
পুলিশের বাধার মুখে মনজু’র সফল সংবাদ সম্মেলন
মনজু কী ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছেন?
ফরীদ আহমদ রেজা: জামায়াতে ইসলামী থেকে বহিস্কৃত এবং ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রিয় সভাপতি মজিবুর রহমান মনজু নতুন দল গঠনের প্রস্তুতি হিসেবে সাংবাদিক সম্মেলন সম্পন্ন করেছেন। এটা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা এবং আজে-বাজে মন্তব্য ফেইসবুক ও পত্রপত্রিকায় আসছে। আজে-বাজে মন্তব্য যারা করছেন তাদের মধ্যে ইসলামপন্থীদের সংখ্যা প্রচুর। বাজে কথা তাদের জন্যেই তুলে রাখা ভালো যারা তা বলছেন। মনজুর বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট, তারা জামায়াতের সংস্কার করছেন না, বরং নতুন একটি দল গঠন করতে যাচ্ছেন।
মনজু’র উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রধানত তিনটি কথা আসছে।
এক. তিনি সরকারের এজেন্ট।
দুই. তার উদ্যোগ জামায়াতের নতুন কৌশল
তিন. আদর্শ ভিত্তিক রাজনীতি বাদ দিয়ে ইসলামের বাইরে চলে গেছেন।
প্রথম দুটো অভিযোগের পক্ষে কোন প্রমাণ নেই, শুধুই অনুমান। যে কেউ যে কোন অনুমান করতে পারেন। অনুমান সত্য, মিথ্যা এবং আংশিক সত্য-মিথ্যাও হতে পারে। অনুমানকে যাচাই করার সুযোগ নেই।
মজিবুর রহমান মনজুর সাংবাদিক সম্মেলনের বহু বিবরণ প্রকাশিত হলেও সাংবাদিক সম্মেলনের প্রাক্কালে তাকে পুলিশ আটকে দিয়েছিল সে খবর কিন্তু কোথাও প্রকাশিত হয়নি। আমি শুনেছি, পুলিশ তাকে বিল্ডিং-এর এক ফ্লোরে আটকে রেখে বলেছিল, তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারবেন না। তখন তিনি কারো সাথে যোগাযোগ না করে কৌশলে ফেইস বুকে এ ব্যাপারে একটি স্ট্যাটাস দেন। পুলিশকে বলেন, আমাকে কমপক্ষে সাংবাদিকদের এ কথা বলার সুযোগ দেন যে আপনারা আমাকে সাংবাদিক সম্মেলন করতে দিচ্ছেন না। এরপর পুলিশ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগোযোগ করে। কিছুক্ষণ পর তাকে সম্মেলনস্থলে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে বলে দেয়, ভবিষ্যতে এ রকম কিছু করতে হলে তিনি যেন পুলিশকে পূর্বাহ্নে অবহিত করেন এবং যা বলবেন এর কপি তাদেরকে দেন। এ ঘটনা থেকে কি প্রমাণিত হয়? আসলে তিনি সরকারের এজেন্ট হলে পুলিশকে সরকার আগেই এ ব্যাপারে অবহিত করে রাখতে।
মজিবুর রহমান মনজু তাঁর উদ্যোগ শুরু করার পর থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীর পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে নানা প্রকার বিরূপ মন্তব্য আসছে। হেন কোন কথা নেই যা তাঁর বিরুদ্ধে বলা হয়নি। জামায়াতের দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে নিছক তাদের সাথে যোগাযোগ সীমাবদ্ধ থাকেনি যারা তাঁর সাথে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জামায়াত দেশ-বিদেশে নিজের সকল জনশক্তির কাছে এর বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। সর্বশক্তি দিয়ে এ উদ্যোগ বন্ধ করার চেষ্টা করেছে। শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলন বন্ধের চেষ্টা করেছে। জামায়াতের শীর্ষ দায়িত্বশীলদের এ উদ্দেশ্যে বিদেশ সফর এবং মনজুর উদ্যোগের বিরুদ্ধে জামায়াতের জনশক্তির বিরূপ মন্তব্যগুলোও প্রনিধানযোগ্য।
একদল লোক মনজুকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দিচ্ছেন। মনে হচ্ছে, কোন ব্যক্তি একটি ইসলামী সংগঠন ত্যাগ করলে বা ইসলামী রাজনীতি না করলেই ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়। এটা একটা ভ্রান্ত এবং মারাত্মক ক্ষতিকর চিন্তাধারা। অবশ্য এ ধরণের প্রবণতা ইসলামের প্রাথমিক যুগেই দেখা গেছে। রাজনৈতিক মতপার্থক্যকে তারা ভুল ধর্মীয় মতবাদ দিয়ে প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করেছে।
ইসলামে রাজনীতি আছে ঠিক। কিন্তু সবাইকে রাজনীতি করতে হবে এমন কোন কথা নয়। মুসলিম বিশ্বের কোটি কোটি লোক কোন ইসলামী দলের সাথে যুক্ত নয়। তারা কী ইসলামের বাইরে? না, তারা সবাই মুসলিম উম্মাহর অন্তর্গত এবং মুসলিম জামাতের সদস্য। তারা কেউ ইসলামের বাইরে নয়।
মনজু সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, কোন নির্দিষ্ট আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। এ কারণে অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, আদর্শ নেই এটা কেমন কথা? কিন্তু সাথে সাথে তিনি মুক্তিযুদ্ধের তিন মূলনীতি সাম্য , মানবিক মর্যাদা , সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘কোন তত্ত্ব বা মতবাদ প্রতিষ্ঠা নয়। আমরা অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করতে চাই। নাগরিক অধিকার ও কল্যানরাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকারই আমাদের আদর্শ।’ এর মানে তারা আদর্শহীন নয় এবং তাদের আদর্শ হচ্ছে জনকল্যণ। সত্যিকার অর্থে রাজনীতির মূল কথা ক্ষমতা দখল নয়, জনগণের কল্যাণ সাধন। রাজনীতি একটি সেকুলার বা ইহলৌকিক বিষয়, জাগতিক কল্যাণ সাধন এর লক্ষ্য। এ রকম রাজনীতির কপালে ইসলামের সাইনবোর্ড না থাকলেও এটা ইসলামী রাজনীতি, সহজ এ কথাটা কিছু লোকের মাথায় কিছুতেই আসে না। তারা সবকিছুতে সাইনবোর্ড চায়।
সংবাদ সম্মেলনে মজিবুর রহমান মনজুর লিখিত বক্তব্য পুরোটা আমি শুনেছি। সেখানে তিনি যথার্থভাবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের কথা বলেছেন। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে সকল মানুষের সেবা ও নিরাপত্তা বিধান। কে ধার্মিক আর কে নাস্তিক সেটা বিবেচনা করে যারা সেবা দিতে চায় তারা বড় অধার্মিক।
মনজু যা বলেছেন তা তারা করতে পারলে অবশ্যই সেটা বাংলাদেশের জন্যে কল্যাণকর হবে। তবে তিনি সফল হবেন না ব্যর্থ হবেন সে ভবিষ্যতবানী করার সময় এখনো আসেনি। যে সন্তান এখনো ভূমিষ্ঠ হয়নি তাকে নিয়ে জোতিষিগণ ভবিষ্যতবানী করলেও আমার পক্ষে তা করা সম্ভব নয়।
আমি চাই, শত ফুল ফুটুক।
লন্ডন ২৮ এপ্রিল ২০১৯