
সন্ধ্যা থেকে একটা গল্প লিখছি। কাহিনী প্লট আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছে। এখন পর্যন্ত যেটুকু লিখেছি তাতে দেখা যায়- খুব কড়া নিয়ম কানুন মেনে পরিবারে পুত্রবধুর বিচার হচ্ছে। বিচার করছেন ঘরের সবচেয়ে মুরুব্বীজন ওরফে বধুকন্যার শ্বশুর। পুত্রবধু খুব বুদ্ধিমতি। সে ঠাণ্ডা মেজাজে পুরো বিচারটা ট্যাকেল দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কাহিনী কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা বলতে পারছিনা। শ্বশুর সাহেব মেয়েটাকে খুব পছন্দ করেন এটুকু বলেই গল্পের আবহ আপাতত শেষ করছি। আমার নিজের কিছু গল্প বলতে মন করছে। তাই এই পর্যায়ে আমার কথা বলতে শুরু করলাম।
আমার ধারণা আমার বিয়ে হবে এবং খুব শীঘ্রই হবে। যেই মেয়ের সাথে আমার বিয়ে হবে সে চশমা পড়ে। চশমার পাওয়ার বেশ বেশি। চোখে লাগালে মাথার দুপাশ এক সে,মি করে চেপে যায় এমন টাইপ পাওয়ার। মেয়েটা প্রচুর পড়াশোনা করে। বিয়ের পর আমি ওর এতো পড়াশোনা করার প্রতি বিরক্ত হবো। ও ব্যাপারটা তোয়াক্কা করবেনা। উল্টো লিপিনকট, ডেভিডসনের বই সপ্তাহে দুবার করে খতম করবে।
বিয়ের আগে ছেলেদের বেশ কিছু প্রস্তুতিমূলক কেইস থাকে। আমি সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রস্তুতি নং এক: হাতে মেহেদী পড়ানো শিখছি। সেগুনবাগিচায় এর উপর সপ্তাহে দুদিন করে ক্লাস করছি। প্রতি ক্লাস পঞ্চাশ টাকা। আমার ধারণা দর খুব সস্তা। আমি সস্তা দরে প্রফেশনাল বিদ্যা শিখছি। অনেকেই জানেনা মেহেদির আসল রঙ আনতে হয় বালি ব্যবহার করে। বালিকে গরম করলে সিলিকার একটা কেলাস তৈরি হয়। মেহেদিতে থাকে,,,। না থাক। এ ব্যাপারে আলোচনা করবোনা। এটা বিশেষ বিদ্যা। এই বিশেষ বিদ্যা আমি বিয়ের আগের দিন ব্যবহার করবো। বিয়ের আগের দিন পাত্রীর বাড়িতে গিয়ে পাত্রীর হাতে মেহেদি পড়িয়ে আসবো। অবশ্যি একটা সমস্যা আছে। মেয়েটা খুব বই পড়ুয়া। মোজাফ্ফর চৌধুরী বলেছেন, কাগজ ঘষা হস্তে এই বালি খেলা খেলবেনা। আপাতত মেয়েটার বইগুলোর পাতা প্লাস্টিক দিয়ে মুড়িয়ে দিলে কেমন হয় তা নিয়ে ভাবছি। অবশ্যি এতো মোটা বইয়ে প্লাস্টিক কিভাবে মুড়াবো এটাও চিন্তার ব্যাপার। উপায় নিশ্চয় আছে। ভাবতে হবে। আজকের রাতটা এ নিয়ে ভাববো।
এখন প্রস্তুতি নং দুই নিয়ে বলা যায়। রান্নাবান্না পারিনা। তাই রান্নাবান্না শিখছি। মনে হয় রন্ধন বিষয়ের ছাত্র হিসেবে আমি খুব দুর্বল। গত এক মাসে রান্নার তেমন কিছু শিখতে পারিনি। দুই একটার মাঝে ডিম ভাঙা শিখেছি। আগে ডিম ভাঙতে পারতামনা। দেখা গেলো ডিম ভাঙতে গেলাম। খোসাসহ ডিম পড়ে গেলো। এখন খোসা হাতে থাকছে। ডিমের অ্যালবুমিন কুসুম সব বাটিতে পড়ছে। বলাই বাহুল্য, ডিম দিয়ে একটা রেসিপি শিখেছি। রেসিপির নাম টিখারা ওমলেট। অতি উপাদেয় রেসিপি। এর উৎপত্তি পাকিস্তানের পাঞ্জাবে। রেসিপিতে দুটা ডিমের একটা সিদ্ধ করে নিতে হয়। আরেকটা হাফ পোচ। তারপর সিদ্ধ ডিমের উপর গর্ত করে পোচটা পুরে দিতে হয়। সঙ্গত তারপরের কাহিনী বলা যাচ্ছেনা। বিয়ের দিন সকালে রেসিপিটা রাঁধবো। আমার ধারণা খুব একটা মন্দ হবেনা। ওর ভালো লাগবে।
প্রস্তুতি নং তিন হচ্ছে শপিং। আপুর সাথে বেশ কয়েকদিন শপিং করেছি। দামদর নিয়ে বুঝেছি। অবশ্যি আরও কয়েকবার করতে হবে। এই আরও কয়েকবার কেইসে ফ্যাঁড়কা বাজছে। ও চট্টগ্রাম চলে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম গিয়ে শপিং ক্লাস করবার ইচ্ছে হচ্ছেনা।
গুগল কি একটা সার্ভিস চালু করেছে। দেশ বিদেশের সব খেলাধুলার খবর আসতে থাকে। অটোমেটিক আসতে থাকে। আমি ক্রিকেট খেলা দেখছিনা। বেশ কয়েকমাস যাবৎ এই খেলার প্রতি আমার আগ্রহ পাচ্ছেনা। তাও গুগল আপডেট দিচ্ছে। বাংলাদেশ হেরে যাচ্ছে। এই দুঃখজনক খবর বারবার দিচ্ছে। কেনো? আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির আবেগ বুঝবার ক্ষমতা হয়নি কেনো? বোভাইন ক্রিয়েচার।
আচ্ছা প্রসঙ্গত একটা কথা বলি। অনেক আগে এক মেয়েকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘তুমি সবচেয়ে বেশি কোন জিনিস ভয় পাও?’ মেয়েটা হাসতে হাসতে উত্তর করেছিলো, ‘কষ্ট!’
সত্যিই তো! কষ্ট পাবার আতঙ্কের চেয়ে বড় কোনো আতঙ্ক আছে? আমরা সব চাই। কষ্ট চাইনা। আচ্ছা এই ক্ষুদ্র জীবনে না চাওয়া কষ্ট নামক শব্দটার এতোটাই কি প্রয়োজন ছিলো?
(মূল লেখায় মোজাফ্ফর চৌধুরীকে নিয়ে তেমন কিছু লিখলামনা কেনো বুঝলামনা। যাই হোক, এই ভদ্রলোকের পরিচয় ইনি মেহেদি রঙ বিশারদ। বেশ গুণী লোক। সেগুনবাগিচায় ওনার অফিস। সপ্তাহে দুদিন করে ‘মেহেদি রঙ ও নকশা’ নামক হেডলাইনে ক্লাস নেন। প্রতি ক্লাস অনোনারিয়্যাম পঞ্চাশ টাকা। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ভালো।)