
প্রথমেই সময়সীমা নির্ধারণ করে নিলাম। লক্ষ্য খুব দ্রুত কিছু একটা লিখে ফেলা। লক্ষ্য পূরণের প্রতিবন্ধকতা- কোনো প্লট মনে আসছেনা। মনে মনে শুধু একটা কথাই আসছে- কি লিখবো? কিছুই তো মাথায় আসছেনা। সারাদিন আমি নানানরকম জিনিস ভাবি। তার মধ্যে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ভাবনাগুলো হয় টয়লেটে বসে। আচ্ছা এই গল্পে কি তাই নিয়ে লিখবো?
আমার এক পরিচিত মানুষ আছেন। তার সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়েছে। ফলতঃ অনেকদিন ধরে তার সাথে কথা বলা বন্ধ রয়েছে। মজার ব্যাপার তিনি কেমন আছেন, কি করছেন তা জানবার আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ হচ্ছেনা। আমার আগ্রহী হওয়া উচিত। আগ্রহী হওয়া উচিত কারণ তার সম্পর্কে আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে আমার এক কথার উত্তর হবে- “সে খুব ভালো মেয়ে। আমি তাকে পছন্দ করি। বেশ পছন্দ করি।” যাকে বেশ পছন্দ করি সে কেমন আছে, কি করছে? এই টাইপ প্রশ্নের ব্যাপারে উদাসীন থাকাটা নিয়মের মধ্যে পড়েনা। এই পর্যায়ে কথা কাটাকাটির হেতু উল্লেখ করি। হেতুস্বরুপ তার সাথে শেষ কথার নমুনা বলাই যথেষ্ট।
আমি- কেমন আছেন?
সে- আছি আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?
আমি- আমি আছি। মানে বেঁচে আছি। দুদিন যাবৎ খেতে পারতেছিনা। মাড়িতে একটা ঘাঁ হইছে। কিছু চাবাইতে গেলে ব্যথা লাগতাছে। ব্যথার মাত্রা হিসাবে একে পরান কাঁপুনি ব্যথা বলা যায়। তার মানে ব্যথা অত্যাধিক। আমার ধারণা, কোনো মানুষ আমার খানাপিনায় নজর দিছে। নজর ছাড়া মানুষের এতো ব্যথা উঠেনা। গতকাল থেকে কন্সটিপেশন হইছে। পায়খানা হচ্ছেনা। দুপুরে পায়খানা হতে নিয়েও হয় নাই। অবশ্যি এতে আমারই দোষ। যেই পায়খানা আসতে নিলো ওমনি আমি একটা ব্যাপারে চিন্তাযুক্ত হয়ে গেলাম। কি চিন্তা আপনি অনুমতি দিলে বলবো।
সে- তুমি আমার সাথে আজাইরা প্যাচাল পারবানা।
আমি কথা বন্ধ করলাম। এখন গল্পে আসা যেতে পারে। গল্প বলছিলাম- টয়লেটে বসে আমি ইন্টারেস্টিং ভাবনা ভাবি। একদিন ভাবলাম পিঁপড়ের গন্ধ শুকা নিয়ে। ভাবনার লিখিত রূপ- এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে যে স্পেসিস আছে সেই স্পেসিস এখন আমার সামনে দিয়ে যাচ্ছে। স্পেসিসের নাম পিঁপড়া। রং লাল। (পাছার দিকে কালো।) পাছার ইংরেজি কি? ফান্ডামেন্ট? হুম। ঠিক আছে। এই পিঁপড়ে নিয়ে আমি কতোটুক জানি? পয়েন্ট করে ভাবা যায়। পয়েন্ট নং এক- এটা একটা ইনসেক্ট। এর অর্ডারের নাম হাইমেনোপ্টেরা। ইংরেজি বানান H-Y-M-E-N-O-P-T-E-R-A। বানান শুদ্ধির সম্ভাবনা পঁয়তাল্লিশ পঞ্চাশাংশ। আচ্ছা পঞ্চাশাংশ শব্দটা কেনো ভাবলাম? হুম। মনে পড়েছে। সবসময় সম্ভাবনা শতাংশ হারে প্রকাশ করবার অর্থ কি? হোয়াই হানড্রেড অলওয়েজ? ধর্তব্য বিদ্যা। এই পৃথিবীতে কিছু কিছু জিনিস আমরা ধরে নিয়েছি। হান্ড্রেড পারসেন্ট হচ্ছে এর অংশ। আমাদের সবচেয়ে বড় ধর্তব্য বিষয় হচ্ছে ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট। হোয়াইট মানে হেভেন। ব্ল্যাক মানে এভিল। আচ্ছা আমার শরীর কতোটুক কালো? বেশ কালো? নাকি শ্যামলা? ভালো করে সাবান ঘষে গোসল করিনা কতোদিন হলো? আচ্ছা সাবান দিয়ে গোসল করলে কি আমার শরীর চকচক করবে? আমার মনে হয়না। তবে আমার আম্মির মনে হয়। আম্মির ধারণা আমি ভালো করে গোসল করলে আমাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগবে। আমি কি নিয়ে ভাবছিলাম? ভুলে গেছি। একটু ভাবি। ও, হ্যাঁ। পয়েন্ট করে করে পিঁপড়ে বিষয়ক চিন্তা করছি। পয়েন্ট নং দুই- এরা শরীরের তুলনায় এগারো গুণ ভারী বস্তু উত্তোলন করতে পারে। পয়েন্ট নং তিন- এদের মাঝে বিষাক্ত পদার্থ আছে। পদার্থের নাম আমি জানিনা। আজ জেনে নিবো। পয়েন্ট নং চার- পিঁপড়ে পানির নিচে চব্বিশ ঘণ্টা বাঁচতে পারে। এদের ফুসফুস নেই। পয়েন্ট নং পাঁচ- পৃথিবীতে মোট পিঁপড়ের সংখ্যা সাড়ে সাতশো কোটি×দশ লক্ষ। এর মানে প্রতি মানুষের বিপরীতে আছে দশ লক্ষ পিঁপড়া। আমি পিঁপড়া নিয়ে আর কি জানি? আমার ধারণা আমি আর কিছু জানিনা। আমার সামনে যে পিঁপড়াগুলো যাচ্ছে এদের চলাচলে বিক্ষিপ্তভাব দর্শনীয়। এর পিছনে কারণ হচ্ছে ডিফিউশন। ফ্লোর ওয়েট। তাই এরা গন্ধ শুঁকে সোজাসুজি যেতে পারছেনা। টয়লেটের কলটাতে সমস্যা হয়েছে। পট পট করে পানির ফোঁটা পড়ছে। বদনাতে যে পানিগুলো আছে তার উপর পড়ছে। পড়ে আবার বেরিয়ে আসছে। তারপর আবার মিশে যাচ্ছে। একটা ওয়েভ তৈরি হচ্ছে। এই ওয়েভের নাম স্টেশনারি ওয়েভ। এর সমীকরণ y=A sin 2pi nt। আচ্ছা পানির ফোঁটা জলাধারের পানির সাথে কিভাবে মিশে? বন্ডটা কিভাবে তৈরি হয়? মাথায় আসছেনা। কোনোদিন এটা নিয়ে ভেবেছি? মনে হয়না। প্রমি আপুকে জিজ্ঞেস করতে হবে। এই টপিক্সের নাম কি হওয়া উচিত? হাইড্রো মেকানিজম? নাকি ফ্লুইড ক্যারেক্টারিস্টিক? টয়লেট ভাবনা শেষ।
অনেকদিন বাড়িতে ছিলাম। এই পর্যায়ে বাড়ি নিয়ে অনেক গল্প বলতে পারা উচিত। বলতে পারছিনা। সত্য গল্প বলা আমার জন্য কঠিন। আমি মিথ্যা বলতে পারি। মিথ্যা গল্প লিখে মজাও পাই। এর পেছনে প্রথম কারণ, নিজের মতো করে বলতে পারা। যখন যেই চরিত্রের প্রয়োজন টেনে নিয়ে আসতে পারা। এদিকে সত্য গল্পে থ্রিল থাকেনা। অন্তত আমার লাইফে থাকেনা। এক লাইনে আমার লাইফের সবচেয়ে থ্রিলিং সত্য গল্প অনেকটা এমন- ‘আমি সি,এন,জি তে উঠলাম। ইন দ্যা প্যাসেজ অফ টাইম সন্ধ্যা নেমে আসলো। অন্ধকারে হঠাৎ করে চলন্ত সি,এন,জি উল্টে গেলো। যেদিক দিয়ে সি,এন,জিতে উঠতে হয় সেদিকটা আকাশের দিক হয়ে রইলো। আমি লাফ দিয়ে বেরিয়ে এলাম। সবকিছু ঠিকঠাক আছে বলে মনে হলো।’ সত্য গল্প লিখতে গেলে আমি কেমন যেনো তালগোল পাকিয়ে ফেলি।
আমার দশ মিনিট শেষ।