ইউকে সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
হেডলাইন

নোনা নিরন্তর

এক|
অনেকদিন পর লিখছি। তাই শাস্তিস্বরূপ আমার লিখবার পরিবেশ একটু কঠিন করেছি। কানের মাঝে হেডফোন গুজে দিয়েছি। এখন আমার কানে ফুল ভলিউমে গান বাজছে। গানের নাম হিয়োনাত। অ্যারাবিক গান হওয়াতে গানের অর্থ আমার কাছে মোটামুটি অজানা। তবে বিরহ টাইপের কোনো গান হবে মনে হয়। প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। প্রেমিক ড্রিঙ্কস সার্ভ করতে করতে গাউন পরনে প্রেমিকার সামনে হাজির হয়েছে। এই সময় এই গান চালু হচ্ছে। মজার ব্যাপার।
আচ্ছা এখন আমার কথায় আসি। আমি আজকাল সবকিছুর হিসাবনিকাশ করছি। যেমন, কখনো আমি মোটামুটি খাড়া হয়ে বসে আছি। এই সোজার হিসেব /_ C07 vertebra L05 vertebra= 180’। অর্থাৎ আমার মেরুদন্ড টানটান অবস্থায় আছে। সহজ আনুমানিক হিসাব। গতকাল রাতে আমার পরনে হুডির হাইট, উইডথ, শ্লিভের রেডিয়াস সবকিছু হিসাব করেছি। রাতে যে টিনের ঘরে থাকছি তার থ্রি ডাইমেনশন প্যারামিটার হিসেব করেছি। যে টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করছি তার হাতলের দৈর্ঘ্যও মেপেছি। হাতলের দৈর্ঘ্য দুই ফিট দুই ইঞ্চি। একটু আগে দিঘির দৈর্ঘ্য প্রস্থ মাপলাম। দিঘির দৈর্ঘ্য – পাঁচশত্রিশ মিটার (কদম ধরে। স্কেল- দেড় কদম= এক মিটার)। প্রস্থ- দুশো দশ মিটার (থাম্বস মেথোড)।
এই দিঘিটার গভীরতা মাপার একটা উপায় আছে। চ্যাপ্টা পাথর দিঘির সাথে প্যারালালি ছুড়ে মারা। চ্যাপ্টা পাথর দিঘির সাথে সমান্তরালে ছুড়ে মারলে এটা সারফেইসে বাউন্স খাবে। আমাকে পাথরটা কয়বার বাউন্স খেলো সেটা দেখতে হবে। তার আগে পাথরটাকে ওয়েই করে নিতে হবে। সেই সুযোগ মোটামুটি অসম্ভব। মানুষের ব্রেইনের লেন্থ সেন্সরের তুলনায় ওয়েইং সেন্সর খুব অনুন্নত। যাক গে প্রসেসটা বলি। ম্যাথমেটিকেলি তরলের ভিসকোসিটির সাথে রিলেটিভ ভেলোসিটির একটা অঙ্গাঅঙ্গি সম্পর্ক আছে। এখানে একটা রেশিও নিয়ে কাজ করা হয় যেটা তরলের সর্বনিম্নে শূন্য হয়। এই ইন্সটেনটেনাস চেঞ্জ অফ রেটিং হিসাব করা যায় ভিসকোসিটির প্যারান্যাচারাল কন্ডিশন থেকে। এর সাথে সম্পর্কের দাগ টানা হয় ড্রোওন পয়েন্ট ভেলোসিটি আর অবজেক্ট ওয়েটের। এই পদ্ধতিটা বেশ মজাদার ও ব্যয়বহুল এবং অপ্রচলিত। তবে যে বিজ্ঞানী এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তিনি নিঃসন্দেহে জিনিয়াস। খুবই জিনিয়াস। আমরা অনেকেই তার নাম শুনেছি। খুব কঠিন আর বড় একটা নাম। আমি এখন ছোটছোট শব্দ লিখছি। বড় শব্দ লিখছিনা। অবশ্যি লিখতে মনও করছেনা। ছোট ছোট শব্দ ব্যবহারের পিছনে কারণ বিচিত্র। কয়েকদিন আগে আমার নামে একটা বড় রকমের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। আমি কথা বেশি বলছি। আমাকে কথা বলা কমাতে হবে। যথাস্তু, আমি কথা কমাবার চেষ্টা করছি। কথা কমাবার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে কঠিন আর বড় বড় শব্দ উচ্চারণ না করা। ছোটছোট সহজ শব্দ ব্যবহার করা। যেমন হুম, না, কেনো, ভালো, জঘন্য, হোয়াট! ইত্যাদি। আমি ছোটছোট শব্দে বাকচাহিদা পূরণ করছি। আমার ব্রেইন ব্যাপারটা ক্যাচ করে ফেলছে। সে এখন আমাকে সাহায্য করছে। সাহায্যের নমুনা- সে বড় শব্দের প্রতি উদাসীনতা ধরিয়ে দিচ্ছে। ছোট ছোট শব্দ ব্যবহারের আরেকটা সুবিধা আছে। বাংলা ভাষার কঠিন কঠিন গালিগুলো দেয়া যায়না। এই ভাষার সব গালিই বড় টাইপ শব্দ।

যাই হোক। বলছিলাম দিঘির কথা। এই দিঘির নাম অজানা। দিঘির পানি পরিষ্কার। কাকচক্ষুর সাথে তুলনা করা যাবে এমন ধরনের পরিষ্কার। আকাশে চাঁদ উঠেছে। সেই চাদের প্রতিবিম্ব পানিতে পড়ছে। আমার কাছে পুরো ব্যাপারটা অসম্ভব সুন্দর লাগছে। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য দেখে মনে হচ্ছে যেকোনো সময় এই পানি থেকে জলপরী উঠে আসবে। তারপর বলে বসবে, কেমন আছো?
ভালো আছি।
একা একা বসে আছো কেনো?
জানিনা।
একা একা থেকোনা। আমি বরং তোমাকে একটা গল্প বলি।
না। প্লিজ বলবেনা।
কেনো?
তোমার আঁশঠে লেজ দেখে আমার বমি আসছে। তাই বলবেনা। তুমি বরং ডুবে যাও।

এই পর্যায়ে ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজবে-
পানিততে আইলো জলকুমারি, পানিতে গেলো ডুইবারে।
চন্দনবর্ণা সুন্দরী কুমারী কিছু না গেলো বইলারে।।
(জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে উপন্যাসের আম্বিয়া চরিত্রের গানের অনুকরণে লিখলাম। বাস্তবে জলকুমারির প্রস্থানে আমার মন খারাপের কোনো কারণ নেই।)

আচ্ছা আমার ধারণা লিখতে লিখতে আমি সব গুলিয়ে ফেলছি। আমার উচিত কিছু অঙ্ক করা। আশেপাশে বই নেই। কিছু অঙ্ক মাথা থেকে বের করে সমাধান করার চেষ্টা করা যায়। এই পর্যায়ে অঙ্ক করার চেষ্টা করি।

দুই|
কনট্যুর ইন্টেগ্র্যালসের উপর কয়েকটা অঙ্ক করলাম। কমপ্লেক্স জগতের দারুণ একটা টপিক্স। ছোট ছোট অঙ্ক। অরিয়েন্টেশনের উপর সম্পর্ক করে সমাধান বের করতে হয়। মন খারাপ থাকলে এই অঙ্কগুলো মন ভালো করে। আমার মন ভালো হয়নি। উল্টো শুকিয়ে গেছে। দূর থেকে মাইকের আওয়াজ আসছে- “আপনারা যারা ঘুরাঘুরি করছেন দয়া করে এদিক সেদিক না ঘুরে বসে যান। অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই আপনাদের প্রিয় গানের আসর শুরু হতে যাচ্ছে। প্রথমেই গান গাবেন বাউল শিল্পী আব।” নামটা বুঝতে পারলামনা। কথা শুনা যাচ্ছেনা। শুধু পোঁ পোঁ শব্দ শুনা যাচ্ছে।
আকাশে অনেকদিন তারা দেখিনা। আজ দেখতে পেলে হয়তো মন ভালো হতো। মন জিনিসটা খুলে ফেলে দিতে পারলেও বেশ হতো। যাই হোক, ঠাণ্ডা জেঁকে পড়ছে। হাত জমে যাচ্ছে। আঙ্গুল নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে। আমার ধারণা আর বেশি কিছু লিখতে পারবোনা। আমার কান্না পাচ্ছে। লিখতে মন চাচ্ছে। পারছিনা। গুলিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু এমন হয়ে যাচ্ছে কেনো? এই মুহূর্তে মাইকের আওয়াজ স্পষ্ট হয়েছে। আমি যা শুনতে পাচ্ছি তা হলো, এই মঞ্চ থেকে নাম্। নাম্ হারামজাদা। এই লারা, তুই যেখানেই আসিস তাড়াতাড়ি আস। এই শালা তুই কে? ভাগ্। ভাগ্ কইতাছি।

আচ্ছা হারামজাদা বলে সবকিছুই কি তাড়িয়ে দেয়া যায়না? ভালোবাসা, আবেগ, মমতা, চাহিদা?

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ