
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকে সরকার এই দেশকে একটা পরনির্ভরশীল দেশে পরিণত করতে যাচ্ছে। আপনারা শুনেছেন, আজকে আমাদের দেশে শিক্ষিত যুবকেরা চাকুরি পায় না, কর্মসংস্থান নিচের দিকে নামছে। একদিকে উন্নয়নের কথা বলে, অন্যদিকে আমাদের ছেলেদের চাকুরি নেই।
অথচ একই সময়ে আজকে ভারত থেকে কর্মীরা এসে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, বাংলাদেশের বর্তমান যে সরকার ক্ষমতা দখল করে আছে ,তারা প্রকৃতপক্ষে জনগণের সরকার নয়। এরা একটা পুতুল সরকারে পরিণত হয়েছে।’
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনের লেডিস ক্লাবে বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের ‘কেন্দ্রীয় সম্মেলন-২০১৯’ এ তিনি এসব কথা বলেন। দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও একগুচ্ছ বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা সবসময়ই উন্নয়নের একটা ঢোল বাজাচ্ছেন। সোমবারও চীন সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন বলেছেন, উন্নয়ন পেতে হলে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি মেনে নিতে হবে। অর্থাৎ মূল্য দিতে হবে। অবশ্যই আমরা জানি, উন্নয়নের একটা মূল্য দিতে হয়। সেই মূল্য দিতে হয় কার জন্য? সেই মূল্যটা দিতে হবে সাধারণ মানুষের উন্নয়নের জন্য।
‘আমরা ভালোভাবে দেখছি আজকে যে উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে, সে টাকা জনগণের পকেট থেকে বের করে নেয়া হচ্ছে। উন্নয়নের নামে ক্ষমতাসীন দলের গুটিকতক মানুষের সুবিধার জন্যই গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে কেন? এই গ্যাসের মূল্য এলএনজি আমদানি করে তার ভর্তুকি দেয়ার জন্য। এই এলএনজি কারা আমদানি করছেন? আজকে এই সরকারের সঙ্গে যারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত, যারা মন্ত্রী অথবা উপদেষ্টা অথবা তাদের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন, তাদের জন্যই আজকে বাড়তি যে খরচ, বাড়তি যে ব্যয় জনগণকে করতে হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে সরকার কোনো নির্বাচিত সরকার নয়। তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। এই সংসদ নির্বাচিত হতে পারেনি। কারণ তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। রাষ্ট্রের সমস্ত যন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে।
‘এদের কোনো জনগনের কাছে দায়বদ্ধতা নেই। তাই গ্যাসের দাম বাড়লেই বা কি বা ভ্যাটের পরিমাণ বা ইনকাম ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়লেই বা কী?’ তিনি বলেন, এরা জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে অবস্থান নিয়েছে। তাদের একটি মাত্র লক্ষ্য যেটি হচ্ছে- তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সেজন্য গত এক দশক ধরে সমস্ত আয়োজনগুলোকে সেভাবে সম্পন্ন করেছে।
সরকার দেশে একদলীয় শাসন চালাচ্ছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরে ক্রমান্বয়ে অত্যন্ত সুচতুরভাবে পরিকল্পিতভাবে তারা সংবিধান পরিবর্তন করেছে। বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের পরে তারা এই কাজটি শুরু করেছে।
‘আজকে এমন একটা জায়গায় সংবিধানকে নিয়ে এসছে যে, কাটাছেঁড়া করে সেখানে গণতন্ত্রের কথা মুখে বলা হয়; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোথাও গণতন্ত্র নেই। রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। আজকে বিচার বিভাগের কোনো স্বাধীনতা নেই। এই বিচার বিভাগ এমন একটা পর্যায় গিয়ে পৌঁছেছে, যেখানে সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিচারের হুকুম বা রায় দিতে হয়।
‘পাবনায় দেখেছেন আপনারা। সেখানে ৯৪ সালে বিরোধী দলের নেত্রীর ওপরে রেলে যে হামলা হয়েছিল, তাতে কোনো হতাহত হয়নি। আমরা সবসময় যেকোনো হামলা, যে কোনো সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু যেখানে কোনো হতাহতই হয়নি এবং তিন বছর পরে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। আজকে ২৫ বছর পরে সেই মামলার রায় দিতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে ৯ জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে।’
ফখরুল বলেন, যেখানে কোনো মৃত্যুই হয়নি। ২৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড। এই হচ্ছে বিচার বিভাগের অবস্থা। খালেদা জিয়ার মামলাগুলোর দিকে তাকালে আপনারা দেখতে পারবেন, সেগুলো সম্পূর্ণভাবে সাজানো মামলা। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে এবং সেটাকে বাড়িয়ে আবার ৫ বছর থেকে ৭/১০ বছর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এসব মামলায় খালেদা জিয়া জামিন পাওয়ার যোগ্য, অথচ তিনি জামিন পাচ্ছেন না। একই ধরনের মামলায় সবাই জামিন পাচ্ছেন, কিন্তু দেশনেত্রী জামিন পাচ্ছেন না। তার বিরুদ্ধে ৩৬টি মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
ফখরুল বলেন, এমনও মামলায় আছে যে, একই সময়ে তিনটি থানায় গিয়ে বোমা মেরেছেন। এগুলো দিয়ে একটা জিনিসই প্রমাণিত হয় যে, তারা খালেদা জিয়াকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। কারণ তারা জানে যে, তিনি গণতন্ত্রের প্রতীক, তিনি যদি বেরিয়ে আসেন, জনগণকে নিয়ে চলতে থাকেন, তাহলে কোনোভাবে তাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না এবং তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। সেজন্য তাকে বেআইনিভাবে ১৬/১৭ মাস আটক করে রাখা হয়েছে।
বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগনকে জাগিয়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য জনগণের ঐক্যের খুব প্রয়োজন। আমাদেরকে জনগণের মধ্যে চলে যেতে হবে, তাদের সংগঠিত করতে হবে। দলমতনির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে, যারা আজকে দেশের স্বাধীনতা-সারভৌমত্বকে বিনষ্ট করছে, যারা আজকে গণতন্ত্রকে ধবংস করছে তাদেরকে পরাজিত করে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া হচ্ছেন গণতন্ত্রের প্রতীক। তাকে মুক্ত করতে হবে। তিনি মুক্ত হলেই শুধু গণতন্ত্র মুক্তি পাবে। তাই আমরা বলছি, এই সংসদ বাতিল করতে হবে এবং একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে। তাহলেই জনগণের সংসদ ও সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।
এর আগে দুপুরে ড্যাবের বার্ষিক সাধারণ সভা হয়। পরে সম্মেলনে ড্যাবের নতুন নির্বাচিত সভাপতি হারুন আল রশিদ, মহাসচিব আব্দুস সালাম, সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সেলিম, কোষাধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম শাকিল ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মেহেদী হাসানের নাম ঘোষণা করা হয়। গত ২৫ মে কাউন্সিলরদের ভোটে এই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। এই কাউন্সিলের মাধ্যমে ড্যাবে যে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিলো তার বিলুপ্তি হল।
ড্যাবের আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ওবায়দুল কবির খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ড্যাবের নেতা অধ্যাপক রফিকুল কবির লাবু, অধ্যাপক মোস্তাক রহিম স্বপন, একেএম মহিউদ্দিন ভুঁইয়া মাসুম, নবনির্বাচিত সভাপতি হারুন আল রশীদ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সেলিম, কোষাধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম শাকিল, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মেহেদী হাসান প্রমুখ।