
আমি কখনো সুখ চাইনি।
আমি চেয়েছি তোমায়।
তোমায় চেয়েছি বলে খুঁজে ফিরেছি দিগ্বিদিক।
নদীর ধাঁর ঘেষে শতবর্ষী যে বটবৃক্ষ দৃষ্টি কেড়ে নেয়-
তার শীতল আশ্রয়ে নির্লিপ্ত বসে কাটিয়েছি।
ভেবেছি তুমি যদি দেখতে এই রূপ, হাত বুলাতে কি এই ভেজা মৃত্তিকায়?
সর্বক্ষণ কেঁদে ফেরে যে বটছায়ায়?
আমি বুলিয়েছি, তাই বললাম।
প্রমত্ত নদীতে কখনো কখনো ঢেউ হয় খুব।
দু ঢেউয়ের মাঝের শেওলা রঙিন জলে বারিফোঁটা দেখতে খুব দারুণ হয়।
ভেবেছি, তুমি যদি দেখতে এই রূপ, বলতে কি- এতো সুন্দর এই ধরা?
মনে মনে তোমাকে তাই জিজ্ঞেস করেছি বহুবার, তাই বললাম।
সবুজের কান্না কি জিনিস তা তুমি কখনোই দেখোনি।
আমি দেখেছি।
ভেবে রেখেছি তোমাকেও দেখাবো।
দুঃখ জরা ক্লেশ একা দেখতে মন করছেনা।
তাই দেখাবো।
সবুজের কান্না দেখবার সবচেয়ে ভালো সময় প্রবল বর্ষা।
বিকেলে বারিধারা শেষ হয়ে গেলে, নদীর কূল ঘেষে যে সবুজ বিটপীর দীর্ঘ সারি জবুথবু হয়ে থাকে তাদের কাছে যেতে হয়।
চোখ বন্ধ করে বৃক্ষরাজির ভেজা দেহ ছুঁয়ে দেখতে হয়।
মনে মনে বলতে হয়- বলো, কিসের দুঃখ তোমার?
-আমার অনেক দুঃখ। আমি তা বলতে পারবোনা। বলতে মন করছে। তাও পারবোনা।
-কেনো পারবেনা?
-দুর্বলতা প্রকাশ পায় এমন কিছু করতে আমি ভালোবাসিনা।
-তুমি বিশাল গাছ। তোমার কিসের অসারতা?
-কিছুনা।
-তুমি কে বলো তো?
-চোখ খুলো। চোখ খুলে দেখো।
তখন চোখ খুলতে হয়।
চোখ খুললে দেখা যায়,
সবুজের মাঝে এক জোয়ার হতাশা।
তোমাকে জড়িয়ে ধরবার অসম আকুলতা।
তুমি কেমন আছো?
তুমি ভালোই আছো।
আমি কেমন আছি তা বলতে পারছিনা।
কোনোদিন বলতে পেরেছি বলেও তো মনে পড়ছেনা।
যাক গে, তুমি এতো নির্বাক কেনো বলো তো?
তুমি অতীত না ভবিষ্যত?
জানো তোমাকে নিয়ে এক রাশিয়ান দার্শনিক কি লিখেছেন?
আমি বলছি।
তোমাকে দেখতে হলে নাকি পিছন ফিরে চাইতে হয়।
তখন তুমি হেসে বলো, সামনে দেখো। পেছন ফিরে চেওনা। আর চেওনা।
আচ্ছা তুমি কি হেসে হেসেই কথা বলো?
কই? আমার সাথে তো কখনো বলোনা।
আমাকে তোমার পছন্দ হয়না, তাই না?
আচ্ছা পছন্দ না হলে নাই।
আমি তোমাকে পছন্দ করি।
আর তাই বলি, তুমি যখন হাসতে হাসতে কেঁদে ফেলো তখন সেই অশ্রুফোঁটা আমি দেখতে পাই।
তোমার দার্শনিক প্রেমিক দেখতে পায়না।
আমি তোমার কষ্ট বুঝি।
কেউ না হয়েও আমি তোমার দুঃখে কাঁদি।
আর কে কাঁদে?
কেউ না।
হে মম জীবন, তুমি তো আমার।
আর তো কারও না।
ঢাকা/২০ নভেম্বর ২০১৯