ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক : বৃটিশ মিডিয়ায় আবার আলোচনায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আলোচিত আইসিস বধু বলে পরিচিত শামীমা বেগম। এবার তাকে নিয়ে মুখ খুলেছে বৃটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, শামীমার নিজের অন্যায়ের কারণে তার বৃটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয়েছে। তার আইনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে বৃটেনের সাধারণ মানুষের দেয়া ট্যাক্সের ৩০ হাজার পাউন্ড খরচ করতে হয়েছে সরকারকে। শামীমা বেগমের বৃটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় গত বছর। তবে তিনি নিজে মনে করেন, তার নাগরিকত্ব পুনর্বহাল করা উচিত। বৃহস্পতিবার কোর্ট অব আপিলে এর কারণ হিসেবে আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি বলেছেন, তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ন্যায্য ও কার্যকর আপিল করতে পারেন নি। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের বহুল প্রচারিত ডেইলি মেইলের অনলাইন সংস্করণ।
এতে বলা হয়, বৃটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন স্যার জেমস ইদি কিউসি। তিনি আদালতে বলেছেন, শামীমা বেগম আপিলে পুরোপুরি অংশ নিতে না পারার কারণ, তিনি বৃটেন ছেড়ে গিয়ে আইএসে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে এরই মধ্যে দেশের আয়কর দাতাদের দেয়া অর্থের ১৪ হাজার ৫০০ পাউন্ড খরচ করিয়েছেন তিনি। এর সঙ্গে আদালতের সময় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টাফদের খরচ মিলে এই অংক আকাশচুম্বী।
উল্লেখ্য, শামীমা বেগমের বয়স এখন ২০ বছর। তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরো দু’বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে পূর্ব লন্ডনের বাসা থেকে সিরিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। তার সঙ্গে ছিলেন খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আব্বাস। তাদের বয়স যথাক্রমে তখন ছিল ১৬ ও ১৫ বছর। তারা সিরিয়া গিয়ে যোগ দেন আইএসে।
তিন বছরের বেশি সময় জঙ্গি এই গ্রুপের সঙ্গে ছিলেন তিনি। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে তাকে সিরিয়ার একটি আশ্রয়শিবিরে দেখা যায়। এ সময় তিনি ছিলেন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এর পরে ঘটনাপ্রবাহে এক পর্যায়ে তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ তার বৃটিশ নাগরিকত্ব ওই মাসেই বাতিল করেন।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেন শামীমা বেগম। তিনি আপিল করেন হাইকোর্ট এবং স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিলস কমিশনে (এসআইএসি)। এসআইএসি একটি বিশেষায়িত আদালত, যেখানে কোনো বৃটিশ নাগরিকের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার চ্যালেঞ্জ শুনানি হয়। ফেব্রুয়ারিতে এসআইএসি রায় দেয় যে, শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার ফলে তিনি রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েন নি এবং সরকারের এমন সিদ্ধান্ত আইনসম্মত। কারণ, তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। আদালত বলে তিনি সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় ছিলেন ‘এ সিটিজেন অব বাংলাদেশ বাই ডিসেন্ট’। এই ট্রাইব্যুনাল আরো দেখতে পায় যে, আপিলে কোনো অর্থপূর্ণ অবদান রাখতে পারছেন না শামীমা বেগম এবং তার প্রেক্ষিতে তার আবেদন ন্যায্য ও কার্যকর নয়। রায়ে বলা হয়, তার আপিল সফল হয় নি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়তাকে বৃটেনে ফিরতে দিতে অস্বীকৃতি জানানোর বিরুদ্ধেও চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন শামীমা বেগম। তার সেই আপিলও প্রত্যাখ্যাত হয়। বৃহস্পতিবার তার এ মামলার ‘রিমোট’ শুনানি শুরুর সময়ে টম হিকম্যান কিউসি বলেছেন, শামীমার আপিলের মূল ইস্যুটি ছিল যে, ন্যায্য ও কার্যকর উপায়ে চ্যালেঞ্জ জানানোর অনুপস্থিতি অন্যায়ভাবে তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয়েছে কিনা। ওদিকে স্যার জেমস যোগ করেন, শামীমা তার আইনজীবিদের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন। ফলে আইনি পরামর্শ তিনি পেয়েছেন। ফলে তার সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করা হয় নি।