ইউকে সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
হেডলাইন

সাকিব, সংকট, সমাধান………………..

মান্না চৌধুরী: সেল ফোনের কিবোর্ডে হাত আটকে থাকে, অক্ষরগুলো সব যেন হারিয়ে গেছে হাওয়া হয়ে, হৃদয়ের গহীন থেকে বেরিয়ে আসে না আবেগী কোন শব্দ, যা দিয়ে লাইনের পর লাইন সাজিয়ে নেয়া যায়। আসবে কিভাবে? সময়টা যে আমাদের ক্রিকেটের হতাশার, সুখ কেড়ে নেয়া পরম দুঃখের। শুধুই কি আমাদের দুঃখ, হতাশা? এক অর্থে বিচার করলে, বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে কান পাতলেও কি একটা চাপা কান্না শোনা যায় না! সাকিব আল হাসান তো কেবল বাংলাদেশের নয়, তিনি তো বিশ্ব ক্রিকেটেরই সম্পদ। তবে নাম্বার ওয়ানের ঠিকানা যখন ক্রমেই মাথা তুলে দাঁড়ানো বাংলাদেশ, এদেশের আলো, ছায়া, হাওয়ায় যখন তাঁর বেড়ে ওঠা, তাঁর গায়ের জার্সির রঙ যখন লাল-সবুজ তখন তো বাংলাদেশই বেশি ভাসবে আবেগের বণ্যায়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সাকিবে ছোঁয়ে যায় কোটি প্রাণ। এ আসলে স্বার্থহীন এক আবেগী বন্ধন। যে দেশে টাকার নেশায় মানুষ অন্ধ হয়, স্বার্থের জালে আটকে থাকে জাতি, সমাজ সেখানে সাকিবের সাথে এদেশের মানুষের বন্ধনটা দেখুন কি নির্ভেজাল, কি হৃদয়গ্রাহী। আরেকজনও অবশ্য আছেন মানুষের মাঝে। মাশরাফি বিন মুর্তজা। আমাদের ক্রিকেটটা হয়তো অনেকের সম্মিলিত অবদানের ফসল। কিন্তু আর সব ভুলে এখন দুটি মুখই তো মানুষের নয়নজুড়ে। ক্রিকেটের সঙ্গে রাজনীতি মিশিয়ে আর গেল কিছুদিনের ফর্মহীনতা মিলিয়ে ম্যাশের জনপ্রিয়তা আগের জায়গায় নেই। বিশ্বকাপের এক আসর পাগলাটে সাকিবের জীবনই যেন বদলে দিল। অতিমানবীয় কিছু ইনিংস তাঁকে তুলেছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। আসলে মানুষের মন জয় করা কঠিন এক কাজ। সামর্থের সঙ্গে ব্যক্তিগত কিছু হিসেবও কাজ করে এখানে। মাঠ আর মাঠের বাইরের পারফরম্যান্স এক হলেই মানুষের মন পাওয়া যায়, হওয়া যায় সত্যিকারের গ্রেট। যে লড়াইয়ে রোনালদো হেরে যান মেসির কাছে, স্টিভেন স্মিথ হারিয়ে দেন বিরাট কোহলিকে! সাকিবের মাঠ আর মাঠের বাইরের লড়াইটা মিলে না বলে মানুষ সেভাবে আপন করে না বিশ্বসেরাকে। তবে বিশ্বকাপের আগে-পরের সাকিবকে মেলানো কঠিন। দুই সেঞ্চুরি আর পাঁচ ফিফটির কীর্তি তাকে তুলে দেয় মানুষের হৃদয়ে। তবে পাহাড়চূড়ায় উঠেও কেন জানি স্টিয়ারিংটা শক্ত হাতে সামলাতে পারেন না। সেই পুরনো জেদ, পুরনো বিতর্ক নতুন করে উঠে আসে আলোচনায়। দিয়েগো ম্যারাডোনার মতোই যেন উদাসী একজন! আমি চলবো আমার মতো, তুমি কে! যখন নিজেকে নিজে ধরে রাখা জানবেন না, প্রতিষ্ঠানের চেয়ে নিজেকে বড় করে দেখবেন তখন প্রকৃতিও আপনার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এটাই স্বাভাবিক। তাই সময়ের সেরাটা ঢেলে দিয়ে, পেস আর স্পিনের ভয় কাটিয়ে যখন নিজেকে তুলেছেন আরো ওপরে তখন হঠাৎ করেই ঝড় এলো! যে ঝড় আইলা, নার্গিসের চেয়েও ভয়ংকর! শিশিরকে নিয়ে সুখের সময় কাটানো সাকিবের মনের সুখ উড়ে যাওয়া এক ঝড়! শুধু কি সাকিব উড়েছেন এই ঝড়ে, সঙ্গে উড়েছে বাংলার ক্রিকেট আর কোটি মানুষও। আমাদের মনের ঘরে আঘাত করা ঝড়ের ভয়াবহতা কাটিয়ে ওঠা ওত সহজ নয়। সেই ঝড়ের ক্ষত সারাতে হলে নতুন কোন এক সাকিবের দরকার। যে বিপর্যয়ে বাইশ গজে দাঁড়াবে বুক চিতিয়ে, ব্যাটের পর বল হাতে নিয়ে দেখাবে জাদু। মোসাদ্দেক কিংবা মিরাজ কি পারবেন দিল্লীর ফিরোজ শাহ কোটলা কিংবা কলকাতার ইডেন গার্ডেনে সাকিব রুপে জ্বলে উঠতে? প্রশ্নটা সময়ের হাতেই তোলা থাকুক। কিন্তু এখন দেশের ক্রিকেটটাকে বাঁচানোই হলো মূল কাজ। কথা হলো কে বাঁচাবেন? এক ঝড়ে সবকিছুই যে এলোমেলো। খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, সাংবাদিক, দর্শক সবাই যেন বিভক্ত! অভিযোগ, অনুযোগ আর কথা কাটাকাটির খেলায় সংকট আরো গভীর হচ্ছে। ১৩ দফার সংকট তো কেটেছে গণভবনে দৌড়াদৌড়িতে। সাকিবের শাস্তি পরবর্তী সংকটেও কি সেই তাঁকেই এগিয়ে আসতে হবে? ছোট থেকে বড় সবকিছুতেই যে একজনে আশ্রয় খুঁজে বাংলাদেশ। নাকি ক্রিকেটের সংকট ক্রিকেটপাড়ায়ই হবে সমাধান?

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ