
আমার স্ত্রীর নাম রোকেয়া। পেশায় একজন সাইকিয়াট্রিস্ট। সাইকিয়াট্রিস্টদের কাজ পাগল লোকের চিকিৎসা করা। রোকেয়া পাগলের চিকিৎসা করে। যদিও সে তার রোগীকে পাগল বলতে আমাকে নিষেধ করেছে। তাও আমি বলি। বলবার পেছনে কারণ, একবার আমি তার হাসপাতালে গেলাম। সেখানে এক রোগীকে দেখলাম খালি গায়ে করিডোরে পায়চারি করছে। তার পরনে লুঙ্গি খুলে যাবে খুলে যাবে এমন ভাব করছে। রোকেয়া তাকে বলছে, আপনি আপনার কেবিনে যান প্লিজ। আর লুঙ্গিটা ভালো করে বাঁধুন। রোগী ব্যাপারটা আমলে নিচ্ছেনা। নাক মুখ কুচকাচ্ছে। এক পর্যায়ে রোগী বলে উঠলো, এই ছেমড়ী, তুই আমারে ওয়ার্ড চিনাস? লুঙ্গি বাঁধা শিখাস? বল্ লুঙ্গি বাঁধা শিখাস? তোর মায়েরে আমি **। I f** your mommy। ব্যাপারটাতে আমার হাসি পাওয়া উচিত ছিলোনা। হাসি পেয়ে গেলো। আমি হাসলাম।
– তুমি হাসছো কেনো?
– তুমি তোমার রোগীদের কাছে কি প্রায়ই এমন বকাঝকা খাও?
– না। আজ খেয়েছি। হোল্ড এ সেকেন্ড। এটাকে বকা বলছো কেনো জানতে পারি?
আমি হাসতে হাসতে বললাম, এটা বকা না?
– না। শুনো এই লোকটা কে ছিলো তুমি জানোনা। তাই এমনটা বলছো। ইনি সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালের পেডিয়াট্রিক্স ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান ড, বালেশ্বর রায় তান্দুরি।
আমি আবার হাসলাম।
– হাসি থামাও। আমার কথা শুনো। তান্দুরি নামটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানতোনা। এই স্যার শিক্ষকতা জীবনে প্রচুর তান্দুরি খেতেন। তখন আমরা তার নামের পেছনে তান্দুরি লাগিয়েছি।
– এই লোক তোমাদের স্যার?
– ছিলেন। এখন এক ধরণের কঠিন রোগে ভুগছেন। হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি ডিপার্টমেন্টের প্রধান এই স্যারের চিকিৎসা করছেন। তার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি সেই কমিটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। বুঝতে পারছো?
– বুঝতে পারছি। তুমি আজকাল পাগল লোকদের চিকিৎসা কমিটির সাধারণ সদস্য হচ্ছো। স্বামী হিসেবে এটা আমার বিরাট গর্বের ব্যাপার। I am proud of you Rukaiya।
আমি তৃতীয়বার হাসলাম।
কয়েকদিন ধরে রোকেয়া এক রোগীর চিকিৎসা করছে। এই রোগী পূর্বোক্ত রোগীর মতো হাই প্রোফাইল রোগী না। সাধারণ রেজিস্টার্ড রোগী। যার জন্য হাসপাতালে কেবিন ওয়ার্ড বরাদ্দ দেয়া হয়নি। তিনি নিয়মিত প্রাইভেট কারে করে হাসপাতালে আসছেন। চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছেন। আজকে এসে তিনি রোকেয়াকে একটা ডায়েরি দিয়েছেন। ডায়েরিতে তার কিছু লেখা আছে। তিনি বলেছেন আমার ডায়েরি পড়ে আপনি কি আমার কিছু সমস্যা ধরতে পারবেন? আচ্ছা ধরতে না পারলে ধরবেননা। আমি চাই আপনি ডায়েরিটা পড়ুন। রোকেয়া ডায়েরিটা বাসায় এনেছে। এখন আমার কাজ হচ্ছে ডায়েরিটা পড়ে কিছু বের করা। মেজমেচিং টাইপ কাজ। আমি ডায়েরি পড়ছি। তার আগে বলি, এই কাজটা রোকেয়া আমাকে দিয়েছে। তার কেনো যেনো বিশ্বাস হয়েছে আমি তাকে সাহায্য করতে পারবো।
ডায়েরি–
এই পৃথিবীর সবচেয়ে কমন রঙের নাম কি? সাধারণ রং? যে রং সবসময় সবখানে দেখা যায় সেই রংকে সাধারণ কমন রং বলে। বুঝতে পারছো? আচ্ছা রংটা কি নীল?
আমি নিশ্চিত না। অনুমান করছি। আমার অনুমানে দুটা উত্তর আছে। এক- কালো; দুই- নীল। পৃথিবীতে দুই সময়ে দুটা রং কমন হয়। রাতের কমন রং কালো। দিনে নীল।
উত্তরে ঝামেলা আছে। দিনের বেলা আকাশ সবসময় নীল থাকবে তা তো না। বর্ষাদিনে আকাশে মেঘ থাকে। মেঘের রং হয় ছাই। তখন পৃথিবীর সবচেয়ে কমন রং কি হয়? ছাই? The Ash?
যাই হোক, আমি ডায়েরী লিখছি। লিখবার কালি নীল। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি দিনের বেলা আমি নীল রঙের কালিতে লিখবো। আর রাতে কালো কালিতে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে বিশেষ কোনো কারণ নেই। তবে চাইলে কারণ দাঁড় করানো যেতে পারে। দাঁড় করানো পরের ব্যাপার।
আচ্ছা বর্ষাদিনে আকাশ মেঘলা হবে। মেঘলা আকাশের রং হবে ছাই। তখন কি কালিতে লিখবো? The Ash? ছাই কালির কলম আছে? থাকলে কোথায়? ঢাকা শহরের বড় বড় লাইব্রেরিতে? খুঁজে দেখতে হবে।
কাজ নং এক: প্রতি পনেরো দিনে একবার শহরের ভালো ভালো লাইব্রেরিতে ঢুঁ মারা। কি উপকার হবে তা এখন বুঝতে পারছিনা। উপকার হলে লিখবো।
যা বলছিলাম। আমি ডাইরী লিখছি। লিখতে গিয়ে বেশ ঝামেলা পোহাচ্ছি। ঝামেলা পোহাবার কারণ- আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই লেখায় কোনো কাটাকাটি করবোনা। নো ওভাররাইটিং। ইতোমধ্যে ডায়েরী বানান ভুল করে ডাইরী লিখে ফেলেছি। ডায়েরী শব্দের ইংরেজি বানান Diary। ছোটবেলায় আমার Diary বানানকে Dairy লিখবার বদভ্যাস ছিলো। কাল নিপাতে বদভ্যাস ভোল পাল্টিয়েছে। সে ইংরেজি ছেড়ে বাংলায় ঢুকে গেছে। “আমি মনে হয় গুছিয়ে লিখতে পারছিনা। লেখা গুলিয়ে যাচ্ছে। আমার আরেকটু হার্ড এন্ড ফাস্ট হওয়া উচিত।” (আমার উচিত ছিলো কোটেশনে উদ্ধৃত অংশটি আলাদা প্যারায় লিখা। ভুল হয়ে গেছে। লিখবার পর অংশটুক কোটেট করে বিশেষ দ্রষ্টব্য লিখলাম। বিশেষ দ্রষ্টব্যের সংক্ষিপ্ত রূপ বি,দ্র। কেনো যেনো এটা দেখে প্রথমেই আমার মনে হয় বিদ্রোহ। এর ইংরেজি Nota Bene। সংক্ষেপে N,B। এই শব্দটা সুন্দর। দেখে কিছু মনে হয়না।)
আমার লিখা পরে কি মনে হচ্ছে? আমি খুব কমপ্লেক্স মানুষ? অথবা আমার মাথায় কোনো সমস্যা আছে?- বুঝা যাচ্ছেনা। আরো সময় লাগবে। আমি সময় নিচ্ছি।
মাখন বিভ্রাট-
মাখনের পুষ্টিগুণ প্রতি 14.2 গ্রামে
Energy ——- 101.8 Kcal
Carbohydrates ——- 0.01 g
Sugars ——- 0.01 g
Fat ——- 11.52 g
Protein ——– 0.12 g
আমাকে দুটা পরোটা দেওয়া হয়েছে। আমি পরোটা খাচ্ছি। খেতে গিয়ে প্রথম প্রথম মাখনের স্বাদ পেলাম। এখন পাচ্ছিনা। ব্যাপারটা কি? কয়েকটা ব্যাপার থাকতে পারে। প্রথম ব্যাপার- স্বাদের ব্যাপারটা ইউজড টু হয়ে গেছে। ইউজড টুর মাত্রা অবসেসিভ লেভেলের। তাই এখন পরোটা তেলে ভাজা পরোটার মতো লাগছে। দ্বিতীয় ব্যাপার- প্রথম পরোটা মাখনে ভাজা হয়েছে। পরেরটা তেলে। তৃতীয় এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাপার- মাখন প্যানে একবারই ছাড়া হয়েছে। প্রথমবার। দ্বিতীয় রুটিকে মাখনের অবশিষ্ট তেলে ভেজে পরোটায় রূপ দেয়া হয়েছে।
(পরোটা খাওয়া শেষ এবং তা এমনি এমনি খেয়েছি। কিছু দিয়ে না।)
অনেকদিন আগে একটা গল্প লিখেছিলাম। গল্পের প্রটাগোনিস্ট একটা মেয়ে। মেয়েটার একটা ডায়েরী থাকে। সে ডায়েরীর বৈশিষ্ট্য নক্ষত্র টাইপ। অর্থাৎ সেল্ফ লাইটিং এর ব্যবস্থা। মেয়েটা রাতের অন্ধকারে ঘরের সব বাতি নিভিয়ে দেয়। তারপর ডায়েরীর লাইট জ্বালিয়ে ডায়েরী লিখে। এই ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলে, It is much more important to me to sink at my conceptional era than any other things. The less the enlightened surface area the much I can sink at my era। মেয়েটার নাম সুন্দর। রূফাইদা জাবিন। অবশ্যি রূফাইদা হক হলে নামটা আরও সুন্দর হতো।
আচ্ছা সত্যি সত্যিই কি এমন ডায়েরী আছে? লাইট জ্বলে এমন ডায়েরী? – অবশ্যই আছে। অবশ্য কোথায় আছে তা বলতে পারছিনা। রূফাইদাকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে হবে। রূফাইদার সাথে কথা বলা আমার জন্য সহজ। আমাকে একা ঘরে চোখ বন্ধ করে বলতে হবে, রূফাইদা, দেখা দাও। দেখা দাও। তখনই ও দেখা দিবে। দেখা না দিলে ধরে নিতে হবে ও ব্যস্ত আছে। ঘুমোলে স্বপ্নে দেখা দিবে। অবশ্যি স্বপ্নে দেখাটা বিরক্তিকর। ননলুসিড। এবার রূফাইদার সাথে দেখা হলে ওকে ডায়েরীর পাশাপাশি আরেকটা প্রশ্ন করবো, আচ্ছা রূফাইদা, তোমার ছেলে কার মতোন দেখতে হয়েছে? আমার মতোন?……..
আজ ঘুমে ধরেছে। আর পড়বোনা। রোকেয়া ঘুমুচ্ছে। ঘুমন্ত স্ত্রীর পাশে বসে বসে ডায়েরির ভাবোদ্ধার করার মতো কাজ করবার অর্থ নেই।