
◻️তাইসির মাহমুদ, সম্পাদক – সাপ্তাহিক দেশ◻️
৫০ ফিট পানির নিচে ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে ১৩ ঘণ্টা পর ফল ব্যবসায়ী সুমন ব্যাপারীর সুস্থ-সবল দেহে ওঠে আসার ঘটনাটি অলৌকিক বলেই বিশ্বাস করতে চাই । কারণ আল্লাহর তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ না হলে এটা সম্ভব হওয়ার কথা নয়। তবে দৈনিক মানবজমিনের একটি প্রতিবেদন (শিরোনাম: সুমনের দ্বিতীয় জীবনের গল্প) পড়ে কিছু কনফিউশন সৃষ্টি হয়েছে। যেমন: রিপোর্টে বলা হয়েছে:
“৩০ জুন মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে কথা হয় সুমন ব্যাপারীর সাথে। তিনি জানান, “ওই সময়ে কিছু পানি আমার মুখে ঢুকে যায়। জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম । এর মধ্যেই আল্লাহ’র উসিলায় আস্তে আস্তে অন্য একটি জায়গায় চলে যাই । যেখানে তেমন পানি ছিলো না। হাঁটু পানি ছিল। সুমন জানান, তিনি দোয়া পড়েছেন । ইতিমধ্যে তার শরীরে যে পোশাক ছিল সেটা ভেসে গেছে । শুধুমাত্র গেঞ্জিটা ছিল । একপর্যায়ে গেঞ্জিটা খুলে কোমরে বেঁধে নেন তিনি । যাতে হাঁটু পর্যন্ত ঢাকা থাকে।”
রিপোর্টের এই অংশে কনফিউশন হচ্ছে, ৫০ ফিট পানির নিচে ডুবে থাকা লঞ্চের ভেতরে তিনি কীভাবে এমন একটি জায়গা খুঁজে পেলেন যেখানে হাঁটু পানি ছিলো?
আচ্ছা, ধরে নিলাম আল্লাহ তায়ালাই তাঁর ফেরেশতাদের দিয়ে একটি রুম তৈরি করে দিয়েছিলেন । যেখানে তাঁর কাছে মনে হয়েছে হাঁটু পানি। আল্লাহ চাইলে পারেননা, এমন কিছু নেই । সুমন ব্যাপারি যদি তাঁর প্রিয় বান্দা হয়ে থাকেন তাহলে তিনি যেভাবেই হোক তাকে রক্ষা করেছেন। কিন্তু রিপোর্টের নিচের অংশ পড়ে আমার কনফিউশন আরো বেড়ে গেলো।
“বেলা আড়াইটার দিকে (অর্থাৎ মাত্র দেড়ঘণ্টা পর) হাসপাতালের দোতলায় একটি টেস্ট করাতে যান সুমন বেপারী । টেস্ট করানোর পর আবারও কথা হয় তার সঙ্গে । এসময় তিনি নতুন একটা তথ্য যোগ করে জানান, “ডুবার সময় লঞ্চটি উল্টে যায়। তিনি তখন নিজেকে রক্ষা করতে লঞ্চ থেকে বের হতে চেষ্টা করছিলেন। এরই মধ্যেই মাথায় কিছু একটার আঘাত পান। তারপর অচেতন হয়ে যান । এরপর আর কিছু মনে নেই । তবে রাতে হুট করেই বুঝতে পারেন তিনি পানিতে ভাসছেন । পরে উদ্ধারকর্মীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।”
তাহলে প্রথমে যে কথাটি বলেছিলেন, তা ছিলো বানানো গল্প । তিনি লঞ্চে কোনো জায়গা পাননি যেখানে হাঁটু পানি ছিলো । কারণ তখন তিনি অচেতন ছিলেন। পানির উপরে ভেসে ওঠার আগ পর্যন্ত কিছুই জানতেন না । তবে রিপোর্টের পরবর্তী অংশ পড়ে একেবারে অবাক হয়ে গেলাম। সেখানে বলা হচ্ছে:
“বাংলাদেশ সিভিল ডিফেন্স এন্ড ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্ণেল জিল্লুর রহমান জানান, ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধারের সময় সুমন ব্যাপারীকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা উদ্ধার করেন । তিনি হয়তো লঞ্চের ইঞ্জিন রুমের ভেতর কোন এক যায়গায় ছিলেন, যেখানে অক্সিজেন ছিলো। ওই অক্সিজেনে তিনি দীর্ঘক্ষণ বেছে ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
আচ্ছা, ৫০ ফিট পানির নিচে লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পর সেখানে কোনো রুমে অক্সিজেন কীভাবে থাকতে পারে? এই বক্তব্যের সাইনটিফিক কোনো ব্যাখ্যা জানা থাকলে কেউ সহযোগিতা করতে পারেন।
সে যাক। আল্লাহ তায়ালা চাইলে মানুষকে পানির নিচেও বাঁচিয়ে রাখতে পারেন। মাছের পেটেও জীবিত রাখতে পারেন। নবী ইউনুস (আঃ)কে চল্লিশ দিন পর মাছ তার পেট থেকে উগড়ে ফেলেছিলা । যেখানে উগড়ে ফেলে সেখানে একটি লাউ গাছ জন্মেছিলো তাঁকে ছায়া দেয়ার জন্য। মাছের পেটে থাকার কারণে তিনি খুবই দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
এটা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত ঘটনা। আল্লাহ তায়ালার হুকুমেই মাছ তাকে গিলে খেয়েছিলো। আবার তাঁর হুকুমেই মাছ উগড়ে দিয়েছে । আল্লাহ তায়ালাই তাঁর নবীকে রক্ষা করেছেন । তো আল্লাহ যেখানে হেফাজতের মালিক তাহলে নবীর শরীর কেন দুর্বল হলো, কেন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন? এর উত্তর খুব সহজ: অসুস্থ হয়েছিলেন কারণ মাছে গিলে খাওয়ার পর তাঁর শরীরে অনেক ধকল গিয়েছিলো।
তাই প্রশ্ন জাগে, একজন নবী যখন মাছের পেটে থাকার পর শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তাহলে সুমন ব্যাপারীর মতো একজন মানুষ ১৩ ঘণ্টা পানির নিচে থাকার পর কীভাবে সুস্থ থাকতে পারলেন? কেন তার মধ্যে কোনো শারিরীক কিংবা মানসিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি? ১৩ ঘন্টা পানির নিচে থাকার পরও তিনি কীভাবে এতো স্বাভাবিক ও সুস্থ থাকতে পারলেন? তিনি যে অসুস্থ ছিলেন না তার প্রমাণ মানবজমিনের রিপোর্টেই উল্লেখ আছে । রিপোর্টের শেষ দিকে বলা হয়েছে:
“এ বিষয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রাশীদ উন নবী বলেন, সুমন ব্যাপারীকে প্রথম যখন হাসপাতলে নেয়া হয় তখন তার হালকা শ্বাসকষ্ট ছিলো । তবে, এখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। তাকে মেডিসিন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।”
তবে ঘটনাটি অলৌকিক নয়, এমন সিদ্ধান্তে এখনই উপনীত হতে চাইনা । যদি অলৌকিক হয়ে থাকে আর সমালোচনা করি, তাহলে সেটা ভুল হবে । আর অলৌকিক না হয়ে থাকলে তার দায় আমার নয়, সুমন ব্যাপারী বা যারা বলছেন তাদের ওপরই বর্তাবে।