
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার পদ হারানোর পরপরই আলোচনায় এসেছেন যু্বলীগের কয়েকজন নেতা। এছাড়া অন্য সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতার বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও কমিশন–বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। আর এসব বিষয় নিয়ে গত শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা মহানগর যুবলীগের কয়েকজন নেতার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বৈঠক–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার নানা অপকর্মের পাশাপাশি দলের আরেক সহযোগী সংগঠন যুবলীগের ঢাকা মহানগরের কোনো কোনো নেতার অপকর্মের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, যুবলীগের কোনো কোনো নেতা চাঁদাবাজির টাকা হালাল করার জন্য নানা কর্মসূচি পালন করেন। একজন নেতা অস্ত্র উঁচিয়ে মহড়া দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য বাইরে জানাজানি হওয়ার পর ছাত্রলীগের পর এখন আলোচনায় আছে যুবলীগ। সংগঠনের কার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পরে, তা নিয়েও নানামুখী আলোচনা আছে।
এর আগে চাঁদার জন্য গত বছর দাতব্য প্রতিষ্ঠান আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের ভবন নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়ায় ঢাকা মহানগর যুবলীগের একজন প্রভাবশালী নেতার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সহযোগী সংগঠনের অনেকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগ আছে। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় ক্ষোভ।
কিছুদিন ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজ থেকে কমিশন দাবি, টাকার বিনিময়ে কমিটিতে পদ দেওয়া, অবৈধভাবে ক্ষমতা প্রদর্শনসহ ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সামনে আসে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে পদ থেকে বাদ দেওয়ার ঘোষণা আসে।
যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমি কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে যৌক্তিক কারণে অনুপস্থিত ছিলাম। কাজেই সেখানে কী আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়টি আমি অবগত নই।
তিনি আরও বলেন, যুবলীগের কোনো নেতার কর্মকাণ্ডে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হলে তিনি বিষয়টি নিশ্চয়ই তাঁকে অবহিত করবেন এবং তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী সংগঠন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তিনি কোনো নির্দেশনা পাননি।
ওমর ফারুক বলেন, দু–একটি অনলাইন পত্রিকায় এ বিষয়ে প্রকাশিত খবরের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, ওই সব খবরের ভিত্তিতে তিনি মন্তব্য করতে চান না।যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১২ সালের ১৪ জুলাই। সম্মেলনে ওমর ফারুক চৌধুরী চেয়ারম্যান ও হারুনুর রশীদ সাধারণ সম্পাদক হন। এরপর যুবলীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের আলাদা কমিটি গঠন করা হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেবল ছাত্রলীগ–যুবলীগ নয়, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ রয়েছে। প্রায় ২০০ নেতার বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার অভিযোগ জমা পড়েছে। ৬০ জন মন্ত্রী-সাংসদের বিরুদ্ধে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের অনেক নেতার ‘পা মাটিতে নেই’ অবস্থা। ফেনীতে মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার পর দায়ী অধ্যক্ষকে রক্ষার চেষ্টা, বরগুনায় নয়ন বন্ডের মতো সন্ত্রাসী তৈরি করা এবং নিজ দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বিদ্রোহী হওয়া—সবই করছেন দলের নেতারা। চাঁদাবাজি, টেন্ডার বা কমিশন–বাণিজ্যের অভিযোগ তো রয়েছেই।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের সবার প্রতি দলীয় প্রধানের পরিষ্কার বার্তা হচ্ছে, কারও অনৈতিক ও অপকর্মের দায় দল নেবে না। কারও কোনো অপকর্মের বিষয় এলে ছাড় দেওয়া হবে না। দলের কারও আচরণ যাতে কোনো মানুষের কষ্টের কারণ না হয়, সে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।