ইউকে বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
হেডলাইন

সিলেট গুলশান সেন্টারে গ্রেনেড হামলার ১৬ বছর আজ

সিলেট গুলশান সেন্টারে গ্রেনেড হামলার ১৬ বছর আজ

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক : ২০০৪ সালের ৭ আগস্ট শনিবার। সিলেটে একের পর এক বোমা ও গ্রেনেড হামলার ঘটনাগুলো নিয়ে প্রতিবেদন করতে ঢাকা থেকে আসা চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদক আরেফিন ফায়সাল ও ক্যামেরাপার্সনকে বিদায় জানাতে জল্লারপারে আয়েশা মঞ্জিলে অবস্থিত কার্যালয় থেকে রওয়ানা হবো। অমনি প্রচণ্ড শব্দ। তখন পরিস্থিতি এমনই ছিল যে, একটু জোরে কোন শব্দ শুনলেই মনে হতো, কোথাও বোমা বা গ্রেনেড বিস্ফোরিত হলো বুঝি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই নিশ্চিত হয়ে গেলাম, তালতলায় হোটেল গুলশান এলাকায় কিছু একটা ঘটে গেছে। তাই তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে গেলাম।
রাস্তা ফাঁকা। রিক্সা খুঁজে লাভ নেই। তাই শ্রীচরণ ভরসা। হঠাৎ দেখি, আমার পাশ দিয়ে দৌঁড়ে যাচ্ছেন একই উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে আসা এনটিভির প্রতিবেদক এস এম বাবু ও ক্যামেরাপার্সন। বললাম, সাবধানে যান। নিজের হাঁটার গতিও বাড়িয়ে দিলাম। অবশ্য সেখানে আরেফিন ফায়সালরা থাকায় ঘটনাস্থলে আমি পৌঁছার আগেই ঢাকায় খবর পৌঁছে যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম।
পৌঁছে দেখি, গুলশান সেন্টার ও হোটেল গুলশানের মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় দু’টি গাড়ি দাঁড়ানো। প্রচুর পুলিশ। তবে জামতলা-তালতলা রাস্তার উপরে মানুষ আর মানুষ। আরেফিন ফায়সাল ও ক্যামেরাপার্সনকে পেয়ে গেলাম নিচেই। জানালেন, খবর পাঠিয়ে দিয়েছেন। ফুটেজ নিয়ে যাচ্ছেন সঙ্গে করে। পরবর্তী পরিস্থিতি আমাকেই দেখতে হবে। আরো খবর পেলাম, পুলিশ এক প্রবাসীকে গ্রেফতার করেছে। তিনি অবস্থান করছিলেন হোটলে গুলশানে। গ্রেনেড বিস্ফোরণের পরপর নাকি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে কথা বলছিলেন। তাতে পুলিশ কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হয়ে বিস্ফোরণের জন্যে সন্দেহ করে বসেন তাকেই। পরে জানলাম, প্রবাসীর নাম এস এম নুুনু মিয়া, যিনি আওয়ামী লীগ নেতা এবং এখন বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তার উপর অকথ্য নির্যাতনও চালানো হয়। অনেকদিন পর মুক্তি পান।
সেদিন সন্ধ্যায় গুলশান সেন্টারে অন্যান্য সময়ের মতোই মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের একটি সভা বসেছিল। প্রধান আলোচ্যসূচি ছিল জাতীয় শোকদিবস পালন। সভাপতিত্ব করছিলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সিলেট সিটি করেপারেশনের মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান (সদ্য প্রয়াত)। সভায় প্রায় ৩৭ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
তবে কয়েকদিনের ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে মূলত জাতীয় শোকদিবসের কর্মসূচি চূড়ান্ত করেই রাত ৮টার দিকে অনেকটা তাড়াহুড়ো করে সভা শেষ করা হয়। মেয়রের তখন প্রয়াত এক নাগরিকের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সস্ত্রীক খাসদবির এলাকায় যাওয়ার কথা ছিল। গুলশান সেন্টার থেকে বের হয়ে তিনি অভ্যাসবশত পাশের দোকান থেকে একটি পান খান। এই ফাঁকে গাড়িচালক গাড়িটি নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। এক পর্যায়ে মেয়র তাতে উঠে বসেন। তার স্ত্রী আসমা কামরান আগে থেকেই গাড়িতে বসা ছিলেন। গাড়িটি প্রধান সড়কে উঠে তালতলা সেতু পার হতেই মিনিট দেড়েকের ব্যবধানে পেছনে শোনা যায় প্রচণ্ড শব্দ। সাথে সাথে মেয়র গাড়ি ঘুরিয়ে হোটেল গুলশানে ফিরে যান। ততক্ষণে সেখানে রক্তের স্রোত বয়ে যেতে শুরু করেছে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভা চলাকালে মেয়রের গাড়ির উত্তর পাশে আগে থেকে দাঁড়ানো একটি জিপে বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। মেয়রের গাড়ি ছিল মাঝখানে। দক্ষিণ পাশে ছিল আরেকটি জিপ। সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই গাড়িটি ছিল এস. এম নুনু মিয়ার। একারণেই তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।
খবর পেয়ে মিনিট দু’য়েকের মধ্যেই দমকল বাহিনীর লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে এসে আগুন নেভায়। এ বোমা হামলায় কমপক্ষে ৪০ জন আহত হন। এরমধ্যে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল ২৫ জনকে। গুরুতর আহত কয়েকজনের মধ্যে রাত ১টা ১০ মিনিটে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ ইব্রাহিম (গড়দুয়ারা, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম) মৃত্যুবরণ করেন। সিলেটে প্রায় ৩০ বছর ধরে বসবাস করছিলেন। এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। সাধারণ সম্পাদক (পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক) অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, প্রবীণ নেতা এনামুল হক ও অন্যতম নেতা অ্যাডভোকেট রাজ উদ্দিন, অ্যাডভোকেট মফুর আলী, অধ্যাপক জাকির হোসেন (বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক), ফয়জুল আনোয়ার আলাওর, আনোয়ার হোসেন রানা, এ টি এম হাসান জেবুল, জুবের খান, কবির আহমদ, অ্যাডভোকেট রাধিকা রঞ্জন চৌধুরী ও তপন মিত্র গুরুতর আহত হন।
দমকল বাহিনীর উপপরিচালক তাজ উদ্দিন আহমদ ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সর্বপ্রথম ১২ জন আহতকে নিয়ে যান। এরপর যে যেভাবে পারে আহতদেরকে চিকিৎসার জন্যে দ্রুত সেখানে নিয়ে যেতে থাকে। একপর্যায়ে প্রয়োজন দেখা দেয় রক্তের। এগিয়ে আসেন ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। সেদিন চিকিৎসকরাও চিকিৎসা সেবায় নিজেদের দায়িত্বাবোধের যে পরিচয় দেন তা অবশ্যই সিলেটবাসী মনে চিরদিন মনে রাখবেন।
অ্যাডভোকেট রাজউদ্দিন সেই ভয়ংকর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানান, ৫ আগস্ট সিলেটে বিভিন্ন সিনেমা হলে বোমা ও গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে বিকেলে কোর্ট পয়েন্টে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের জনসভা শেষ করে তারা গুলশান সেন্টারের সভায় যোগ দেন।
জুবের খান জানান, সভার শুরুতেই হোটেল গুলশানের মহাব্যবস্থাপক প্রতাপ পাল নেতৃবৃন্দকে সতর্ক করে দেন, তাদেরকে নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

আল আজাদ: সিনিয়র সাংবাদিক, প্রধান সম্পাদক সিলটিভি

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ

ukbanglaonline.com