ইউকে রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
হেডলাইন

সমুদ্রমন্থন মহাকাব্য: প্রথম সর্গ (২০৬-২৮৩)


সমুদ্রমন্থন মহাকাব্য
        প্রথম সর্গ (২০৬-২৮৩)
              ড. রাজুব ভৌমিক

সমুদ্রমন্থন! শুনে দেবতারা স্তম্ভিত,

ভয়ে ইন্দ্র বলে, ‘প্রভু করো হৃদয়ঙ্গম,

কেমনে সম্ভব কার্য সে সমুদ্রমন্থন,’

অমত্ত হও দেবতা, বলে পরমেশ্বর।

শান্তিস্থাপক হইবে, এ সমুদ্রমন্থন,

নাগরাজ বাসুকিতে কার্য রজ্জু সম্যক্,

মন্দর পর্বত কার্য, হবে মন্থনদন্ড,

পরিচালনায় স্বয়ং, রুপে আমি কিঙ্কর।

সাবধান! বলে প্রভু, দেবতার লাগিয়া,

বিষ উৎপন্ন মন্থনে, না করিবে সেবন,

ভয়বিহ্বল ব্যগ্রতা, নাহি কোন কারন

মহাদেব শিব মাত্র, করিবে বিষ পান।

এই মন্থনে দেখিবে আকর্ষনীয় বস্তু,

মোহিত তোমরা নাহি হবে, মোর আদেশ,

ক্রুদ্ধতার নিয়ন্ত্রন, প্রদর্শন করিবে,

যদি হয় উপদ্রব, মন্থনে অঙ্গীভূত।

মূর্খ ইন্দ্রের মস্তক করিলো ঝন ঝন,

প্রভুর কেমন খেল, ভাবে তাই আপন,

অন্য দেবতারা করে ফিস ফিস সেথায়,

ব্রক্ষ্মদেব, মহাদেব, ইন্দ্র মমত্ত মনে,

চেষ্টা বুঝিবার, কার্য তা সমুদ্রমন্থনে।

অপরত্র দেবগন, চক্ষুতে নাহি সহে,

পরমেশ্বরের শুক্ল স্বরূপ অত্যুজ্বলে;

দিব্য তার অঙ্গজ্যোতি, দেবতা দিকহারা,

করিয়া স্তব দেবতা, প্রসন্ন করে প্রভু।

সমুদ্রমন্থন কার্য উপদেশের শেষে,

পরমেশ্বর বিদায় নেয় ইন্দ্রের কাছে,

সর্বদেবতা মিলিয়া করজোড়ে প্রণাম,

আশির্বাদ দিয়ে প্রভু হইলো অন্তর্ধান।

সর্ব দেবতা এখন, চাহিয়া ইন্দ্রপানে,

অপেক্ষায় আদেশের, ঐ সমুদ্রমন্থনে।

ইন্দ্র কহে দেবতারে, অনুত্তেজিত সবে,

অভিমুখ হও সর্বে, অসুর রাজ্য লক্ষে;

সূর্য, বরুন, পবন, অগ্নি বাক্রূদ্ধে চাহে,

অসুরের রাজা বলি মহারাজ সাক্ষাতে।

মহারাজ বলি দেখে দেবতার বিধেয়,

হাসিতে হুংকারে যায়, বলে মূর্খ দেবতা,

সূর্য দেবতাকে কহে, গেল কোথায় তেজ

আজি এ চরণতলে, দম্ভের প্রদায়ক।

বজ্রদেব ইন্দ্র! তুমি নিকৃষ্টের নিকৃষ্ট,

পর নারীতে করিয়া লোভ, ধিক্কার তবে;

দেবতা! কিন্তু তুই তো অসুরাধম ইন্দ্র,

বল কি চাস! দেবতা কেন আমার রাজ্যে?

ইন্দ্র ফুটানো জলের মত, ফুটতে থাকে,

অগ্নি বলে দেবরাজ, হে অচঁচল প্রভু,

চিন্তা করুন অভীষ্ট ফলে, নাহি অসুরে,

অভিনিবেশ নিকায়, ঐ সমুদ্রমন্থনে।

উষ্মান্বিত ইন্দ্র কহে, ‘হতচেতন বলি!

নাড়াবুনে অসুরাজ! প্রস্তুত হও মূঢ়,

যুদ্ধ হবে এতিক্ষণে’, ধরিয়া ইন্দ্রবান;

মহারাজ বলি কহে, ‘অসুর ঊর্জস্বল!

ত্রিলোক জয়ী অসুর, মূর্খ দেবতাগন,

বিনে যুদ্ধ কহ তবে, ভিক্ষাং দেহি হে প্রভু’।

ইন্দ্র ক্রোধান্মত্ত চোখে,  সর্ব দেবতা দেখে,

বিনাশ হবে এবার, কহে অগ্নি বরুনকে,

নগণ্য দেবতা মোরা, অনর্থক হইবে;

হে স্বর্গাদিপতি প্রভু, অগ্নি করে প্রার্থনা,

শান্ত হও, পুন:চিন্তা কর, ত্রিলোকহিতে,

পরমেশ্বরের কথা ভাব তার আদেশ,

সমুদ্রমন্থন ভবে হওয়া অবশ্যই,

সন্ধির বানী শোনাও, এটাই হিতকর।

অনুত্তেজিত হইল ইন্দ্র, অগ্নি আর্জিতে,

ধম্র্য তুমি অগ্নি, স্বত্ব  তব যাথাথ্র্য চিন্তা।

ইন্দ্র কহিলেন ‘শুন উত্তুঙ্গ বলিরাজ!

প্রকাশ্য প্রজ্ঞপ্তি তবে, সন্ধির অবধান,

পরমেশ্বেরর বাঞ্ছা, তা সমুদ্রমন্থন,

দেবগন অসুরের মিলিত কর্মফল।’

বলিরাজ উপাহৃত, সিংহাসনে বসিয়া,

শুনে ইন্দ্রের প্রস্তাব, অভিনিবেশ দিয়া;

‘রাজী আমি দেবরাজ, বলিরাজ কহিল,

কিন্তু সমুদ্রমন্থন থেকে উত্থিত ফল,

হবে কি সোসর ভাগ? প্রতিজ্ঞা  চাই তবে,

দেবতায় নাহি আস্থা, ছলনায় মহান,

অসুরগন অনঘ, এই চিন্তায় মরি।

হবে হবে সুনিশ্চিত! সোসর ভাগ বলি!

ইন্দ্র দেয় তার বাক্য, সচ্চরিত্র প্রকাশে,

বলি করে বিবেচনা, ইন্দ্র নষ্টামিপূর্ণ,

প্রত্যয় না দেবতারে, মনন করে বলি।

চলবে……

বি. দ্র: মালতী-অমিত্রাক্ষর ছন্দ: প্রতি ছত্রে ১৫ টি অক্ষর, প্রতি ছত্র বা চরণ আট এবং সাত মাত্রায়, এবং চরণগুলির অন্ত্যবর্নের মিল থাকেনা।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ

ukbanglaonline.com