ইউকে সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
হেডলাইন

অচেনা নগরীর রূপ নিয়েছে লন্ডন

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক: বিশ্বের সবকিছু পাল্টে দিয়েছে চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এরইমধ্যে পাল্টে গেছে ব্যস্ততম নগরী লন্ডনও। গত ১৫ বছরের লন্ডন আর এখনকার লন্ডনের মধ্যে আকাশপাতাল ব্যবধান।

ব্রিটেন ইউরোপে বড় বড় সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু এত আতঙ্কিত, ভীতস্বতন্ত্র হয়নি কেউ। সবচিত্র পাল্টে দিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। ইংল্যান্ডের সভ্য জাতি নিজেদের আড়াল করে রাখছে। কেউ স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে আছে, কেউবা আইসোলেশনে।

যারা লন্ডন বেড়াতে গেছেন, অন্তর্জালে শহরটিকে দেখলে চমকে যাবেন। শুধু লন্ডন কেন, ইংল্যান্ডের বিভিন্ন শহরের অবস্থা এখন যেমন, শিউরে উঠতেও পারেন যে কেউ। রাতের লন্ডন যেখানে জমকালো আলোকচ্ছটায় রঙিন থাকতো, সেখানে এখন ভয়ঙ্কর ভুতুড়েপরিবেশ। আর দিনের বেলা যেন কারফিউ লেগে আছে। যারা থাকেন দেশটিতে তাদের অবস্থা শোচনীয়।

পুরো অচেনা এক নগরীর রূপ নিয়েছে লন্ডন নগরী। চারদিকে খাঁ খাঁ! রাজপথ, হোটেল, রেস্তোরাঁ সব শূন্য। মনে হতে পারে উনিশ শতকেফিরেছে ইউরোপের দেশটি। প্রায় নিস্তব্ধ চারদিক। হ্ঠাৎ চোখে পড়ে কোনো মানুষের। গাড়িঘোড়া চলছে দুএকটা।

রাতের লন্ডন শিউরে ওঠার মতো। যে শহরে রাত আসতো ভোরে, সেখানে নেই কোনো উৎসব, নেই পার্টি, মানুষের সমাগম। থিয়েটারজনশূন্য, পাবগুলো খালি। কোনো রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেও মেরুদণ্ড বয়ে নেমে আসবে শীতল পরশ। ভয়ঙ্কর পরিবেশের পেছনে একটিমাত্র কারণকরোনাভাইরাস।

করোনাভাইরাসকে মহামারি ঘোষণার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তার দেশের জনসাধারণকে ঘরের ভেতর অবস্থান করারআহ্বান জানিয়েছেন। আগামী ১২ সপ্তাহ সামাজিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দিয়েছেন। পেশাজীবীদের বলেছেন ঘরে বসে কাজকরতে। ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে বলেছেন অত্যাবশ্যকীয় না হলে।

লন্ডনজুড়ে এমন পরিস্থিতিকেড্রাকোনিয়ানবা কঠোর বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। আরও বলেছেন, ‘জীবন রক্ষার জন্য পদক্ষেপনেয়া হয়েছে।

মানুষে মানুষে উপচেপড়া ইংল্যাণ্ডের রাজপথ আজ জনশূন্য। রাতে লন্ডনের চায়না টাউনের রাস্তা দেখে গাঁ শিউরে ওঠে। এখানেই অল্পকদিন আগে মানুষের গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগতো। এখন সেখানে বড়জোর দুএকজনের দেখা মেলে। ওয়েস্ট এন্ডের পাব, শহরের ট্রেনস্টেশন, রাস্তায় বাস স্টেশনগুলো একেবারে ফাঁকা।

সারা পৃথিবী থেকে গিয়ে বিমানগুলো জটলা পাঁকাতো যে হিথ্রো বিমানবন্দরে, যেখানে প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে একটি বিমান ওঠানামা করে, সেটিও নিস্তব্ধ। লন্ডন শহরের ২৭০টি পাতাল ট্রেনে স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন মিলিয়ন যাত্রী, অথচ এখন সেগুলোতেদিনের বেলাই ভুতুড়ে পরিবেশ।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে হিমশিম খাওয়া বরিস সরকার তার দেশে আগামী ১২ সপ্তাহের জন্য সব ধরনের আয়োজন খারিজকরে দিয়েছে। বাদ পড়েছে গ্রান্ড ন্যাশনাল প্রিমিয়ারশিপ রাগবি। স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে অনিদির্ষ্টকালের জন্য। মসজিদগুলো সবআপাতত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে দেশটির গণমাধ্যম প্রথম থেকেই সচেতনতার সঙ্গে কাজ করছে।

সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত ইউকেতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন হাজার ৬৮৯ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ১২৮ জন। পর্যন্ত তিনজন বৃটিশ বাংলাদেশি মারা গেছেন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। মৃতদের সবার পরিবারের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেছেন বরিসজনসন। তিনি বলেছেন, ‘সবাইকে সর্তক থাকবে, হয়তোবা আমরা আমাদের অনেক স্বজনকে হারাতে পারি।

টাওয়ার হ্যামলেটসের সর্বাধিক বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা হলো হোয়াইটচ্যাপেল। এখানে আছে দুটি আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন। বিস্তৃতকাঁচাবাজার, ৫টি হাইস্ট্রিট ব্যাংক, নানা ধরনের বাংলাদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ইস্ট লন্ডন মসজিদ অ্যান্ড লন্ডন মুসলিম সেন্টার, আলতাবআলী পার্ক, শহীদ মিনার। যেখানে সারাদিন বাংলাদেশিদের আনাগোনা লেগেই থাকতো, সেখানেও সুনসান নীরবতা। বিশেষ প্রয়োজনছাড়া রাস্তায় বের হচ্ছে না কেউ।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রাণচঞ্চল মানুষগুলোর হাসিআনন্দ কেড়ে নিয়েছে। সবার মধ্যে চাপা আতঙ্ক। একজন আরেকজনের সঙ্গেদেখা হলে এখন আর আগের মতো জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করছেন না। কনুইর সঙ্গে কনুই মিলিয়ে হ্যান্ডশেক থেকে দূরে থাকার চেষ্টাকরছেন। স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতার পাশাপাশি এই ভয়াবহ বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে সবাই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছেন। ভবিষ্যতখাবার সঙ্কট মোকাবিলায় নিজেদের খাবার মজুত করতে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন মার্কেটে। সারা ব্রিটেনের সুপার স্টোরগুলোতেওইতোমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে পণ্য সংকট।

এদিকে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে শুক্রবার থেকে ব্রিটেনের সব স্কুল পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকার ঘোষণা দেনদেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। স্কুল বন্ধের পাশাপাশি আগামী মে জুন মাসে অনুষ্ঠিতব্য নির্ধারিত পরীক্ষাগুলোও স্থগিত বলেঘোষণা দিয়েছেন তিনি। বুধবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার সময়ই এই দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখাহয়েছে ২০ হাজার সেনাসদস্যকে।

লন্ডনের ৪০টি পাতালরেল স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি রাতে আন্ডারগ্রাউন্ড বন্ধ থাকবে। সুপার স্টোরগুলোও ২৪ ঘণ্টারপরিবর্তে রাত ১০টা পর্যন্ত চালু রাখা হয়েছে। পাবলিক বাসট্রেন চালু থাকলেও তা সীমিত হয়ে আসবে। শুধুমাত্র ডাক্তার নার্স বা সেবাপ্রদানকারীদের জন্য এই গণপরিবহন চালু থাকবে।

খুব জরুরি না হলে নগরবাসীকে গণপরিবহন ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন লন্ডনের মেয়র। এছাড়া অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা বন্ধকরতে উপদেশ দেয়া হয়েছে। বড় বড় মসজিদ, গির্জাও বন্ধ করা হচ্ছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ