ইউকে শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
হেডলাইন

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাবা ছিলেন শান্তি কমিটির সদস্য? প্রবাসীদের বাবা চাচারা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সদস্য…


◻️রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী◻️

সিলেটের রায়হান হত্যার বিচারের দাবীতে উত্তাল সিলেট। এই লোমহর্ষক এবং মর্মান্তিক হত্যার জন্য দায়ী পুলিশের এসএই আকবর। নামই তার আকবর। সে তো মোগল সম্রাট আকবর। আকবর হত্যা করেছে রায়হানকে, তো কি হয়েছে? সে হত্যা করতে পারেনা? হত্যা করতেই পারে। এটা নিয়ে সিলেটের মানুষেরা এত আন্দোলন কেন করছো? দেখিসনা তোদের বাবা প্রদীপ কক্সবাজারে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার পিছন দিকে মরিছের গুড়া ঢুকিয়ে দিয়েছে, মেজর সিনহাকে হত্যা করেছে, তাতে কি চট্রগামের বড় বড় নেতারা মুখ খুলেছে? ঢাকার দালাল সাংবাদিকেরা কি ফরিদুল মোস্তফার ব্যপারে প্রতিবাদ করেছে? তারা কি কোনো আন্দোলনের ডাক দিয়েছে? তোমরা সিলেটবাসী বেশী বাড়াবাড়ি করলে রান ছিড়ে হাতে ধরিয়ে দিব। এটিই হচ্ছে জননেত্রী আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ক্লিয়ার ম্যাসেজ। তিনি বলেছেন আমার বাবার মৃত্যুর পর আমি কোনো মামলা করতে পারিনি। মামলা করার অধিকারটুকুও ছিলনা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার ব্যাপারে কিছু লিখলে আপনার ছাত্রলীগের সাবেক নেতা লন্ডনে বসবাসরত শাহ ফারুক ভাই আমার সমালোচনা করে বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নাকি অসম্মান করে কথা বলেছি, লিখেছি। ফারুক ভাই পরিচ্ছন্ন একজন রাজনীতিবীদ। যদিও তিনি লন্ডনে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্টিত নন। কারন লন্ডনে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছে আপনার বাবার হত্যাকারী মীরজাফর খন্দকার মোশতাকের টিকেটে লন্ডনে আসা ব্যাক্তি। ফারুক ভাইর জন্য আমার কষ্ট হয়। কষ্ট হয় হরমুজ আলী ভাইর জন্য। কষ্ট হয় শামসুদ্দিন মাষ্টার সাহেবের জন্য, কষ্ট হয় ফয়জুল ইসলাম লস্কর ভাইর জন্য, কষ্ট হয় সাবেক ভিপি খসরুজ্জামান খসরু ভাইর জন্য। ওরা আওয়ামীলীগ না করে যদি বৃটেনে মেইনষ্ট্রীম রাজনীতি করতেন তাহলে ভালোই করতেন। অবশ্য এটি যার যার ব্যাক্তিগত বুঝা-পড়া। বুঝলে বুঝপাতা না বুঝলে তেজপাতা।
সে যাক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যেসব কথা বলেন, এই যে সম্প্রতি বলেছেন আপনি আপনার বাবার হত্যার পর মামলা করার অধিকারটুকু আপনি পাননি! এটি কেমন কথা? আপনার বাবার হত্যার বিচার তো আপনি করেছেন। কর্নেল ফারুক রহমানসহ অনেককেই তো ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিলেন। আপনি যখন এসব কথা বলেন তখন যারা রায়হানকে হত্যা করেছে, যারা মেজর সিনহাকে হত্যা করেছে তারা মনে করে, কে তাদের বিচার করবে? আপনার এসব কথায় হত্যাকারীরা খুশী হয়। অন্যরা মনে করে সেও যদি হত্যা করে তাহলে বিচার হবেনা। রায়হানের হত্যাকারী নাকি ভারতে পালিয়ে গেছে? পালানোর পথ যারা করে দিয়েছেন তারা আপনার সরকারেরই লোক। পালিয়ে চলে যাওয়ায় সে বেঁচে গেছে। বাঁচিয়ে দিয়েছে আপনাকেও। নতুবা প্রদীপের মত নাটক করতে হতো! প্রদীপ তো জামাই আদরে আছে। সে রিমান্ডে থাকাবস্থায় টেলিফোনে স্যার হারামির সাথে কথা বলে! এই স্যার হারামিটা কে- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? আপনি কি তাকে চিনেন? অবশ্যই আপনি চিনেন, আপনি না চিনলে আপনার মদখোর স্বররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার তো চিনার কথা। স্যার মদ খেয়ে খেয়ে কিন্তু স্বাররাষ্ট্রমন্ত্রনালয় খুবই ভালো চালিয়ে নিচ্ছেন!! বিএনপির সময়ে এক স্বররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তিনি একটি শিশুর মৃত্যুর পর বলেছিলেন আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছেন। আর আপনারই স্বাররাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম সাহারা খাতুন সাগর রুনীর হত্যার পর বলেছিলেন ২৪ ঘন্টার মধ্যে আসামাীদেরকে গ্রেফতার করা হবে। আর বর্তমান স্বাররাষ্ট্রমন্ত্রী মদখোর আসাদুজ্জামান কামাল স্যার ধর্ষনের পর বলেছেন ধর্ষন পৃথিবীর অনেক দেশেই হয়। তার মানে হচ্ছে ধর্ষন সিলেটের এমসি কলেজে যেটি হয়েছে সেটি হতেই পারে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে যেটি হয়েছে সেটিও বিশ্বের একটি অংশ।
আর আপনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রায়হান হত্যার পর বলেছেন আপনার বাবার হত্যার পর আপনি মামলা করার অধিকারটুকুও পাননি। তার মানে হচ্ছে রায়হান মেজর সিনহা এবং এমসি কলেজ ধর্ষন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ধর্ষন, তনু হত্যা যাই হোক-না কেন বিচার হবেনা। আমার মত সাংবাদিক যদি লিখে, তাহলে আপনার আওয়ামীলীগাররা আমার সমালোচনা করবে। আসলে দেশটাকে আপনারা পেয়েছেন মগের মল্লুক। গরীব মানুষেরা অনেকটা অসহায়। (আমার মত মানুষকে যখন সমাালোচনা করা শুরু করে)। তখন গরীব মানুষেরা আল্লাহর কাছে বিচার দেয়। আল্লাহ যে বিচার করেন না তা কিন্তু নয়। বিচার করেন। আপনার নেতা কর্মীদের পরিবারের দিকে তাকান দেখুন পারিবারিকভাবে ওরা কতটা অসুখী। আপনার আওয়ামী পরিবারের দিকেও তাকান কারো ছেলে দুর্ঘটনায় মারা যায়, কারো স্বামী মারা যায়, কারো বা ঘর সংসার ভেঙ্গে যায়, কারো বা ছেলে মেয়ে আত্মহত্যা করে বসে। এসবই আল্লার মাইর। আমরা কিন্তু এসব বুঝেও না বুঝার ভান করি।

শেষ কথা: রায়হান এবং মেজর সিনহার পরিবারকে বলতে চাই বিচার হবেনা। আপনারা অযথাই বিচার চেয়ে সময় নষ্ট করবেন না। যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বাবার বিচার করতে ৪০ বছর সময় লেগেছে সেখানে আপনারা তো দুড়া-সাপ কামড়াতে পারবেন কিন্তু কোনো বিষ নেই।
রায়হান হত্যার ৯দিন পর সেখানকার এমপি অর্থাৎ সিলেট এক আসনের এমপি আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন? মোমেন সাহেব রায়হানের পরিবারকে দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সাথে বিভিন্ন কথার এক ফাঁকে বলেছেন প্রবাসীরা যাতে বেশী মাথা না ঘামান। (খামোখা সিলেটি ভাষা) কোনো কারন ছাড়াই এই করোনার সময়ে হরতাল না করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। কিন্তু এই করোনার সময়ে একটি জীবন্ত ছেলেকে এমন নৃশংশভাবে পৃথিবীর কোথাও পুলিশ হেফাজতে পুলিশের লোক হত্যা করেছে আমার অন্তত জানা নেই। পররাষ্টমন্ত্রী মোমেন সাহেব রায়হানের বাসায় যাওয়ার পর রায়হান হত্যার বিচার শেষ হয়ে গেল। আন্দোলন থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলেছুর রহমান কামরান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর কয়েস লোদী, লেঃ কর্নেল অবঃ সৈয়দ আলী আহমদ, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সাহেবরা সরে গেলেন। সিলেটের আওয়ামীলীগের নেতারা এই রায়হান হত্যার আন্দোলনের পিঠে ছুরি মেরেছেন। আর পররাষ্টমন্ত্রী যে আশ্বাস দিয়েছেন সেটি আশ্বাসই থাকবে। বাস্তব হবেনা। সিলেটের আখালীয়াবাসীর মুরুব্বীয়ানরাও সরে গেলেন আন্দোলন থেকে?
আরেকটি কথা: মাননীয় পররাষ্টমন্ত্রী আপনি প্রবাসীদেরকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেক বাজে কথা বলেছেন। আপনাকে পরিস্কার ভাষায় বলে দিতে চাই রায়হানের বাসায় গিয়ে আপনি যে বলেছেন প্রবাসীদেরকে মাথা না ঘামানোর জন্য, কেন বলেন? কিসের জন্য বলেন?। আমরা অবশ্যই মাথা ঘামাবো। কারন মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের বাবা চাচারা লন্ডন থেকে মুক্তিযুদ্ধে টাকা পয়সা দিয়েছেন। আপনার বাবা কি করেছেন? আপনার বাবা তো ছিলেন শান্তি কমিটিতে। আপনি কি সে বইটি পড়েছেন? রনাঙ্গন ৭১ নামে যে বইটি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ইউনিট কমান্ড থেকে প্রকাশিত হয়েছে। না পড়লে পড়ে নিবেন প্লিজ। সেখানে আপনার বাবার নামটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে।
বি:দ্র:লেখা শেষ করতে যাবো এমনি সময় আমার এক বন্ধু আমাকে পাঠিয়েছেন সুকান্তর কবিতা। কবিতাটি হয়তো অনেকেই পড়েছেন “আমি একটি ছোট্র দেশালইয়ের কাঠি, এত নগন্য হয়তো চোখেও পড়েনা, তবু জেনো- মুখে আমার উসখোস করছে বারুদ-বুকে আমার জ্বলে উঠবার দুরন্ত উচ্ছাস…। আমাদের কি অসীম শক্তি, তা-তো অনুভব করছে বারংবার তবু কেন বুঝো না, আমরা বন্ধি থাকব না তোমাদের পকেটে পকেটে, আমরা বেরিয়ে পড়ব, আমরা ছড়িয়ে পড়ব শহরে গঞ্জে গ্রামে-দিগন্ত থেকে দিগন্তে। আমরা বারবার জ্বলি নিতান্ত অবহেলায়-তা তো তোমরা জানোই! কিন্তু তোমরা তো জানো না কবে আমরা জ্বলে উঠব সবাই- শেষ বারের মত।
সিলেটের মানুষকে অনুরোধ করবো আরেকটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে। কারন ওদের সাথে আমাদের অনেকদিন ধরেই বনিবনা হচ্ছেনা। আমি মাস পাঁচেক আগে বলেছিলাম সিলেটের স্বায়ত্তশাসন দিয়ে দিতে, সরকার কোনো কর্ণপাত করেনি। সরকার সেটি করবেও না। রায়হান হত্যার ঘটনায় অনেকেই সিলেটের নেতা বাবরুল হোসেন বাবুল সাহবেকে স্মরণ  করেছেন। বাবরুল হোসেন বাবুল সাহেব অনেক আগেই সিলেটের স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন কারনে সেটি সম্ভব হয়নি। এখন সময় এসেছে সিলেটবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চুড়ান্তু বিজয়ের লক্ষ্যে কাজ করা। হয় স্বায়ত্তশাসন, নতুবা স্বাধীনতা।

লেখক:

সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ
সাবেক সভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব
লন্ডন ২২/১০/২০২০ বৃহস্পতিবার
thestraightdialogue.co.uk

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

‘মুক্তমত’ বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব। ‘ইউকে বাংলা অনলাইন ডট কম’ সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে ‘মুক্তমত’ বিভাগে প্রকাশিত লেখার দায় ‘ইউকে বাংলা অনলাইন ডট কম’ এর নয়। - সম্পাদক

সর্বশেষ সংবাদ

ukbanglaonline.com