
ফরীদ আহমদ রেজা: ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জামায়াত থেকে পদত্যাগ করবেন তা আমার জানা ছিল না। আমি ভাবতেও পারিনি, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতৃবৃন্দের প্রধান আইনজীবী ৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পদত্যাগ করবেন। তাঁর পদত্যাগের খবর আমি আরো অনেকের মতো বিবিসি থেকে জেনেছি। কয়েকদিন আগে লণ্ডনের একটি ইমিগ্র্যাশন আদালতে তাঁর সাথে আমার দেখা হয়েছে। তখনো তিনি এ ব্যাপারে কোন ইঙ্গিত দেননি।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে দু দিক দিয়ে ভাগ্যবান বলতে হবে। প্রথমত বাংলাদেশে থাকলে এখন হয়তো তিনি জেলে থাকতেন। দ্বিতীয়ত জামায়াতে ইসলামীকে বিলুপ্ত ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভুমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ব্যারিস্টার রাজ্জাক পদত্যাগ করলেও তাঁর প্রতি জামায়াত দলীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শন করে কথা বলছে। দলীয়ভাবে তাঁর চরিত্র হনন করা হচ্ছে না এবং দলে তাঁর অবদানকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। অতীতে জামায়াত থেকে চলে যাওয়া কোন নেতার ভাগ্য এ রকম সুপ্রসন্ন ছিল না।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জামায়াত থেকে পদত্যাগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান ১৫ ফেব্রুয়ারী জামায়াতের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকসহ আমরা দীর্ঘদিন একই সাথে এই সংগঠনে কাজ করেছি। তিনি জামায়াতে ইসলামীর একজন সিনিয়র পর্যায়ের দায়িত্বশীল ছিলেন। তার অতীতের সকল অবদান আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি।’
‘তার পদত্যাগে আমরা ব্যথিত ও মর্মাহত। পদত্যাগ করা যে কোন সদস্যের স্বীকৃত অধিকার। আমরা দোয়া করি তিনি যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। আমরা আশা করি তার সাথে আমাদের মহব্বতের সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।’
দলত্যাগীদের ব্যাপারে ডা শফিকুর রহমানের এ বক্তব্যের সাথে সাংগঠনিকভাবে জামায়াতে ইসলামী এবং এর কর্মীরা ঐকমত্য পোষণ করছেন, এ সুধারণা আমার দৃষ্টিতে অনেক বড় বিষয়। একজন ব্যক্তির কোনো দল থেকে পদত্যাগ করার স্বীকৃত অধিকারকে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, তাঁকে জাহান্নামী বলে ঘোষণা দেননি। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক নিছক পদত্যাগ করেননি ৭১’র ভূমিকার কারণে জামায়াতে ইসলামীকে বিলুপ্ত করারও পরামর্শ দিয়েছেন। এর মানে হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার কারণে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর কোন ভবিষ্যৎ নেই বলে তিনি মনে করছেন, এ কারণেই দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিলুপ্তি চেয়েছেন। এর পরও তাঁর প্রতি দলীয়ভাবে ঘৃণা প্রচার করা হয়নি, বরং তাঁর অতীত অবদানের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।
আমার মনে হয় সময় ও পরিস্থিতি জামায়াতের দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে এ পরিবর্তন এনে দিয়েছে, এটা অবশ্যই শুভলক্ষণ। বর্তমান জামায়াত নেতৃবৃন্দকে এ জন্যে ধন্যবাদ।