
এক
আমি কোথায় আছি তার একটা বর্ণনা দিয়ে নেই। ঢাকা শহরের উত্তর প্রান্তে একটা গ্রাম এলাকা আছে। গ্রাম বললে মনে হয় পুরোপুরি ঠিক বলা হবেনা। মফস্বল টাইপ শহর। শহরের নাম উত্তরা। বলা হচ্ছে খুব দ্রুত এখানে নাকি বিল্ডিং হবে। স্কাইস্ক্র্যাপার হবে, মল হবে। খুব বড় একটা বিমানবন্দর হবে। একেবারে হুলস্থূল কাণ্ড। বনানী, গুলশান, ধানমণ্ডির মতো জায়গা থেকে লোকজন এখানে শিফ্ট করতে থাকবে। যারা শিফ্ট করতে পারবেনা তারা আফসোস করবে- এই কথার কথাগুলো ধরে নিলে আমি এখন একটা হবু হুলস্থূল শহরের রেস্তোরাতে বসে আছি। আমার উপরে খোলা আকাশ। আকাশ মেঘে থমথম করছে। যেকোনো সময় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে এমন অবস্থা বিরাজমান।
আশপাশের জায়গা খুব সুনসান। রেস্তোরার নাম জায়গার সাথে মিল রেখে রাখা হয়েছে নিরিবিলি। আচ্ছা যখন এই জায়গা লোকে লোকারণ্য হয়ে যাবে তখন এই রেস্তোরার নাম কি হবে? কিলিবিলি? রেস্তোরাটার পরিবেশ খুব সুন্দর। দুই বিঘা জমির উপর এরকম সুবিশাল পরিসরের রেস্টুরেন্টে আমি আমার এহেন জনমে আসিনি। অবশ্য খুব বেশি মানুষ এখানে আসেনা ব্যাপারটা বুঝা যাচ্ছে। প্রায় সমস্ত রেস্তোরাটাই ফাঁকা। মানুষজন বলতে দূরে স্কুল বা কলেজ পড়ুয়া চারটা তরুণী দেখতে পাচ্ছি। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে ওরা শুধু শুধু খিলখিল করছে। একটা বয়সে মেয়েরা অকারণে হাসে, অকারণে কাঁদে। ওরা সেই বয়সের তরুণী। খিলখিল করতে করতে একজন আরেকজনের উপর গড়িয়ে পড়ছে- ব্যাপারটা খুব স্বাভাবিক।
রেস্তোরার চারিদিক খাল কাটা হয়েছে। রেস্তোরাতে আসতে হলে খাল পেরিয়ে আসতে হয়। খালের উপর বেইলী ব্রীজ করা আছে। ব্রীজের দুপাশে টব। টবে নানানরকম ফুল। ফুলগুলো বাতাসে দুলছে। ওদের দেখতে অদ্ভুত রকম জীবন্ত লাগছে। মনে হচ্ছে ওরা হাত নেড়ে স্বাগতম জানাচ্ছে। স্থির থাকলে ওদের মৃত লাগতো। এই জগতে কেবল মৃতরাই স্থির হয়। জীবন্তরা হয় চঞ্চল। এরা নড়াচড়ার মধ্যে থাকে। আজকের আবহাওয়া চমৎকার। সারাক্ষণ বাতাস হচ্ছে। এমনও হতে পারে এ জায়গায় সারাক্ষণই বাতাস হয়। এমনই কোনো এক জায়গায় বসে বাতাসের প্রেমে পড়েছিলেন এক বিজ্ঞানী। তিনি পরবর্তীতে আবিষ্কার করলেন এটমোসফেরিক সার্কুলেশন মেথোডলজি। বিজ্ঞানীর নামটা মনে পড়ছেনা। রেস্তোরাটার ছাদ রঙিন টিনের। আশপাশের বেড়া বাশের কঞ্চি দিয়ে করা হয়েছে। মূল আকর্ষণ রেস্তোরার প্রাঙ্গন। এখানে অনেকগুলো টেবিল সুন্দর প্যাটার্নে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দুই টাইপের টেবিল দেখা যাচ্ছে। বড় সাইজ, ছোট সাইজ। বড় সাইজের টেবিলে চারজন বসা যায়। ছোট সাইজের টেবিলে দুজন মুখোমুখি। ইংরেজিতে যাকে বলে, Here in before। আমি বড় টাইপের টেবিলে বসে আছি। আমার পাশের চেয়ারে একটা জাপানী লাগেজ। লাগেজে কি আছে তা আমি বলতে পারছিনা। লাগেজের মালিক রুবিকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা যায়। দুর্ভাগ্যবশত আমি তাও পারছিনা। রুবি আমার সামনের চেয়ারে বসে আছে। বসে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে সিগারেট খাচ্ছে। আমাকে বলা হয়েছে যতোক্ষণ ও সিগারেট খাবে ততোক্ষণ আমি যেনো কোনো কথা না বলি। কোনো রিএকশনও না দেখাই। দেখালে আমাকে হেলে পাঠিয়ে দেয়া হবে। একেবারে ডাইরেক্ট সুইচ টু হেল।
রুবি এখন একটা মাউথওয়াশ বের করছে। ওটা দিয়ে ও মুখ গার্গল করে। তারপর আবার নতুন সিগারেট ধরায়। রুবির ধারণা মুখ গার্গল করে আবার সিগারেট খাওয়ার ফ্লেভারই আলাদা। জীবনে সবার কমপক্ষে আশিবার ট্রাই করা উচিত। এতো সংখ্যা থাকতে আশিবারই কেনো? প্রশ্নটা ওকে একবার করেছিলাম। ও চোখ বড় বড় করে বলেছিলো, ‘অফ যাও।’ যাই হোক, কোথায় আছি টপিক্সের বর্ণনা এখানেই অফ করতে হচ্ছে। রুবি একটা প্রশ্ন করেছে। প্রশ্নটা কি মাথায় নেই। এইমাত্র জিজ্ঞেস করেছে অথচ আমার খেয়াল নেই। এক কান দিয়ে ঢুকে আরেক কান দিয়ে বেরিয়ে গেছে।
‘কি হলো? একেবারে চুপ করে রইলে যে?’
আমি থতমত খেয়ে বললাম, ‘তুমিই তো বললে চুপ করে থাকতে।’
‘নাহ্, প্রথমে ভাবলাম তুমি চুপ করে থাকলেই ভালো হবে। এখন মনে হচ্ছে ভুল ভেবেছিলাম। তুমি কথা বলো। চুপ করে থাকা মানুষ বকবক করা মানুষের চেয়ে ডেঞ্জারাস।’
‘কেনো? ডেঞ্জারাস কেনো?’
‘যারা সারাক্ষণ কথা বলে তাদের মতিগতি ধরা সহজ। যারা চুপ করে থাকে তাদের কিছু আন্দাজ করা যায়না। প্রকৃতি এই ক্ষমতা আমাকে তোমাকে দেয়নি। তাই।’
‘অনেকক্ষণ চুপ করে ছিলাম। এখন হুট করে মাথায় কিছু আসছেনা। কি কথা বলবো?’
‘মিলিয়ন ডলার কোশ্চেন। আচ্ছা তুমি এতোক্ষণ কি ভাবছিলে তাই বলতে থাকো। সিরিয়ালি বলবে। কোনো কাটপ্যাঁচ দিবেনা। নো টপসিটারভি। নো হচপচ। বলো। কি ভাবছিলে বলো।’
আমি ঘাড় নেড়ে বললাম, ‘এখুনি বৃষ্টি নামবে।’
রুবি গার্গল করতে করতে বললো, ‘ও আচ্ছা।’
আমি আবার আমার ভাবনা বলতে শুরু করলাম। খুব গুছিয়ে গুছিয়ে, ‘রুবি এখুনি বৃষ্টি নামবে। একেবারে ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টিটা নামবে হঠাৎ করে। বুঝবার আগেই। বৃষ্টি নামলে আমাদের দ্রুত এখান থেকে সরে পড়তে হবে। এখান থেকে টিন শেইডের দূরত্ব একশো দশ ফিট। থাম্বস দিয়ে মেপেছি। এক্যুরেসি কমবেশি পাঁচ ফিট। প্রতি কদমে আমরা এগুবো দুই ফিট। সেকেন্ডে সাড়ে তিন ফিট। ইটের উপরের অংশে স্পিড বেড়ে হবে চার ফিট আট ইঞ্চি। এই হিসাবে আমাদের ওখানে পৌঁছতে সময় লাগবে সাতাশ সেকেন্ড। এরই মাঝে দেখা যাবে তুমি তোমার মাউথ ওয়াশ এই টেবিলে ফেলে রেখে চলে এসেছো। অতএব তুমি আবার এদিকে ছুটবে। মাউথ ওয়াশ নিবে। ততোক্ষণে আমরা পুরোপুরি ভিজে যাবো। আমি তখন বলবো, ভিজেই তো গেলাম। চলো ভালোমতো ভিজি। তুমি তখন আমাকে ঝারি মারবে। কিভাবে মারবে তা ঠিক বলতে পারছিনা। হয়তো বলবে, “তোমার কি মাথায় কিছু নেই? আমি এনসিয়েন্ট। ইউ সুইচ টু হেল।” এরপর আমি আর ভাবতে পারিনি। তুমি বলে উঠলে, চুপ করে আছো কেনো? না সরি। বললে, একেবারে চুপ করে রইলে যে?’
‘তুমি কি আমার উপর বিরক্ত?’
‘না। বিরক্ত না।’
‘ও। সিগারেট ধরাবে?’
‘না।’
‘আমার ধারণা তুমি এতোক্ষণ যা বললে সব বানিয়ে বানিয়ে বললে। তুমি আসলে ভাবছিলে অন্যকিছু। যেটা আমাকে বলতে চাচ্ছোনা। আমি কি ঠিক বলছি?’
‘হুম।’
‘দেখো রবিন, প্রথম কথা আমি সিগারেটটা ছাড়তে পারছিনা, এজন্য আমি রিয়্যালি সরি। দ্বিতীয় কথা আমার পেটে তোমার সন্তান আছে। সে ভালো আছে- এরকম ধারণা আমি এখন আর করিনা। আমার ডেল্যুশন কেটে গেছে। আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ্য মানুষ। গতমাস থেকে ডিউটিও করছি। আমি যে কাজ করি সে কাজ মানসিক ভারসাম্যহীন কোনো মানুষের পক্ষে করা সম্ভব না। ইউ শুড গেট ইট।’
‘ঠিক আছে।’
রুবি নরম স্বরে বললো, ‘ভেরী গুড। আচ্ছা তুমি কি জানো এই মাউথ ওয়াশটা খুব জোস? গার্গল করতে করতে কয়েকবার খেয়ে ফেলেছি। খেয়াল করেছো?’
‘না।’
‘হুম। ভালো করেছো। শুনো আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যেহেতু এখন আমি মানসিকভাবে সুস্থ্য তাই তোমার এই অপারেশনটা আমিই করবো। তোমার স্ত্রী হিসেবে এই কাজটুকু আমারই করা উচিত। তোমার কি এতে কোনো আপত্তি আছে?’
‘না।’
‘রবিন, তুমি ফুলগাছের দিক তাকিয়ে কথা বলবেনা। নো মোর টক লুকিং এট ফ্লাওয়ারস। ফুল তোমাকে কিছু বলছেনা। নাথিং ইটস সেয়িং। আমি বলছি। তুমি আমার দিকে তাকাও।’
আমি রুবির দিকে তাকালাম। রুবির চেহারা দেখে মনে হচ্ছে ও এখন সিরিয়াস কিছু বলবে। ফোঁস ফোঁস করে বলবে। ফোঁস ফোঁস করে কথা বলার একটা সুন্দর ইংরেজি আছে। মনে আসছেনা। ইয়েঙ্কি স্পীচ না কি যেনো। যাই হোক, আমার ধারণা রুবি এখন ঐ স্পীচ দিবে।
‘রবিন তুমি খুব সত্যি করে বলো তো আমার উপর তোমার আস্থা আছে? আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে আমার উপর তোমার আস্থা নেই। আচ্ছা আমাকে তোমার এখন বিশ্বাস হয়না? তাই না? কি হলো? উত্তর দাও। আমাকে বিশ্বাস হয়?’
স্ত্রী লোকের এই টাইপ প্রশ্নের উত্তর চোখের দিকে তাকিয়ে আশ্বস্ত করবার ভঙ্গিতে বলতে হয়। মিথ্যা হলেও যেনো অতি সত্য কথা এমন করে বলতে হয়। আমি সেভাবে বললাম, ‘হুম।’ এর অর্থ তোমাকে বিশ্বাস হয়।
খুব লাভ হলোনা। রুবি ঝাঝালো গলায় বললো, ‘শুধু হু না করছো কেনো? কথা বলতে পারছোনা?’
আমি বললাম, ‘পারছি।’
‘আচ্ছা। এখন উঠবো। চলো।’
আমাদের গাড়ি শো শো করে চলছে। আমার ধারণা এই এলাকায় সবকিছুই শো শো করে হয়। এখানকার কাশফুলগুলো কাঁদে। কান্নাগুলোর আওয়াজও শো শো করে হয়। কাশফুলের কান্নার ব্যাপার আজ বলবোনা।
দুই
রবিন,
এক- সকাল আটটা( তোমার ওখানে রাত নয়টা)।
দুই- ইউনিভার্সিটির ফেলোশীপ পেয়েছি গতকাল। শুনে খুশি হয়েছো খুব তাই না?
তিন- সকাল থেকে জ্বর এসেছে। বমি বমি লাগছে। হাত কাঁপছে। লিখতে কষ্ট হচ্ছে। শুনে কষ্ট পাচ্ছো তাই না?
চার- ফেলোশীপ নিচ্ছিনা। দেশে চলে আসছি। খুব শীঘ্রই আসছি। অবাক হচ্ছো তাই না?
পাঁচ- সিগারেট খাচ্ছিনা। গত সপ্তাহ থেকে পণ করেছি আর সিগারেট খাবোনা। এখন পর্যন্ত খাইনি। কতোদিন না খেয়ে থাকতে পারবো বলতে পারছিনা। তবে আগামী দেড় বছর খাবোনা। এই ব্যাপারে তোমাকে নিশ্চিত করতে পারি।
ছয়- বলতে লজ্জা লাগছে। শুনো রবিন, তুমি আবার বাবা হচ্ছো। এবার আমি সিরিয়াস। দেখো কোনো সমস্যা হবেনা। কিছুদিন পর তোমাকে এই পৃথিবীর একটা প্রাণী আব্বু আব্বু বলে ডাকবে। কি মজা! একবার ভেবে দেখো! আমার ধারণা আসবার আগের রাতেই ব্যাপারটা হয়েছে। বুঝলে?
মোটামুটি জরুরী সব খবর তোমাকে দিয়ে ফেলেছি।এখন আমি ফ্রিলি কিছু লিখতে পারবো। রবিন, কলসিসটেকটমি সার্জারিটা খুব সাধারণ। ল্যাপারোসকোপিক সার্জারি। পেটে চারটা ইনসিসন করা হয়। ইনসিসন দিয়ে ডাক্ট ঢুকানো হয়। এদের একটাতে ক্যামেরা লাগানো থাকে। বাকি তিনটা দিয়ে গলব্লাডার কেটে আনা হয়। সবকিছুই উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে করা হয়। ভয়ের কিছু নেই। আচ্ছা এই চারটা ইনসিসনের মধ্যে কোনটা বেশি জরুরি বলতে পারবে? ক্যামেরাওয়ালাটা নাকি বাকি তিনটা? চিঠিতে বলবে। লাইনটা লাল মার্ক করে রাখো। অপারেশনের সময় তোমাকে জেনারেল এনেসথেসিয়া দেয়া হবে। তুমি ব্যাপারটা আগেও দেখেছো। প্রপোফল, এফিড্রিন, ফেনটানাইল এগুলো ব্যবহার করা হবে। সেভোফ্লুরেন গ্যাস নিয়ে তোমার জানাশোনা আছে।
এখন আসল কথা বলি। রবিন তোমার অপারেশনটা হবে ওপেন কলসিসটেকটমি। কারণ কিডনী ট্রান্সপ্লান্টের সময় তোমার সিজার হয়েছে। আমরা ডাক্তাররা তাই তোমার ওপেন সিজার করবো। আমি খুব শীঘ্রই আসছি রবিন। ভয় পেয়োনা।
ও হ্যাঁ রবিন, তোমার অপারেশনটা ফাইন্যালি আমি করছিনা। তুমি তোমার স্ত্রীর উপর বিশ্বাস রাখতে পারছোনা সেজন্য করছিনা, ব্যাপারটা তা না। আমি এখন এনসিয়্যান্ট। সত্যি সত্যি এনসিয়্যান্ট। তাই অপারেশনের দায়ভার থেকে সরে আসলাম। আমার স্যার আব্দুল জব্বারের সাথে আমার কথা হয়েছে। অপারেশনটা স্যার করবেন। অপারেশনের আগে তোমার কিডনীর অবস্থাটা জানা দরকার। টেস্ট করে নিতে পারবেনা? আমি আসার পর করালেও চলবে। থাক। তুমি ঘরে বসে থাকো। টেস্টের দরকার নেই। আর খবরদার ক্লাস নিতে যাবেনা। তোমার ছাত্রছাত্রীদের সাথে আমি নিয়মিত যোগাযোগ করি। মনে করবেনা ইউ আর আউট অফ মাই অবজার্ভেশন। আরও কি কি যেনো বলবো মনে আসছেনা। মনে আসা পর্যন্ত সাবোরডিনেট কথা বলি। শুনো গলব্লাডারে স্টোন হলে তাকে বলে কলোলিথিয়াসিস। যদি ডাক্টে হয় তখন এর নাম হয় কলোডকোলিথিয়াসিস। প্যানক্রিসে ইনফ্লেমেশন হলেও কলোসিসটেকটমি করা হয়। তখন একে বলে প্যানক্রিয়েটিস। মজার কথা তোমার এসব কিছু হয়নি। তোমার হয়েছে পলিপস। নাকের পলিপসের কথা শুনেছো। গল পলিপস শুনেছো? তুমি ম্যাথের মানুষ। এতো জেনেশুনে কি করবে? তোমার ম্যাথের তেমন কিছু তো আমি জানিনা, পারিনা। আমাদের দুজনের জানবার বিষয় আলাদা। অবশ্য আমেরিকতে এসে আমি কন্সটেলেশনের মজার মজার কিছু ম্যাথ দেখেছি। তুমি ম্যাথের মতো মজাদার কিছু হলেও হতো। তুমি তাও না। তোমার স্বভাব সংস্কৃতির মতো। এজন্য আমি হতাশ।
প্রিন্সিপ্যাল টপিক্সের কথা মাথায় এসেছে। এখন বলি। রবিন, তোমাকে আমি একটা মিথ্যা বলেছিলাম। তুমি জেনে এসেছো তোমার শরীরে মৃত মানুষের একটা কিডনী ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়েছে। আসলে কথাটা ভুল। তোমার শরীরে আমার কিডনী রবিন। ঐ রাতে যখন কোনো কিডনী পাচ্ছিলামনা তখন বাধ্য হয়ে আমিই তোমাকে কিডনী দিয়েছিলাম। নিজেদের সন্তানের বিনিময়ে তোমাকে কিডনী দিয়ে আমি কি অনেক বড় ভুল করেছি? আচ্ছা ভুল করে থাকলে ক্ষমা করে দিও। রবিন, আমার শরীরে যে কিডনীটা আছে ইদানীং তার এফিসিয়েন্সি কমে যাচ্ছে। অদ্ভুত কারণে কমে যাচ্ছে। ক্রনিক কেইস। আমার ধারণা কি জানো? আমার ধারণা আমি জলদি মারা যাবো। তবে তোমাকে একটা সন্তান উপহার দেবার মতো সময় আমার হাতে আছে। এজন্য আমি খুশি। খুব খুশি।
আমি চলে আসছি। খুব শীঘ্রই আসছি। কোনো ডেইট বলছিনা। বলতে চাচ্ছিনা। তুমি বাসাতেই থেকো। এসে কথা হবে। অনেক কথা হবে। আর শুনো, তুমি মন খারাপ করবেনা। একদম মন খারাপ করবেনা।।
ইতি,
তোমার রুবি
ইতি লিখেই চিঠি শেষ করতে হবে এমন কোনো নিয়ম কোথায় আছে? বলতে ভুলে গেছি। তাই আবার লিখছি। শুনো রবিন, আমি তোমাকে ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি।
ঢাকা, বাংলাদেশ
২৫ অক্টোবর ২০১৯