
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক: বিএনপিতে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা নিয়ে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ বাড়ছে। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্ব ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দূর প্রবাসে থাকার কারণে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ ও দিক নির্দেশনার কর্তৃত্ব করায়ত্ব করতে দুইটি গ্রুপ সক্রিয় ।
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, দলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পরেই পদ ও জৈষ্ঠতায় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের অবস্থান। তিনি চাচ্ছেন সিদ্ধান্ত গ্রহণে একক কর্তৃত্ব নিতে। তার পক্ষে রয়েছেন দলের গোটা কয়েক নেতাও।ইতিমধ্যে গত ১৭ মার্চ তারেক রহমানের সঙ্গে স্কাইপে আলোচনায় কুমিল্লা উত্তর সভাপতি ও চার বারের সাবেক এমপি ইন্জিনিয়র মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী খন্দকার মোশাররফকে বিএনপির দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
তিনি তারেক রহমানকে বলেন, ড. মোশাররফকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিতে হবে। কেবল মুন্সি একা নন,ঐ মতবিনিময় সভায় ড.মোশাররফের পক্ষের লোকজন এই প্রস্তাবে সমর্থন দেন। সেখানে উপস্থিত কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান জানান, তারেক রহমানের কাছে যখন ইন্জিনিয়র মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার প্রস্তাব দেন তখন আমরা হতভম্ব হয়ে যাই।
কারণ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের কয়েকজন মুন্সির ওপর মারমুখী হলে একজন নেতা আমাদের নিরস্ত করেন।দলের অভ্যন্তরে এনিয়ে তোলপাড় চলছে। কুমিল্লা বিএনপির একজন নেতা বলেন, তারেক রহমানের সাথে স্কাইপে আলোচনায় বসার আগের রাতে ড.মোশাররফের উপস্থিতিতে তার বাসায় বসে প্রস্তাব তৈরি করা হয় এবং কুমিল্লার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বাদ দিয়ে কেবল ড.মোশাররফের অনুগতদের তারেক রহমানের স্কাইপে মিটিং এ নেয়া হয়। তারেক রহমানকে মুন্সি বলেন, আপনি বিদেশ আছেন, ম্যাডাম কারাগারে।
এ অবস্থায় দেশে ‘শারীরিকভাবে’ উপস্থিত খন্দকার মোশাররফ সাহেবকে দলের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। কারণ তিনি সব নেতার থেকে সিনিয়র। এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করে আসছেন মির্জা ফখরুল, ইসলাম অালমগীর। যেটা ড.মোশাররফ ও তার পক্ষের নেতারা চান না। বেগম খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারারুদ্ধ হওয়ার পর ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।
গুলশানের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সেই বৈঠকের পর দলের বেশীরভাগ সিনিয়র নেতাদের অসন্তুস্টির কারণে পরবর্তী বৈঠকগুলোতে সভাপতিত্ব করে আসছেন মির্জা ফখরুল। স্থায়ী কমিটির বৈঠকগুলোতে সভাপতিত্ব করার সুযোগ না পেলেও বৈঠকে মোশাররফ তার সিদ্ধান্ত ও মতামতকে গুরুত্ব দেয়ার জন্য চাপে রাখেন অন্যদেরকে। গত নির্বাচনে তিনি একক সিদ্ধান্তে কুমিল্লার দুইটি আসন থেকে নির্বাচন করেন।
তার নিজের দাউদকান্দি আসন ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী মরহুম এম কে আনোয়ারের কুমিল্লা-২ (তিতাস-হোমনা) আসন থেকে নির্বাচনে দাড়ান তিনি। সেখানে এমকে আনোয়ারের বড় ছেলে মাহমুদ আনোয়ারের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও দলে প্রভাব বিস্তার করে ক্ষমতার জোরে তিনি মনোনয়ন নেন।বঞ্ছিত করা হয় এমকে আনোয়ারের পরিবারকে। এসব নিয়ে দ্বন্দ প্রকট হচ্ছে। দলের একজন সিনিয়র নেতার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কর্মকান্ড ও আচরণ নিয়ে দলে কেউ কেউ সন্দেহ করেন। তিনি দলে থেকে দলের বিপক্ষে প্রকাশ্যে-গোপনে কাজ করছেন।
সরকারের সাথে তার লিয়াজোঁ থাকতে পারে বলেও সন্দেহ। তার নামে ১২ টি মামলা থাকলেও বেশীরভাগই দুদকের করা আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত।রাজনৈতিক মামলা কম। তার মামলা নিয়ে দুদক অনেকটা চুপচাপ। একটি সূত্র জানায়, মামলার সাজার ভয়ে তিনি সরকারের একটি পক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। অপরদিেক মির্জা ফখরুলের নামে মামলার সংখ্যা শতাধিক। দলের কোন কোন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে পাওয়া য়ায়নি।
বিএনপির মহাসচিব হওয়ার জন্য তিনি চেষ্টা করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ফখরুলকে বেছে নেন হাই কমান্ড। গত১৮ জানুয়ারি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় দল পুনর্গঠনে কাউন্সিল ডেকে নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দেন তিনি। তবে দলের হাইকমান্ড এটা আমলে নেননি।এতে বেশ ক্ষুব্দ তিনি। তিনি চান হয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হতে অথবা মহাসচিব হতে।
বেগম জিয়াকে মুক্তির জন্য আন্দোলন সংগ্রামের প্রশ্নে তার বক্তব্যও জোরালো নয়। মির্জা ফখরুলসহ অন্য কয়েকজন নেতা বেগম জিয়ার সাথে কারাগারে অনেকবার সাক্ষাতে গেলেও ড.মোশাররফ গেছেন দুই-তিন বার মাত্র। ড.মোশাররফের ঘনিষ্ট একজন নেতা বলেন, তিনি বিরোধ বাঁধাতে চান না। কিন্ত মির্জা ফখরুল ড.মোশাররফ সাহেবকে কোনঠাসা করে রাখতে চান।
২৫ জানুয়ারি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নীতিনির্ধারণী স্টিয়ারিং কমিটি থেকে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাদ পড়েন। এতে ফখরুল সাহেবের হাত থাকতে পারে বলে ড.মোশাররফের সন্দেহ। ওই নেতার দাবি,সবচেয়ে সিনিয়র হওয়ার পরও ড.মোশাররফকে স্থায়ী কমিটিতে সভাপতিত্ব করতে দিচ্ছে না। তবে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি ছেড়ে দিবেন বা সরকারের সাথে আপোষ করছেন এমন কথা শুধুমাত্র অপপ্রচার। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।