ইউকে রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
হেডলাইন

শত ফুল ফুটুক

পুলিশের বাধার মুখে মনজু’র সফল সংবাদ সম্মেলন
মনজু কী ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছেন?‎

ফরীদ আহমদ রেজা: জামায়াতে ইসলামী থেকে বহিস্কৃত এবং ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রিয় সভাপতি মজিবুর রহমান মনজু নতুন ‎দল গঠনের প্রস্তুতি হিসেবে সাংবাদিক সম্মেলন সম্পন্ন করেছেন। এটা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা এবং আজে-বাজে ‎মন্তব্য ফেইসবুক ও পত্রপত্রিকায় আসছে। আজে-বাজে মন্তব্য যারা করছেন তাদের মধ্যে ইসলামপন্থীদের ‎সংখ্যা প্রচুর। বাজে কথা তাদের জন্যেই তুলে রাখা ভালো যারা তা বলছেন। মনজুর বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট, ‎তারা জামায়াতের সংস্কার করছেন না, বরং নতুন একটি দল গঠন করতে যাচ্ছেন।

মনজু’র উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রধানত তিনটি কথা আসছে। ‎
এক. তিনি সরকারের এজেন্ট। ‎
দুই. তার উদ্যোগ জামায়াতের নতুন কৌশল ‎
তিন. আদর্শ ভিত্তিক রাজনীতি বাদ দিয়ে ইসলামের বাইরে চলে গেছেন।

প্রথম দুটো অভিযোগের পক্ষে কোন প্রমাণ নেই, শুধুই অনুমান। যে কেউ যে কোন অনুমান করতে পারেন। ‎অনুমান সত্য, মিথ্যা এবং আংশিক সত্য-মিথ্যাও হতে পারে। অনুমানকে যাচাই করার সুযোগ নেই।

মজিবুর রহমান মনজুর সাংবাদিক সম্মেলনের বহু বিবরণ প্রকাশিত হলেও সাংবাদিক সম্মেলনের প্রাক্কালে ‎তাকে পুলিশ আটকে দিয়েছিল সে খবর কিন্তু কোথাও প্রকাশিত হয়নি। আমি শুনেছি, পুলিশ তাকে বিল্ডিং-এর ‎এক ফ্লোরে আটকে রেখে বলেছিল, তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারবেন না। তখন তিনি কারো সাথে ‎যোগাযোগ না করে কৌশলে ফেইস বুকে এ ব্যাপারে একটি স্ট্যাটাস দেন। পুলিশকে বলেন, আমাকে ‎কমপক্ষে সাংবাদিকদের এ কথা বলার সুযোগ দেন যে আপনারা আমাকে সাংবাদিক সম্মেলন করতে দিচ্ছেন ‎না। এরপর পুলিশ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগোযোগ করে। কিছুক্ষণ পর তাকে সম্মেলনস্থলে যাওয়ার ‎অনুমতি দিয়ে বলে দেয়, ভবিষ্যতে এ রকম কিছু করতে হলে তিনি যেন পুলিশকে পূর্বাহ্নে অবহিত করেন ‎এবং যা বলবেন এর কপি তাদেরকে দেন। এ ঘটনা থেকে কি প্রমাণিত হয়? আসলে তিনি সরকারের এজেন্ট ‎হলে পুলিশকে সরকার আগেই এ ব্যাপারে অবহিত করে রাখতে। ‎

মজিবুর রহমান মনজু তাঁর উদ্যোগ শুরু করার পর থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীর পক্ষ থেকে এর ‎বিরুদ্ধে নানা প্রকার বিরূপ মন্তব্য আসছে। হেন কোন কথা নেই যা তাঁর বিরুদ্ধে বলা হয়নি। জামায়াতের ‎দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে নিছক তাদের সাথে যোগাযোগ সীমাবদ্ধ থাকেনি যারা তাঁর সাথে যোগ দেয়ার ‎সম্ভাবনা রয়েছে। জামায়াত দেশ-বিদেশে নিজের সকল জনশক্তির কাছে এর বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। ‎সর্বশক্তি দিয়ে এ উদ্যোগ বন্ধ করার চেষ্টা করেছে। শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলন বন্ধের চেষ্টা করেছে। ‎জামায়াতের শীর্ষ দায়িত্বশীলদের এ উদ্দেশ্যে বিদেশ সফর এবং মনজুর উদ্যোগের বিরুদ্ধে জামায়াতের ‎জনশক্তির বিরূপ মন্তব্যগুলোও প্রনিধানযোগ্য। ‎

একদল লোক মনজুকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দিচ্ছেন। মনে হচ্ছে, কোন ব্যক্তি একটি ইসলামী সংগঠন ‎ত্যাগ করলে বা ইসলামী রাজনীতি না করলেই ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়। এটা একটা ভ্রান্ত এবং ‎মারাত্মক ক্ষতিকর চিন্তাধারা। অবশ্য এ ধরণের প্রবণতা ইসলামের প্রাথমিক যুগেই দেখা গেছে। রাজনৈতিক ‎মতপার্থক্যকে তারা ভুল ধর্মীয় মতবাদ দিয়ে প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করেছে। ‎
ইসলামে রাজনীতি আছে ঠিক। কিন্তু সবাইকে রাজনীতি করতে হবে এমন কোন কথা নয়। মুসলিম বিশ্বের ‎কোটি কোটি লোক কোন ইসলামী দলের সাথে যুক্ত নয়। তারা কী ইসলামের বাইরে? না, তারা সবাই মুসলিম ‎উম্মাহর অন্তর্গত এবং মুসলিম জামাতের সদস্য। তারা কেউ ইসলামের বাইরে নয়। ‎

মনজু সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, কোন নির্দিষ্ট আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। এ ‎কারণে অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, আদর্শ নেই এটা কেমন কথা? কিন্তু সাথে সাথে তিনি মুক্তিযুদ্ধের তিন ‎মূলনীতি সাম্য , মানবিক মর্যাদা , সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘কোন তত্ত্ব বা মতবাদ ‎প্রতিষ্ঠা নয়। আমরা অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করতে চাই। নাগরিক অধিকার ও কল্যানরাষ্ট্র গঠনের ‎অঙ্গীকারই আমাদের আদর্শ।’ এর মানে তারা আদর্শহীন নয় এবং তাদের আদর্শ হচ্ছে জনকল্যণ। সত্যিকার ‎অর্থে রাজনীতির মূল কথা ক্ষমতা দখল নয়, জনগণের কল্যাণ সাধন। রাজনীতি একটি সেকুলার বা ‎ইহলৌকিক বিষয়, জাগতিক কল্যাণ সাধন এর লক্ষ্য। এ রকম রাজনীতির কপালে ইসলামের সাইনবোর্ড না ‎থাকলেও এটা ইসলামী রাজনীতি, সহজ এ কথাটা কিছু লোকের মাথায় কিছুতেই আসে না। তারা সবকিছুতে ‎সাইনবোর্ড চায়।

সংবাদ সম্মেলনে মজিবুর রহমান মনজুর লিখিত বক্তব্য পুরোটা আমি শুনেছি। সেখানে তিনি যথার্থভাবে ধর্ম-বর্ণ ‎নির্বিশেষে সকল মানুষের কথা বলেছেন। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে সকল মানুষের সেবা ও নিরাপত্তা বিধান। কে ‎ধার্মিক আর কে নাস্তিক সেটা বিবেচনা করে যারা সেবা দিতে চায় তারা বড় অধার্মিক। ‎

মনজু যা বলেছেন তা তারা করতে পারলে অবশ্যই সেটা বাংলাদেশের জন্যে কল্যাণকর হবে। তবে তিনি সফল হবেন না ‎ব্যর্থ হবেন সে ভবিষ্যতবানী করার সময় এখনো আসেনি। যে সন্তান এখনো ভূমিষ্ঠ হয়নি তাকে নিয়ে ‎জোতিষিগণ ভবিষ্যতবানী করলেও আমার পক্ষে তা করা সম্ভব নয়। ‎

আমি চাই, শত ফুল ফুটুক। ‎

লন্ডন ২৮ এপ্রিল ২০১৯

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

‘মুক্তমত’ বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব। ‘ইউকে বাংলা অনলাইন ডট কম’ সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে ‘মুক্তমত’ বিভাগে প্রকাশিত লেখার দায় ‘ইউকে বাংলা অনলাইন ডট কম’ এর নয়। - সম্পাদক

সর্বশেষ সংবাদ