ইউকে সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
হেডলাইন

আল জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে জাতিসংঘের তদন্ত চায় বিএনপি

আল জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে জাতিসংঘের তদন্ত চায় বিএনপি

 

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক : কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়ে জাতিসংঘকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করতে জাতিসংঘকে ৭টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আহ্বান জানিয়েছে। বিএনপি এ আহ্বানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করছে। একইসঙ্গে জাতিসংঘকে আশু তদন্তের আহবান জানাচ্ছে।

বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। কাতার ভিত্তিক টেলিভিশন আল জাজিরায় বাংলাদেশ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে জাতিসংঘকে তদন্তের আহ্বান জানিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করে বিএনপির।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, মেন্ডেটবিহীন এই সরকার বহু আগেই জনগণ কর্তৃক ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যাত হয়েও গায়ের জোরে কেবলমাত্র রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে আছে। তারা গোটা দেশকে গুম-খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি লুণ্ঠন আর সীমাহীন দুর্নীতির এক অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। দেশে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকায় এই দুঃশাসনের চিত্র জনসম্মুখে আসছে না। এ প্রেক্ষিতেই আল জাজিরার ‌‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ প্রতিবেদন দেশে-বিদেশে সব মহলকে আরও উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত করে তুলেছে।

সেনাবাহিনী জাতীয় ঐক্যের গর্বিত প্রতীক উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রেখে তার স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখা দল-মত-নির্বিশেষে আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। গোপনীয়তা লঙ্ঘনে আড়িপাতার সিগনাল সরঞ্জামাদি আমদানির ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নাম ব্যবহারের সরকারি ব্যাখ্যা জাতিসংঘ কর্তৃক বাতিল হয়েছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের বৃহত্তম অংশীদার হিসেবে ওই দায়িত্বে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টতাই এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।

তিনি আরও বলেন, সরকারপ্রধানের পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কতিপয় কর্মকর্তা ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে তথ্য প্রমাণসহ নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে আল জাজিরার প্রতিবেদনে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারি সব প্রতিবাদ বিবৃতিতে প্রতিবেদনে উল্লেখিত অভিযোগগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব দেয়া হয়নি। বরং রাজনৈতিক বুলির আড়ালে অভিযোগগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি জাতিসংঘের মত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকেও অপরাধ আড়ালের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করার হীন প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিএনপিও সরকারের এসব বক্তব্যের গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যার দাবি জানিয়েছিল।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ইতোমধ্যে ৭টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা- হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, দ্য এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাগেইনস্ট টর্চার, দ্য এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং ইলিয়স জাস্টিস এক যৌথ বিবৃতিতে আল জাজিরার প্রতিবেদনে উল্লেখিত অভিযোগগুলো নিয়ে জাতিসংঘকে নিজের মত করে তদন্ত এবং শান্তিরক্ষা মিশনের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি ইউনিট ও ব্যক্তিদের মানবাধিকারের রেকর্ড নতুন করে যাচাই করার আহ্বান জানিয়েছে। নিজ দেশে সংগঠিত কোনো অনিয়ম আড়াল করার জন্য জাতিসংঘকে ব্যবহার না করতে আহ্বান করেছে সংস্থাগুলো। এছাড়া সামগ্রিক পর্যালোচনার আগ পর্যন্ত শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি বিষয়ক আলোচনা স্থগিত রাখা উচিৎ বলেও ৭টি সংস্থা জাতিসংঘকে জানিয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির এ নেতা।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে আসা অভিযোগগুলোর অনেক বিষয় দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ বলে দাবি করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ শান্তি মিশনের জন্য হাঙ্গেরি থেকে আড়িপাতার যন্ত্রপাতি আমদানির কথা ইতোমধ্যেই স্বীকার করেছে কিন্তু জাতিসংঘ পরিষ্কার ভাষায় তা নাকচ করে দিয়েছে। এখন জনমনে প্রশ্ন, অবৈধভাবে আমদানি করা এসব আড়িপাতা ও নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘনের সরঞ্জামাদি কাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে? জনশ্রুতি আছে, এসব সরঞ্জাম বিরোধী জনমতকে দমন করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ।

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ