা সমাবেশ করতে পারে, মিছিল করতে পারে। এখানে যে আঘাতটা এসেছে আমরা তার প্রতিবাদ করছি-এটা আমাদেরকে বুঝতে হবে।

প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বিক্ষোভে হতাহতের ঘটনায় গত শনিবার (২৭ মার্চ) বিক্ষোভ ও রোববার হরতাল ডাকে হেফাজতে ইসলাম। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক হামলা, ভাংচুর, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কয়েকটি থানায় হামলা, ভাংচুর, অস্ত্র লুটসহ বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।

হরতালের দিনও ঢাকাসহ সারা দেশে গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, সড়ক অবরোধ, হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা করলে তাদের ওপর হামলা, এক পর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা-অগ্নিসংযোগ করা হয়। এই দুই দিনে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গত রোববার পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১০ ও চট্টগ্রামে ৪ জন নিহত হন। এসব ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, হেফাজতের এসব তাণ্ডবের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সম্পৃক্ত।

চট্টগ্রাম, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, পটুয়াখালী, ভোলা, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, ঝালকাঠি, হবিগঞ্জ, বরগুনা, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা, গাজীপুরসহ সারা দেশে বিএনপির দুই দিনের কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হওয়া এবং অসংখ্যক নেতা-কর্মীর গ্রেপ্তারে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ