ইউকে শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫
হেডলাইন

আমারও একটা সেকেন্ড হোম থাকতো বিদেশে

আমারও একটা সেকেন্ড হোম থাকতো বিদেশে

আমারও একটা সেকেন্ড হোম থাকতো বিদেশেইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক : আমাদের অনেকের মনেই হয়তো সুপ্ত বাসনা কাজ করে, ইসস যদি অমুকের মতো আমারও একটা সেকেন্ড হোম থাকতো বিদেশে, তারা আজ আশ্বস্ত হতে পারেন, জীবনে সেকেন্ড হোম, থার্ড হোম কোন উপকারে আসবেনা। অনেকেই প্রবাসীদের দেখেন আর ভাবেন, আহা তারা প্রবাসে কত আরামে আছে, আমরা দেশে থেকে থেকে কি পাচ্ছি? সব ভালো তো বিদেশেই! সব টাকা তো বিদেশেই উড়ে! সব আরাম আয়েশ, উন্নত জীবন তো বিদেশই কেবল দিতে পারে! দেশে কেবল অস্থিরতা, অবহেলা, দুর্নীতি, সমস্যা। আহা যদি প্রবাসী হতাম! কিন্তু আজ দেখুন, নিজেকে কিছুটা হলেও ভার মুক্ত লাগছে, অথচ প্রতিটি প্রবাসী দেখুন কতোটা শঙ্কায় দিন পার করছে!

অন্যদিকে, যারা প্রবাসে থাকেন (যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশে রেমিটেন্স পাঠান, তারা এই দলে অন্তর্ভুক্ত নন, যারা দেশের সব সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে সাম্রাজ্য তৈরি করে ভাবেন বাংলাদেশ কোন দেশই না, তাদের কথা বলছি!) তাদের মুখে বেশিরভাগ সময় একধরনের নিশ্চিত জীবনের গল্প শুনতে পাই! অনেকেই দেশ ও বিদেশের মাঝে তফাতের গল্প করতে গিয়ে শুরুতেই বলে বসেন, বাংলাদেশ শেষ! দেখুন, এইসব দেশ! কি উন্নত জীবন! আমিতো বাংলাদেশ যাওয়ার সময় পানি, লবণ, মশলা সব সাথে নিয়ে যাই, বাংলাদেশের পণ্য বিশ্বাস করতে পারিনা। এখন কি হচ্ছে? পারলে উনারা আগে বাংলাদেশে যেতে পারলে বাঁচতেন! অনেক প্রবাসী ফিরছেন বাংলাদেশে কেবল করোনা নিরাপদ স্থান ভেবে! আদৌ নিরাপদ কিনা, সেটা সময়ই বলে দেবে যদিও!

এখানে ইংল্যান্ডে করোনার ভয়ে সবাই সব সুপারমার্কেট খালি করে ফেলছে, বাংলাদেশেও মানুষ তাই করছে হয়তো! কিন্তু একটা সূক্ষ্ম তফাৎ আছে! বাংলাদেশে হয়তো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে চাহিদা বেশি হওয়াতে, অন্যদিকে এখানে কমিয়ে দেয়া হচ্ছে যেন সবাই কিনতে সক্ষম হউন। এখানেই একটা মানবিক ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির তফাৎ আমি দেখতে পেলাম…।

সরকার এর ভূমিকা প্রায় একইরকম দুই দেশে! এখানেও সরকারের সমালোচনা চলছে কেন বিদ্যালয়গুলো বন্ধ করছেনা, বাংলাদেশেও শুনতে হচ্ছে! এখানেও সাধারণ জনগণ ভাবছে, সরকার যতটা গুরুত্ব দেয়া দরকার করোনা বিষয়ে, আদতে ততটা দিচ্ছেনা। আমার যেটা মনে হয়, ব্রিটিশ বা আমেরিকান সরকার অবশ্যই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, তবে স্বাস্থ্যগত বিষয়ের চেয়ে করোনাকে ঘিরে পশ্চিমা রাজনীতির দিকে তাদের মনোযোগ বেশি। সেটা স্পষ্ট বুঝা যায় যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা দেন ইউরোপের দেশগুলোর ফ্লাইটগুলোর দিকে, ইউকের প্রতি উদার থেকে! যদিও চীনারা এই রাজনীতি বেশিদূর আগাতে দিবে বলে মনে হচ্ছেনা! কারণ চীনারা যেভাবে সামলে উঠেছে পুরো সময়টি, পশ্চিমারা সেটা পারবে বলে মনে করেনা এখানকার সাধারণ জনগণ। ইউকের এনএইচএস (National Health Service) এতোটা সামলে নেবার শক্তি ও সামর্থ্য কোনটাই রাখে বলে মনে হয়না।

সবশেষে বলবো, যারা আমাকে অনবরত বলছিলেন, করোনা নিয়ে লিখতে অথবা ইংল্যান্ডের পরিস্থিতি জানাতে, তাদের বলছি, যে যেখানেই আছেন, ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন! আমরা আসলে কেউ কোথাও নিরাপদ নই, তাই আমাদের কোথাও কোন কিছু নিয়ে অহংকার করার কিছু নেই। বিভিন্ন দেশের স্বয়ং রাষ্ট্র প্রধান, রাষ্ট্র প্রধানের পত্নী, মন্ত্রীসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ মানুষজনের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার খবর আমরা পড়ছি। এই থেকে একটাই শিক্ষণীয় তা হল: আমরা নিরাপদ নই এই বিশ্বে! পৃথিবীতে আমাদের এই ছোট্ট জীবনের চলার পথে অন্যকে খামাখা হিংসা না করে, নিজেকে খামাখা বড় না ভেবে,বরং অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার মাঝেই জীবনের স্বার্থকতা, আর কিছুতেই জীবনের আসলে তেমন স্বার্থকতা খুঁজে পাওয়া যাবেনা! সবাই এক বিশ্বে এক নীতিতে পথ চলুক, এই শুভকামনা রইলো। করোনা মুক্ত পৃথিবী দ্রুত আমাদের মাঝে ফিরে আসুক, এইটুকুই চাওয়া!

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ