
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক : যেকোন একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের স্তরবিন্যাস থাকে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রধান ব্যক্তি নিঃসন্দেহে দলের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সাল থেকে তিনি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং দলের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব তাঁর হাতে। শেখ হাসিনার হাত ধরেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেছিল। তাঁর হাত ধরেই আওয়ামী লীগ গত তিন মেয়াদে টানা ক্ষমতায় আছে। শেখ হাসিনা নিঃসন্দেহে আওয়ামী লীগের শেষ কথা এবং তিনি আওয়ামী লীগের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। কিন্তু দল পরিচালনা করতে গেলে দলে আরও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ লাগে এবং সবকিছু একজনের পক্ষে দেখা সম্ভব না। যদিও সেই অসাধ্য সাধন করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি একাই প্রায় দল চালাচ্ছেন। তবুও তাঁর সহযোগী লাগে।
আওয়ামী লীগের দলীয় কাঠামো অনুযায়ী দলের সাধারণ সম্পাদক নিঃসন্দেহে দলের দ্বিতীয় ব্যক্তি। ওবায়দুল কাদের দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে দলের বিভিন্ন সাংগঠনিক সমস্যা এবং সাংগঠনিক বিষয়গুলো দেখভাল করেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেন।
আওয়ামী লীগের গত ২৯ শে ডিসেম্বর কাউন্সিল অধিবেশন হয়েছে। এই কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। একইসাথে আওয়ামী লীগ সরকার এবং দলকে আলাদা করার নীতি নিয়ে এগোচ্ছে। এবারের কাউন্সিলের মাধ্যমে সেটা আরও স্পষ্ট হয়েছে। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া আর কেউই মন্ত্রিত্ব এবং দলের পদ- দুটো রাখতে পারেনি। আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে যে, আওয়ামী লীগের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি কে? দলের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের পর কার ক্ষমতা বেশি? বা আওয়ামী লীগ সভাপতি কার কথা বেশি শোনেন?
স্বাভাবিকভাবে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের পরেই প্রেসিডিয়ামের অবস্থান এবং সভাপতিমণ্ডলী হলো আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। সেই বিবেচনা থেকে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্যদের মধ্য থেকেই কি আওয়ামী লীগের তৃতীয় ব্যক্তি? আবার প্রেসিডিয়ামের বাইরেও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের চারটি পদ রয়েছে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকরাও অনেক সময় ক্ষমতাবান হন এবং তাঁরা দল পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যেমন, ওয়ান ইলেভেনের সময়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকেই ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছিলেন।
এখন প্রশ্ন উঠেছে যে, আওয়ামী লীগের তৃতীয় ব্যক্তি কে? প্রেসিডিয়াম সদস্যদের কেউ নাকি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের কেউ? আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক সময়ের রাজনীতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে অনেকেই প্রভাবশালী, অনেকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার পরামর্শ পান বা শেখ হাসিনাও অনেককে দায়িত্ব দেন। কিন্তু তাদের প্রত্যেককেই বিশেষ বিশেষ কাজের জন্য শেখ হাসিনা নিয়োজিত করেন। পূর্ণাঙ্গ দলের নিয়ন্ত্রণ বা কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে কেউই আবির্ভূত হননি। যেমন- কাজী জাফরুল্লাহ আওয়ামী লীগের অনেক অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন। বেশ কিছু জায়গায় কমিটি গঠনের দায়িত্বও তাকে দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের আরেক সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাকও সাংগঠনিক বিষয়ে অনেক কিছুই দেখাশোনা করেন। কিন্তু দলের পুরো কর্তৃত্ব, নিয়ন্ত্রণ বা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং সংযোগ প্রায় ক্ষেত্রেই তাদের নেই।
আওয়ামী লীগে এবার প্রেসডিয়ামে দুজন নতুন সদস্য এসেছেন। তারা হলেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আবদুর রহমান। এই দুজনের মধ্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক ক্রমশ পাদপ্রদীপে আসছেন। দলের বিভিন্ন নীতি নির্ধারনী সিদ্ধান্ত এবং পুরো দেশে সাংগঠনিক বিষয়গুলো দেখভাল করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করছেন।
এছাড়াও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে এবার নতুন এসেছেন ড. হাছান মাহমুদ এবং বাহাউদ্দিন নাছিম। এদের মধ্যে ড. হাছান মাহমুদ হলেন সেই ব্যক্তি যিনি দলের দলে পদোন্নতি পেয়েছেন। আবার মন্ত্রী হিসেবে তথ্য মন্ত্রণালয়েও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। তথ্যমন্ত্রী হিসেবে সরকারের মুখপাত্রও তিনি। হাছান মাহমুদের দলে প্রভাব বেড়েছে। তবে সারাদেশে নেতা-কর্মীদের মাঝে নেতা হিসেবে তিনি এখনও নিজেকে পুরোপুরিভাবে মেলে ধরতে পারেননি। কারণ ছাত্র রাজনীতির পর তিনি দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন। এ কারণে তিনি জনপ্রিয় হলেও তৃনমূলের কাছের মানুষ হিসেবে তিনি নিজেকে তৈরি করতে পারেননি।
আবার আগের যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দুজন ছিলেন তাদের মধ্যে মাহবুবুল আলম হানিফ এবং ডা. দীপু মনিও নিজেদেরকে গড়ে তুলেছেন। সাংগঠনিকভাবে কাজকর্মে তারা যথেষ্ঠ দক্ষতার পরিচয় দলেও এখনও তারা দলের তৃতীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেননি।
সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগে তৃতীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তি হিসেবে এখনও কেউ নেই। তবে সর্বশেষ সম্মেলনের পর যাদের ক্ষমতা বেড়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন- জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, ড. হাছান মাহমুদ এবং বাহাউদ্দিন নাছিম। এদের যেকোনো একজন তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগে আবির্ভূত হবেন? নাকি আওয়ামী লীগে তৃতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি কখনই হবে না, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই হবে সবচেয়ে বড় ক্ষমতাবান?