ইউকে বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
হেডলাইন

সমুদ্রমন্থন মহাকাব্য-পর্ব তিন

সমুদ্রমন্থন মহাকাব্য-পর্ব তিন

     প্রথম সর্গ (২৮৪-৩৬৭)

                   রাজুব ভৌমিক

বীর রাহু, সে কহিল, অত্যুচ্চ বলিরাজ,

নাহি শুন ঐ দেবতা, তাদের ফাঁকা পণ,

বিষ্ণু ইন্দ্র ছলনায়, হারাবে যে পাতাল।

বলিরাজ ভেবে কহে, রাহু তুমি অভ্রান্ত,

তাই দিলাম দায়িত্ব তোমায় রেখো দেখে,

ঐ নিকৃষ্ট বিষ্ণু ইন্দ্র, তব দুই চক্ষুতে।

রাহু সে মহাবীর তা অসুরকুলে জানা,

জানে সে বিষ্ণুর ছল, হার কভু মানে না।

সিহিকার কোলে জন্মে, ছোট্ট রাহু জেষ্ঠতে,

নাতি রাহু দৈত্য-রাজ হিরন্যকশিপুর,

নীল মেঘের মতন, নীল তার শরীর,

অন্ধকার-রূপী রথে চড়ে এ মহাবীর।

আসিল সময় বুঝি, সমুদ্রমন্থনের,

রাহু চলে পিছু-পিছু, পাশে বলিরাজের,

একে একে দেবগন, এল সমুদ্রকূলে,

ইন্দ্র, ব্রক্ষ্মা, বিষ্ণু-দেব, শুক্রাচার্য ও বলি,

রাহু, অসুর সহিত, দেবের হাত খালি।

সময় যেন স্থির, ঐ মুহূর্ত সংসারের,

পাখি সব নাহি রব, বসে বৃক্ষের ডালে,

সর্বপ্রথম আসিল অসুর গুরু-দেব,

শুক্রাচার্য, অবহিত, চারিদিকে তাকায়,

দেবগনে ন বিশ্বাস, তারি বিষ্ণু শত্রুতা,

হিরণ্যকশিপু পুত্রী দিব্যার সে সন্তান,

পরম-পূজনীয় সে, অসুরের পরাণ।

বীর শুক্রাচার্য কত রক্ষিল অসুরের,

বলিরাজ শান্ত শিষ্য, এই শুক্রাচার্যের,

শুক্রাচার্য কহে বলি! বিশ্বাস দেব নহে,

সমুদ্রমন্থন ফল, অসুরকুলে নিবে।

বলিরাজ, মানসিক চাঁচল্যে কহে তবে,

গুরু-দেব, দৈত্যকুল, আমার প্রেম-লোক,

দিতে পারি মোর প্রাণ, অসুর-কূল রক্ষে,

দৈত্যকূলে অসুররা, আমার প্রিয় ভাই,

চরিত্র কল্মষ কিন্তু, অতি কদর্য নহে,

দেবগন সর্বক্ষণ, শুনহে গুরুদেব,

করে অন্যায়াচরণ, দানব কেন মোরা?

বিষ্ণু করে পক্ষপাত, দেবতার রক্ষায়,

দৈত্য মারে দিনেরাতে, মোর পরাণ যায়,

দৈত্য মোরা, তাই লোকে কদর্য নামে জানে,

দেবগন ক্ষনে ক্ষনে, কত পাপ করিল।

সৃষ্টির অঙ্কুর হতে, গুরুদেব! দেবতা

তথা ত্রিদেব সহিত লড়ছে দৈত্যকুল;

কেন গুরুদেব? দৈত্য অভিমুখে সৃষ্টির

এত নিস্পৃহতা কেন? জন্মানো অপরাধ?

দোষ কি করিল দৈত্য, সব সমান তার,

বিষ্ণুর গড়ন মোরা, যেমনি দেবতার ।

পরন্তু কেন হিংসাতে, দেবতা মজিয়া গো,

দৈতদের প্রতিক্ষণে, জীবন-নাশ হয়?

গুরুদেব, জানি মোরা অপকর্মা বংশের,

কিন্তু তাহা অসুরের স্বভাবত আচার,

করিল মোদের উনি সৃষ্টি এমন করে,

তাহলে কেনইবা এ অসুরেতে বিদ্বেষ?

গুরু-দেব, মাঝে মাঝে অসুর নিয়ে চিন্তা,

ঐ চিন্তা শুধু বহিল সহস্র অশ্রুধারা,

ত্রিলোকে নেই এমন কেউ যে করে প্রেম,

সবি করিল তাচ্ছল্য, এ কেমন দূর্ভাগ্য!

জন্মি মোরা অবজ্ঞায়, এ শান্তির ত্রিলোকে,

সবাই দেখিলে ক্ষণে, মারতে আসে ঝেঁকে।

ভাবি দৈত্য কারা, মোরা নাকি দেবতাগন,

দেবতা মারিল কত দৈত্য সে অবর্ণন।

করিলে প্রভু তপস্যা, দৈত্যকূলের কেউ,

বিধাতা না দেয় ধরা, সহস্র বছরেতে,

যদি দেব ডাকে সেই বিধাতারে সামান্য,

ধেই ধেই করে আসে, বিষ্ণু ও মহাদেব,

গুরুদেব শুক্রাচার্য উত্তরে ‘জানি জানি’

পক্ষপাতদুষ্ট বিষ্ণু, বৈষম্য রচয়িতা,

দৈত্যকুলে যত হিংসা, বিষ্ণু মূল কারণ।

ইন্দ্রদেব দূরে দেখে সমুদ্রকে মেলিয়া

দাঁড়িয়ে ফন্দি আঁকে সে ভাবিয়া নিরূপিত

কহে ওহে অগ্নিদেব, ‘ হতে পারি আমরা

এক পিতার সন্তান, পরন্তু অসুররা

নয় আমারি সমান!’ আমি সর্বোতকৃষ্ট!

আমি অদ্বিতীয়, পরা, ও সর্বোৎকৃষ্ট দফা!

অসুররা অপ্রকৃষ্ট, সংসারের আগাছা

দাসমনোভাবপূর্ণ! নিকৃষ্টতর ন্যূন!

অগ্নির চোখের জল বর্ষায় যেন নামে

‘ইন্দ্রদেব—ঐ অসুররা এবং দেবতারা

ঋষি কশ্যপের যে সন্তান সবাই জানে

অসুরারা ভ্রাতৃতুল্য, ভ্রাতা সর্বে সমান!

অহংকার! দেবরাজ! অহংকার! বিনাশ!’

ধ্বংস হবে দেবকুল! এই আত্মাভিমানে!’

অগ্নিদেব যথাসাধ্য ইন্দ্রকে তা বুঝায়।

অহংকারী ইন্দ্রদেব না করে উপলব্ধি

হৃদয়ঙ্গম করিল না অগ্নির প্রার্থনা।

চলবে…..

মালতী-অমিত্রাক্ষর ছন্দ: প্রতি ছত্রে ১৫ টি অক্ষর, প্রতি ছত্র বা চরণ আট এবং সাত মাত্রায়, এবং চরণগুলির অন্ত্যবর্নের মিল থাকেনা।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ