
◽️তাইসির মাহমুদ◽️
হে আল্লাহ, গণকবর থেকে আমাদের রক্ষা করো
নিউ ইয়র্কে করোনা পরিস্থিতি ভয়ানক রূপ নিয়েছে । আজ শুক্রবার একদিনেই মারা গেছেন দুই হাজারের বেশি। চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ। আকাশে বাতাসে যেন লাশের গন্ধ। লাশ দাফনে হিমশিম খাচ্ছে ফিউনারেল সার্ভিসগুলো। যেসব মানুষের নিকটাত্মীয় নেই, পরিবার পরিজন নেই তাদেরকে দাফন করা হচ্ছে গণকবরে। কাঠের তৈরি কফিনে পুরে শতশত লাশ এভাবেই সারিবদ্ধভাবে দাফন করা হচ্ছে। কী ভয়ংকর দৃশ্য। দেখলে বুকটি ধক করে ওঠে। এমন দৃশ্য দেখবো কোনোদিন কল্পনাও করতে পারিনি। বড়ই বেদনাদায়ক দৃশ্য। চোখের জল ফেলা ছাড়া আর করার কিছু নেই। আজ আমরা কত অসহায়।
নিজে ভালো থাকার জন্য, পরিবারকে ভালো রাখার জন্য আমরা আজ দেশ থেকে দেশান্তরে। কেউবা টেমসের পারে, কেউবা আটলান্টিকের ওপারে। সারাটি জীবন কেটেছে অর্থের পেছনে। বাড়ি গাড়ির পেছনে ছুটে চলেছি হন্যে হয়ে। দিন নেই, রাত নেই। শুধুই কাজ আর কাজ। পাউন্ড চাই, ডলার চাই। শুধু চাই, চাই। আরো চাই। কিন্তু মৃত্যূকালে কেউ পাশে নেই। লাশ দাফনের মানুষ নেই। কবরের পয়সা নেই। আমরা আজ বেওয়ারিশ। আমাকে দাফন হচ্ছে গণকবরে। এই তো আমাদের জীবন। কী দুর্ভাগা আমরা।
লন্ডনে এখনও এমন পরিস্থিতি হয়নি। গণকবরে কাউকে দাফন করতে হয়নি। কিন্তু পরিস্থিতি দিনদিন খারাপ হচ্ছে। মৃত্যুর হার বাড়ছে বেসামাল গতিতে। আজ একদিনে মারা গেলেন ৯৮০ জন। কী ভয়াবহতার দিকে এগুচ্ছি আমরা। কী হবে জানি না। মৃত্যুর পর আমাদের স্বাভাবিক দাফন-কাফন ভাগ্যে আছে কিনা জানি না।
আসুন, আমরা কবরের খরচটা প্রস্তুত রাখি। কখন কার ডাক পড়ে জানি না। মৃত্যুর পর যেন ধার-দেনা করে আমাদের কবর না হয়। অর্থের অভাবে যেন কাউকে গণকবরে শায়িত হতে না হয়। পরিবার পরিজনহীন মানুষদের পাশে যেন আমরা দাঁড়াতে পারি।
গার্ডেন্স অব পিস-এ একটি কবরের দাম ৩,১০০ পাউন্ড। ফিউনারেল সার্ভিসের খরচ আরো ৮০০ পাউন্ড। সুতরাং নগদ প্রস্তুত রাখতে হবে ৩,৯০০ পাউন্ড (প্রায় ৪ লাখ টাকা)। তবে সাউথ লন্ডনে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল মালিকানাধীন ইটারনেল গার্ডেন গোরস্থানে লাশ দাফনের খরচ অনেক কম। সবমিলিয়ে ১,৭৩৩ পাউন্ড।
জীবনের এক সেকেণ্ডেরও ভরসা নেই। আমরা এখন বুঝতে পারছি প্রতিটি সেকেণ্ডে সেকেন্ডে। আমাদের কারো মৃত্যুর পর যেন দাফনের জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে না হয়। মারা গেলে লাশটি যেন গোসল দেয়া হয়। সাদা কাপড় পরিয়ে, সুগন্ধি মাখিয়ে জানাজা হয়। এরপর সম্মানের সাথে দাফন করা হয়। এটিই এখন আমাদের শেষ চাওয়া। আমিন।
ছবি: নিউ ইয়র্কে একটি গণকবরে শুক্রবারে লাশ দাফনের দৃশ্য। সূত্র: বিবিসি
তাইসির মাহমুদ
সম্পাদক, সাপ্তাহিক দেশ
লন্ডন, যুক্তরাজ্য
শনিবার, ১১ এপ্রিল ২০২০