
আরিফ রব্বানী: স্বাগতম ২০২০ ইংরেজি। নতুন এই বছরের শুভলগ্নে আসুন আমরা কিছু কথা জেনে নেই। শতের’শ শতকে কথাগুলো বলেছিলেন বালটামার গার্সিয়ান। পেশায় ছিলেন ধর্মযাজক। গার্সিয়ান তাঁর জীবনকালে সামরিক-বেসামরিক, উচ্চ পদস্থ-নিম্ন পদস্থ হাজার হাজার লোকের পাপের স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হওয়া এবং জীবনে সফল হওয়াটা কঠিন কিছু নয়। তিনি এরপর তাঁর জীবদ্দশাতেই জীবনে সফল হওয়ার ৩০০ দিক নির্দেশনা লিপিবদ্ধ করে গেছেন তাঁর লেখা ‘দি আর্ট অব ওয়ার্ল্ডলি উইন্সডম’ নামক গ্রন্থে। স্পেন দেশীয় নাগরিক বালটামার গার্সিয়ানের লেখা বইটি পৃথিবীতে বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। বালটামার যদিও তাঁর সমাজ-কাল-পাত্রকে উদ্দেশ্য করে বইটি লিখেছিলেন, কিন্তু ৩০০ বছর পরেও বইটি শুধুমাত্র স্পেন দেশীয় সমাজে সীমাবদ্ধ না থেকে বিভিন্ন সমাজে ও ভাষায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং সমাদৃত হয়েছে।
বহুল প্রশংসিত বইটি থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা তুলে দিলাম। আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।
কিছু বিষয় রহস্যাবৃত রাখুন:
সব ব্যাপারে খুব বেশী খোলামেলা হওয়ার মধ্যে মজাও নেই এবং এটি ভালোও নয়। আপনি কি এবং কেমন তা চট করে সবার কাছে ঘোষনা দেয়ার দরকার নেই বরং আপনার সম্পর্কে লোকদের ভাবতে সুযোগ দিন। বিপদের সময় সতর্কতার সাথে নীরবতা পালন করুন। একবার যদি আপনি প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়ে ফেলেন এবং আপনার সমালোচনা শুরু হয় তবে আপনি বারবার দূর্ভাগ্যের স্বীকার হবেন।
নিজের সব থেকে ভাল গুণটা জানুন:
নিজের কি কি গুণ আছে তার একটা তালিকা বানিয়ে ফেলুন। এবার সব থেকে ভালো গুণটাকে আরো ঘষে মেজে শানিত করার ব্যবস্থা নিন। অন্য গুণগুলোর যত্ন নিন। সব মানুষেরই কিছু বৈশিষ্ট থাকে। সেটা কি তা জেনে নিয়ে তার পরিচর্যার মাধ্যমে প্রতিটি মানুষই বিশিষ্ট ব্যক্তিতে পরিণত হতে পারেন।
অতিরিক্ত করা ঠিক নয়:
কোন কিছুকে সর্বোৎকৃষ্ট ভাবা সত্যের অপলাপ। এটি আপনার বিচার বুদ্ধির ব্যাপারে সন্দেহ তৈরীতে সহায়ক। তিনিই বিচক্ষণ যিনি কোন কিছুর অতি মূল্যায়ন করেন না। অতি মূল্যায়নের অভ্যাস অর্জন আপনার রুচি ও বিচার বুদ্ধির কার্যকারিতা নষ্ট করে দিতে পারে।
প্রয়োজনীয়টুকু করুন:
যে কাজে যতটুকু শ্রম দেয়ার দরকার তার চেয়ে বেশী দেবেন না। নিজের কর্মক্ষমতার প্রকাশ প্রতিদিন ঘটাবেন না। কারন এতে আপনার ব্যাপারে মানুষের যে বিস্ময় তা নষ্ট হয়ে যাবে। বরং প্রতিদিনই যদি আপনি কিছুটা করে নিজেকে, নিজের কাজকে গোপন রাখেন তবে আপনার প্রতি, আপনার কাজের প্রতি অন্যের আগ্রহ বজায় থাকবে এবং আপনার মেধার সর্বশেষ প্রান্তটি সকলের অজানাই থেকে যাবে।
তাদের সাথে চলুন যাদের থেকে শিখতে পারবেন:
এমন ব্যাক্তিদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন, আড্ডা দিন যেখান থেকে আনন্দের পাশাপাশি জ্ঞান অর্জনও সম্ভব। সমমনা লোকদের সঙ্গ উপভোগ করুন। আপনি যা বলবেন তা যেন প্রশংসিত হয় এবং আপনি যা শুনবেন তা থেকে শিখবেন।
ক্লান্তিতে যেন পেয়ে না বসে:
ছোটখাটো কাজ অনেক সময় আনন্দদায়ক ও তৃপ্তিকর হয়। এমন কাজ করার মধ্যে উৎসাহও পাওয়া যায়। ভাল কাজ ছোট হলেও তা দ্বিগুন ভাল। দুষ্টুমি অল্প হলে তা খুব খারাপ নয়। হাসি-আনন্দ-দুষ্টুমি জীবন শক্তি যোগায়।
সুখের দিন দুঃসময়ের প্রস্তুতি নিন:
যখন আপনার প্রাচুর্য থাকবে তখনই দুঃসময় মোকাবেলায় কি করবেন তা ভেবে রাখুন। মনে রাখবেন আপনার সুখের দিনে অন্যের সহযোগিতা খুবই সহজে পাবেন এবং এ সময়ে বন্ধুরও অভাব হবে না। সুযোগ পেলেই অন্যকে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ করে তুলুন এবং এদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখুন। আজকে আপনার নিকট যে কাজটি গুরুত্বহীন মনে হচ্ছে হয়ত সময়ে এটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
নিজের সম্পর্কে বলবেন না:
নিজে নিজের প্রশংসা করবেন না। কারন এতে হয় আপনার গর্ব প্রকাশ পাবে অথবা আপনি অন্যের নিকট ছোট হয়ে যাবেন।
বুদ্ধিমানেরা কোন কাজ তাড়াতাড়ি করে, বোকারা করে দেরীতে:
জীবনে উন্নতির এটি একটি বড় শর্ত – দিনের কাজ দিনে শেষ করে ফেলা। যে কাজটি করবেন সেটি বিশ্বস্থতার সাথে মনের আনন্দ নিয়ে শেষ করুন।
অভিযোগ করবেন না:
কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন তাকে সুযোগ করে দেয় আপনার সাথে ঔদ্ধত্য দেখানোর। তাই অন্যের নিকট হতে যদি কাজ আদায় করতে চান তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ না করে তার প্রশংসা করুন। এতে বরং কাজ হবে।
কাজ করুন, আন্দাজও করুন:
কোন একটি কাজ করার সময় কি হতে পারে সেটি আগে থেকে আন্দাজ করার চেষ্টা করুন, ঐ কাজটি সুন্দর হয় যে কাজের ভেতরের পরিকল্পনাটি সুন্দর।
চরিত্রে বেশী সারল্য আনবেন না:
দেখা যায় কেউ কেউ খুব সহজেই কাজের ধরন পাল্টাচ্ছে, মত পাল্টাচ্ছে, চারিত্রিক দৃঢ়তা হারিয়ে ফেলছে। এ ধরনের লোকেরা নিজেদের উপর নিজেরা যেমন বিরক্ত তেমনি এদের আচরণে অন্যরাও বিরক্ত হয়।
নিজের বিজয়ের ধারা বজায় রাখুন:
সমাজে কিছু লোক আছেন যারা সবটা শুরু করেন কিন্তু কোনটাই শেষ করেন না। এদেরকে বলা যায় অস্থির কিংবা খামখেয়ালী। এর দুটো মানে হতে পারে, হয় এরা অস্থিরমতি নতুবা কাজটি কঠিন তাই কাজ শেষ না করেই এরা অন্য কাজ শুরু করেন। যে কাজটি গুরুত্বহীন মনে হবে সেটি কেনইবা শুরু করা ? যিনি জ্ঞানী তিনি শিকার করেন মারার জন্য, আহত করার জন্য নয়।
ত্যাগে প্রস্তুত থাকুন:
ভাল কিছু প্রাপ্তির জন্যে সর্বদাই ত্যাগে প্রস্তুত থাকাটা জরুরী।
শেষ কথা:
বছরের কিংবা জীবনের যে পরিকল্পনাই আপনি করুন না কেন মনযোগ দিয়ে করুন এবং তা পালনে সচেষ্ট থাকুন। মনে রাখুন, ভালোভাবে শুরু করার চেয়েও ভালোভাবে শেষ করাটা জরুরী। এমনভাবে কাজ করুন এবং জীবন পরিচালিত করুন যাতে আপনি চলে গেলেও মানুষ আপনাকে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করে।
সফল হোক আপনার পরিকল্পনা, সুখী হোন আপনি।
শুভেচ্ছা সবাইকে।