
আমার ডায়েরিতে একটা চ্যাপ্টারের নাম- Query And Query.। চ্যাপ্টারের প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে বলি।
আমার মাঝে মাঝেই নিজের ব্যাপারে এমন অনেক কিছু জানতে মনে হয় যা আমার কাছে অস্পষ্ট। যেমন ধরুন আমার মনে হলো, আচ্ছা বিদেশে গেলে আমি কোন জিনিসটা মিস করবো? আমার কাছে এর উত্তর অস্পষ্ট। তখন আমি Query And Query চ্যাপ্টারে প্রশ্নটা লিখি। তারপর চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ভাবি। তারপর উত্তর লিখি। অধিকাংশ উত্তরই হয় তালিকাবদ্ধ। যেমন এই প্রশ্নের উত্তরে তালিকা করেছি।তালিকার এক নাম্বারে লিখেছি আজান। বিদেশ গেলে আমি সর্বপ্রথম ওয়াক্ত ওয়াক্ত আজান মিস করবো। ঢাকাতে আজান সহজশ্রুত। বিদেশের মাটিতে নয়।
দেখা গেলো আমার ধারণা ভুল। আমি বিদেশে আছি। খুলে বললে তুরস্কে আছি। এখানে আমি ওয়াক্ত ওয়াক্ত আজান শুনতে পারছি। শুধু আজান শুনছি তাই না, ইস্তানবুলের মসজিদগুলোর স্থাপত্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছি।
শীতকালে ইস্তানবুলে অনেক ঠাণ্ডা পড়ে। তাপমাত্রা শূণ্যের কাছাকাছি চলে আসে। তুষার পড়ে। এখন শীতকাল। এখানে তুষারপাত হচ্ছে। আমাকে বলা হয়েছে, তুষারপাতের সময় আমি যেনো ঘরের বাহিরে না যাই। আমি গরম দেশের মানুষ। গরম দেশের মানুষরা তুষারপাত সহ্য করতে পারেনা। বুকে ঠাণ্ডা বসে তাদের একাকার অবস্থা হয়ে যায়। অগত্যা আমি রুমে বসে আছি। অলস বসে বসে বুশরাকে চিঠি লিখছি। আমি মাঝেমাঝেই মেয়েটাকে চিঠি লিখি যার অধিকাংশই ও পড়তে পারেনা। পারেনা কারণ আমি তা ওর কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেইনা। নিজের কাছে রেখে দেই।
আমার রুমে ফায়ারপ্লেস আছে। সেখানে আগুন জ্বলছে। আমি বুশরার নামে একটা চিঠি লিখছি। লিখছি আর ফাঁকে ফাঁকে ফায়ারপ্লেসের দিক তাকাচ্ছি। আগুন জ্বলছে। কাঠ পুড়ছে। এক ধরণের শব্দ হচ্ছে। আমি চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছি। অদ্ভুত সবকিছু। আচ্ছা এই পর্যায়ে আমি চিঠিতে ফিরে যাই।
“প্রিয় বুশরা,
তোমার নামে একটা ছড়া দিয়ে শুরু করছি।
ওহে মম বুশি;
চিবাও খালি ভূষি;
খাও একটা ঘুষি।।
বুশরা, বিয়ে আর তৎসংলগ্ন আনুষ্ঠানিকতার প্রতি আমার তীব্র আগ্রহ। আমি তীব্র আগ্রহ থেকে লিখছি।
# অনুষ্ঠান কোথায় হলো?
# খাবারের মান কেমন ছিলো? (রেবেকা আপুর বিয়ের মতো বলবেনা আশা করি।)
# বোরহানি ভালো ছিলো? জিজ্ঞেস করছি কারণ বোরহানির প্রকারভেদ মোটামুটি দশ বারো রকম। যেমন ঠাণ্ডা বোরহানি, গরম বোরহানি, জ্বলা বোরহানি, কাট্টা বোরহানি ইত্যাদি। ভালো বোরহানি চেনা মুশকিল কি কাম।
# গত সপ্তাহে একটা বিয়ে হলো। কোর্টের বিয়ে। বিয়ের পর হালকা খানাদানার ব্যবস্থা করা হলো পলাশীর মোড়ে। আমাদের ছয় সাতজনকে নব দম্পতির ছোট্ট ট্রিট। খাবারের মান নিম্ন পর্যায়ের গুণসম্পন্ন সুস্বাদু। খেয়ে বাসায় আসতে আসতেই পেটের অবস্থা খারাপ হয় এমন টাইপ। কয়েকদিন ধরে কন্সটিপেশন ছিলো। লুবিপ্রোস্টনে লাভ হচ্ছিলোনা। মন্দ খাবারে লাভ হয়েছে। পেটের অবস্থা খারাপ হয়ে ভালো হয়ে গেছে। – – +। (আমার ধারণা, মাঝেমাঝে মন্দ খাবার খাওয়া খারাপ না।)
কে বিয়ে করেছে বলতে পারো? তোমার বান্ধবী তামান্না হারবে (ফুড এন্ড নিউট্রিশন)। যাকে বিয়ে করেছে তার নাম যাকের। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ছাত্র। ছেলেটার সাথে তামান্নার চেহারার অদ্ভুত রকমের মিল আছে। আমি ভেবেছি ভবিষ্যতে কোনো সিনেমা বানালে এদেরকে ভাই বোন ক্যারেক্টারে রোল দিবো। ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং হবেনা?
# তুমি তো জানো শুকনো মরুভূমিতে পানি পাওয়া যায়। মজার ব্যাপার কোর্ট ম্যারিজের সময় পাত্রীর চোখে পানি পাওয়া যায়না। নাটক সিনেমাতেও না, বাস্তবেও না। (আমার ধারণা এই সময় পাত্রীর অ্যাকুয়াস হিউমারের টেম্পেরেচার হিমাঙ্কের নিচে চলে যায়।)
শুনো, কোর্ট ম্যারিজ নামটা শুনতে যেমন অফিসিয়াল অফিসিয়াল লাগে আসল ব্যাপারটা হচ্ছে তেমনই আনঅফিসিয়াল। কলোয়েডের মতো ভোগাস। পাত্র পাত্রী দুজন আগ্রহ নিয়ে কবুল আমীন বলে। সিগনেচার করে। তারপর নিজ নিজ বাসায় চলে যায়। বিয়ের পর এদের ভাবখানা এমন হয় যেনো এদের মাঝে কিছুই হয়নি। বিয়ের মতোন ব্যাপারটা এতোটা তুচ্ছ হওয়া ঠিক না। হাদীসে আছে, নিশ্চয়ই মানবের জন্য সবচেয়ে সুখের দিন হলো তার বিয়ের দিন। অতএব এটা একটা সুখের ব্যাপার। ঢোল পিটিয়ে সারা দুনিয়াকে জানানোর ব্যাপার। (অন্তত আমার কাছে।)
# তোমাকে ছবিতে এট এ গ্লান্স আমি চিনতে পারি নি। চোখ বড় বড় করে চিনতে হয়েছে। তাও তোমার নিজের সেল্ফিতে। বাকীগুলোতে ড্রেসকোড মিলিয়ে চিনলাম। বুশরা, তোমাকে আজকাল অন্যরকম লাগছে। হয়তো অনেক বেশি সুন্দর, হয়তো বিয়ের ঠিক আগের মুহূর্তে মেয়েদের যেমন লাগতে হয় তেমন। যাই হোক, আজ মনে হয় বিয়ে নিয়ে অনেক লিখে ফেলেছি। বাদ দাও।
আমার হাতে সময় কম। ফয়তার দাওয়াত পড়েছে। তুমি ফয়তা মানে বুঝো? আমি বলি। মৃত ব্যক্তির জন্য দোআ করে মানুষ খাওয়ানোকে ফয়তা বলে। আমি খেতে যাবো। ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত। আমি এদেশের মানুষকে চিনিনা। আমার পরিচয় আমি চারদিন ধরে পেয়িং গেস্ট হিসেবে এখানে এক বাসায় থাকছি। এর মাঝে প্রতিবেশি একজন এসে আমাকে দাওয়াত দিয়ে গেছে। আমার ধারণা এ অনুষ্ঠানে পুরো মাসলাকের মানুষকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। যে প্রতিবেশি দাওয়াত দিয়েছে তারা খুব ধনাঢ্য। বসফরাসের কূল ঘেষে এদের বিশাল বাংলো আছে। আমি বাংলোতে যাবো। খাওয়া দাওয়া নিয়ে খুব একটা সমস্যা হবেনা। এরা স্পাইসি খাবার পছন্দ করে। দাওয়াতে স্পাইসি খাবারই দিবে। সমস্যা হচ্ছে কথা বলা নিয়ে। এরা কেউ ভালো ইংরেজি পারেনা। নিজেদের মাতৃভাষা নিয়ে এদের খুব গর্ব। সেদিন আমাকে এক ভদ্রলোক আধো ইংরেজিতে যা বললেন তার বঙ্গানুবাদ হচ্ছে, ‘আমরা কখনোই ওয়েষ্টার্ন মতাদর্শ অনুসরণ করা পছন্দ করিনা। তুমি দেখো আমরা বিগত এক হাজার বছর ধরে স্বাধীন। তোমাদের ভারতবর্ষ সেদিক থেকে পিছিয়ে। দীর্ঘকাল তোমরা ছিলে পরাধীন। ইংরেজদের হাতে বন্দি। তোমাদের শাসকবর্গ এক্ষেত্রে কি ব্যর্থতার পরিচয় দেয়নি?’ আমার একটা কিছু বলা উচিত ছিলো। বললামনা। ভদ্রলোকের সাথে তর্ক করবার কোনো ইচ্ছে ছিলোনা বলে বললামনা। শুধু মনে মনে প্রশ্ন করলাম, তোমরা যদি সত্যি সত্যিই এতোটা রক্ষণশীল তবে তোমাদের তুর্কী ভাষার অক্ষর আরবি থেকে ইংরেজি হলো কিভাবে? এটা কি সুলতানি আমলে আরবি হরফে ছিলোনা?
বুশরা, আমার ধারণা প্রেমিকার সাথে এসব কথা বলা ঠিকনা। এসব লেখার টাইপ দেখে মনে হচ্ছে আমি পত্রিকার কলাম লিখছি। আমি কলাম লিখছিনা। নেহাৎ ভালোবাসার কাছে নিবেদন করছি। শুনো, আমার প্রতি রাগ করে থেকোনা। তোমার জন্য একটা ইন্টারেস্টিং জিনিস কিনেছি। দেশে এসেই তোমাকে দিবো। কি জিনিস তা এখন বলছিনা। জিনিসটা কিনবার সময় মনে হয়েছে তোমার পছন্দ হবে। কিন্তু এখন আমি কনফিউজড। মনে হচ্ছে জিনিসটা তোমার পছন্দ হলেও হতে পারে, নাও হতে পারে। আগামীকাল হয়তো মনে হবে, জিনিসটা তোমার একদমই পছন্দ হবেনা। তোমার যদি কোনো পছন্দের জিনিস থাকে আমাকে বলো। আমি কিনে আনবো। হাতে স্কলারশীপের এখনো বেশ কিছু টাকা আছে। তামাম না?”
(আমার হাতে সত্যিই সময় কম। তুফান ডাকছে। এখনই খেতে যেতে হবে।।।)
বি:দ্র: তামাম হচ্ছে তুর্কিদের জাতীয় শব্দ। এরা প্রায় প্রতিটা বাক্যে এই শব্দটা উচ্চারণ করবে। এর অর্থ ঠিক আছে। তামাম না- এর অর্থ ঠিক আছেনা? মূল চিঠিতে তামাম না- শব্দের অর্থ লিখলে ভালো হতো। মেয়েটা বুঝতে পারতো। আমি ইচ্ছে করেই লিখলামনা। ও কষ্ট করে একটু ঘেটেঘুটে বের করলে মন্দ কিসে?