
শাহেদ শাহরিয়ার :
মদীনা পাবলিকেশান্স থেকে ৯০ দশকে “মুসলিম জাহান” নামে একটি ট্যাবলয়েড সাপ্তাহিক প্রকাশিত হতো। সম্পাদক ছিলেন জনাব মোস্তফা মঈনুদ্দীন খাঁন। মাওলানা মুহিউদ্দীন খাঁন (রাহিমাহুল্লাহ)’র ছেলে। পত্রিকাটি এখন আর বের হয় কি না জানিনা।
শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রানাসিঙ্গে প্রেমাদাসা (রণে সিংহ, প্রেমে দাস?) তখন আততায়ীর হামলায় নিহত হয়েছেন। সাপ্তাহিক মুসলিম জাহানের নিকটতম সংখ্যাটির ফ্রন্টপেজে মুহিউদ্দীন খাঁন রাহিমাহুল্লাহর একটি আবেগঘণ স্মৃতিচারণ ছাপা হয়েছিলো। অনেকদিন পর্যন্ত আমি আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহে লেখাটি সংরক্ষণ করে রেখেছিলাম।
‘রাবেতা আলম আল ইসলামী’ নামের একটি নেতৃস্থানীয় বৈশ্বিক ইসলামী সংস্থার সেবারকার শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোতে। বাংলাদেশী প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য অথবা নেতা হিসেবে খাঁন সাহেবও অংশগ্রহণ করেছিলেন সেই সম্মেলনে।
খাঁন সাহেব তাঁর স্মৃতিকথায় বলছিলেন – সম্মেলনে যোগদানের পূর্বপর্যন্ত তাঁর মনের মধ্যে একটি জিজ্ঞাসা বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিলো – শ্রীলংকার মতো একটি অমুসলিমপ্রধান রাষ্ট্র রাবেতার মতো একটি ইসলামী সংস্থার শীর্ষসম্মেলনের আয়োজনের উদ্যোগ কেনই বা গ্রহণ করবে? কী কারণ থাকতে পারে?
উত্তরটি তিনি সম্মেলনের শুরুতেই পেয়ে গিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট প্রেমাদাসার ব্যক্তিগত আগ্রহেই সেটা সম্ভব হয়েছিলো।
প্রেমাদাসা যখন প্রেসিডেন্ট, হানিফা মুহাম্মদ (অথবা মুহাম্মদ হানিফা) তখন পার্লামেন্টের স্পীকার। প্রধান অতিথির উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রেমাদাসা জানিয়েছিলেন অনুষ্ঠানের সভাপতি হানিফা এবং তিনি, উভয়ে আশৈশব বন্ধু। হানিফা যেমন একজন বিশ্বাসী মুসলিম, তেমনি তিনিও ধর্মঅন্তপ্রাণ একজন বৌদ্ধ। কিন্তু হানিফার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদীয় আসনে যদি প্রেমাদাসা দাঁড়ান তাহলে হানিফা নির্ঘাত হারাবেন, পক্ষান্তরে তাঁর বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে যদি হানিফা দাঁড়ান তাহলে জামানত হারাবেন প্রেমাদাসা!
দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান সমস্যা হিসেবে তিনি সাম্রদায়িকতা বা ধর্মীয় বিদ্বেষ-বিভাজনকে চিহ্নিত করেছিলেন, বলেছিলেন এর থেকে মুক্তির জন্য আমাদেরকে এর মূলোৎপাটন করতে হবে।
খাবার টেবিলে প্রেমাদাসা এবং তাঁর স্ত্রী (ফার্স্ট লেডী) নিজেরা ঘুরে ঘুরে তদারকি করছিলেন। বাংলাদেশী প্রতিনিধিদলের টেবিলে এসে তাঁরা অধিকতর অন্তরঙ্গ ছিলেন। বেশ খানিকটা বাংলাও জানতেন তিনি! প্রেমাদাসা গর্বভরে জানিয়েছিলেন একজন বাঙ্গালী বিজয় সিংহই বিজয় করেছিলেন সিংহল!
শ্রীলংকা থেকে খাঁন সাহেবেরা ফিরেছিলেন পূর্ণহৃদয় ভালোবাসা নিয়ে। খাঁন সাহেব আফসোস করেছিলেন কেমন মহৎ হৃদয় এবং দূরদ্রষ্টা একজন রাষ্ট্রনায়ককে হারিয়েছিলো দক্ষিণ এশিয়া।
২১ এপ্রিলে রক্তাক্ত শ্রীলংকার জন্য সমবেদনা! যিসাসের অনুরাগীদের জন্য পূর্ণভালোবাসা। ক্রাইস্টচার্চের রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতে সিংহলের চার্চে এই হামলা হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটালো….
সন্ত্রাস পরাজিত হোক…
সন্ত্রাস মূলোৎপাটিত হোক সর্বত্র…
প্রেমাদাসার শ্রীলংকার জন্য সমবেদনা
প্রেমাদাসার শ্রীলংকার জন্য ভালোবাসা, ভালোবাসা….
২২.০৪.২০১৯
শিবগঞ্জ, সিলেট।