
মাহমুদুল হাসান জাহাঙ্গীরঃ
সংস্কৃতি হল একটি জাতির জাতিসত্ত্বার মূল নিয়ামক। সংস্কৃতির মাধ্যমেই একটি জাতির পরিচয় ফুটে ওঠে। এ পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে আছে বিভিন্ন জাতির বসবাস। আছে তাদের নিজস্ব স্বতন্ত্র পরিচয়। রয়েছে নিজ নিজ গোষ্ঠী, ভাষা, জাতি পরিচয় ও নিজস্ব সংস্কৃতি। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষি লোকজনের নিজস্ব সংস্কৃতির মতো অামাদের বাংলাদেশী অধিবাসীদের ও আছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি।
স্বতন্ত্র এক জাতি পরিচয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সংস্কৃতি ও বাংলাদেশী বাঙ্গালির সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য বিস্ময়কর। বিশ্বের অন্যান্য দেশে বর্ণভেদ, জাতিভেদ,গোষ্ঠীভেদ, শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ, ভেদাভেদ নিয়ে প্রতিনিয়ত হানাহানি, রক্তপাত সর্বদা বিরাজমান। কিন্তু আমাদের দেশে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ ক্রীশ্চান সহ বিভিন্ন সম্প্রদায় একত্রে সাম্য শান্তিতে নির্বিঘ্নে বসবাস করছে এটা বাঙ্গালি সংস্কৃতির এক উদার উদাহরণ।
কিন্ত বর্তমানে আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত বাঙ্গালি সংস্কৃতি অপসংস্কৃতি রাহুগ্রাসে ধ্বংসের ধারপ্রান্তে।
আকাশ সংস্কৃতি তথা ডিস এন্টিনার অবাধ ব্যবহার। ইন্টারনেটে নগ্নতার বিশাল বিচরণ। এই নগ্ন আচরণগুলোর প্রতি যুব সমাজের সম্মোহনী ঝোঁক। নাইট ক্লাব চর্চা। আড্ডার নামে যুবক যুবতীদের বেহায়াপনা।
মদ গাঁজা হিরোইনের মাধ্যমে নেশাগ্রস্থ হওয়ার প্রবণতা।
ব্লু -ফীল্ম / পর্ণো ছবির অনুমোদন যত্রতত্র সিডি ভিসিডির ক্যাসেট পর্ণো বই মোবাইল ফোনে ডাউনলোডের বাণিজ্যিক বিপণন স্থাপনের অবাধ সুযোগ সুবিধা উন্মুক্ত থাকা। ফ্যাশন শো নামে রুচিহীন ডিজাইনের নগ্নতা সৃষ্টি করা। যৌতুক, ঘুষ দুর্নীতি কে সামাজিক প্রথায় পরিণত করা।
বিবেকহীনেরর ন্যায় খাদ্যে ভেজাল মেশানোর মানসিকতা। দেশীয় খাবারের দুষ্প্রাপ্যতা। কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে এ সকল খাবারের প্রতি অনাগ্রহতা ফাস্টফুডের বাজারজাত খাবার খেতে ফ্যাশনী মনোভাব থাকা। অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা।
শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি বিস্তারের মাধ্যমে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নষ্ট করা। সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করা। নৈতিক শিক্ষার অবারিত সুযোগ সুবিধা না থাকা।মুক্ত বুদ্ধির সুযোগ সুবিধা না থাকা। মহাজনী ও মজুতদার প্রথার অবাধ সুযোগ সুবিধা থাকার কারনে। প্রতিহিংসা প্রবণ রাজনৈতিক মতাদর্শ। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। আর্দশের লালন ও আর্দশ চর্চার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ না থাকা।
আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল, সর্বোপরি গুণীজনকে উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন না করার কারন।
মুক্তির উপায় স্বরূপ ————-
নৈতিক শিক্ষার অবারিত সুযোগ তৈরী করা। ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করা। স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য গণসচেতনতা সৃষ্টি করা। জাতীয় ঐতিহ্য ও অতীত ইতিহাসের অনুশীলন করা। দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি উদার মননশীল হতে শিক্ষা দেয়া। বিলুপ্ত সংস্কৃতি গুলোকে জাতীয় জীবনে পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে
রাষ্ট্রীয় ভাবে পদক্ষেপ গ্রহন করা। জাতীয় শিক্ষাক্রমে দেশীয় সংস্কৃতির উপর বিশেষ অধ্যায় সংযোগ করা এবং তা সিলেবাস ভুক্ত করা। ডিস এন্টেনা বা আকাশ সংস্কৃতির খারাপ চ্যানেলগুলো রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে বন্ধ করে দেয়া। ইন্টারনেটে পর্ণোগ্রাফীর প্রতি বিশেষ ভাবে গুরুত্ব প্রদান করা
মাদক, ধূমপান, ঘুষ দুর্নীতি চিরতরে নির্মূল করতে হবে। যৌতুক গ্রহন প্রদান সমাজ থেকে বিতারিত করতে হবে। আইনের প্রতি স্রদ্ধাশীল হওয়া। আর্দশের লালন ও আর্দশ চর্চার প্রতি মননশীল হওয়া। মুক্ত বুদ্ধি চর্চার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাস, রাজনীতি ও ধুমপান মুক্ত রাখতে হবে।
গুণীজনের উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি জাতীয় জীবনে দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে।
লেখকঃ সাহিত্য ও সংস্কৃতি কর্মী