ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক: পুলিশের কারফিউ সত্ত্বেও লন্ডনে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। আজ শনিবার বেশকিছু গ্রুপের এমন বিক্ষোভের বিষয়ে আগে থেকেই বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল মেট্রোপলিটন পুলিশ। গত সপ্তাহে এমন বিক্ষোভে সহিংসতার কারণে বিধিনিষেধের অধীনে স্থানীয় সময় বিকাল ৫টার মধ্যে সব আয়োজন শেষ করতে বলা হয়েছিল। উগ্র ডানপন্থিদের সঙ্গে এর আগে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছিল। তার প্রেক্ষিতেই এই কারফিউ দেয়া হয়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান, বিবিসি ও স্কাই নিউজ।
এতে বলা হয়, পুলিশ তার কারফিউতে বলে, শনিবার বিকাল ৫টার মধ্যে অবশ্যই ‘ব্লাক লাইভস ম্যাটার’ বিক্ষোভ শেষ করতে হবে। তাদের আরো বলা হয়, তারা হাইড পার্ক থেকে হোয়াইট হল পর্যন্ত পরিকল্পিত রুটেই থাকতে পারবেন।
কারণ, পুলিশ আশঙ্কা করেছিল বর্ণবাদ বিরোধী এই বিক্ষোভে হামলা করতে পারে উগ্র ডানপন্থিরা। গত ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে পুলিশি নৃশংসতায় মারা যান জর্জ ফ্লয়েড নামে এক আফ্রিকান বংশোদ্ভূত আমেরিকান। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের বহু শহরে এবং বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে শনিবার লন্ডনে বিক্ষোভ আয়োজন করে ব্লাক লাইভস ম্যাটার। তাদেরকে হোয়াইট হলের বাইরে উত্তর দিকে পুলিশি ব্যারিকেডের বাইরে থাকতে বলা হয়। উগ্র ডানপন্থিদের বিক্ষোভকে হোয়াইট হলের দক্ষিণে অবস্থান করতে বলা হয়েছিল। পাবলিক অর্ডার অ্যাক্টের ১২ নম্বর ধারার অধীনে এই শর্ত দেয়া হয়। ব্লাক লাইভস ম্যাটারের আয়োজকরা সংঘর্ষের আশঙ্কায় শনিবারের বিক্ষোভ বাতিল করে। তা সত্ত্বেও মেট্রোপলিটন পুলিশ মনে করে, এতে যোগ দেবেন হাজার হাজার মানুষ। আগের দিন পার্লামেন্ট স্কয়ারে স্থাপিত মূর্তিগুলো, বিশেষ করে উইন্সটন চার্চিল, নেলসন ম্যান্ডেলা এবং মহাত্মা গান্ধীর মূর্তিগুলোকে উভয়পক্ষ সংঘর্ষের সময় টার্গেট হতে রক্ষার জন্য ব্যবহার করে। এসব মূর্তিকে আত্মরক্ষায় ব্যবহারের পক্ষে কথা বলেছেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। তিনি লোকজনকে রাজধানী থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এসব মূর্তি সহিংসতার ফ্লাশপয়েন্ট হয়ে উঠতে পারে বলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এদিকে সাদিক খানের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল। অভিযোগ করা হচ্ছে, তিনি রাজনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য এমন সমালোচনা করেছেন। তবে ব্লাক লাইভস ম্যাটারের আয়োজক ডেনিস রিচার্ডস বলেছেন, তিনি এবং অন্য শান্তিপ্রিয় বিক্ষোভকারীরা সহিংসতার আশঙ্কায় মধ্য লন্ডন থেকে দূরে থাকবেন।
অনলাইন বিবিসি বলেছে, উগ্র ডানপন্থিদের সঙ্গে সহিংসতার কারণে ব্লাক লাইভ ম্যাটার বিক্ষোভ একদিন এগিয়ে নিয়ে শনিবার আয়োজন করা হয়। কিন্তু আয়োজকরা সপ্তাহান্তে কোনো রকম বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভে যোগ না দিতে জনগণের কাছে আহ্বান জানিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা শনিবার পার্লামেন্ট স্কয়ারে উইন্সটন চার্চিলের মূর্তি এবং হোয়াইট হলে সিনোটাফ যুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভের চারপাশে সমবেত হন। দেশের বিভিন্ন গ্রুপ, উগ্র ডানপন্থিসহ ফুটবলের সমর্থকদের একটি গ্রুপ সেখানে সমবেত হয়। তাদের দাবি, তারা বৃটিশ ইতিহাসের প্রতীককে রক্ষা করতে লন্ডন গিয়েছেন। এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন পল গোল্ডিং। তিনি বৃটেন ফার্স্ট নামের উগ্র ডানপস্থি গ্রুপের নেতা।
তিনি বলেছেন, তারা বৃটেনের স্মৃতিস্তম্ভগুলোকে প্রহরা দিতে সেখানে গিয়েছেন। ওদিকে বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে উইন্সটন চার্চিলের মূর্তিকে চারদিক থেকে বেষ্টনী তৈরি করে বক্সের রূপ দেয়া হয়। সেখানে বিক্ষোভকারীরা জাতীয় সংগীত গাইতে থাকেন এবং ইংল্যান্ড বলে স্লোগান দেন। এ সময় সেখানে উত্তেজনা দেখা দেয়। উপস্থিত হয় বিপুল পরিমাণের পুলিশ। বিশাল একটি গ্রুপ ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে দেয়া ব্যারিকেডের দিকে এগিয়ে যায়। বিভিন্ন জিনিসপত্র ছোড়া হয় পুলিশের দিকে। এসব দৃশ্যকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টুইটারে অগ্রহণযোগ্য দস্যুতা বলে আখ্যায়িত করেছেন।