ইউকে সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
হেডলাইন

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ভাগ্যবান মানুষ

ফরীদ আহমদ রেজা: ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জামায়াত থেকে পদত্যাগ করবেন তা আমার জানা ছিল না। আমি ভাবতেও পারিনি, ‎যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতৃবৃন্দের প্রধান আইনজীবী ৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ‎তুলে পদত্যাগ করবেন। তাঁর পদত্যাগের খবর আমি আরো অনেকের মতো বিবিসি থেকে জেনেছি। কয়েকদিন ‎আগে লণ্ডনের একটি ইমিগ্র্যাশন আদালতে তাঁর সাথে আমার দেখা হয়েছে। তখনো তিনি এ ব্যাপারে কোন ‎ইঙ্গিত দেননি।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে দু দিক দিয়ে ভাগ্যবান বলতে হবে। প্রথমত বাংলাদেশে থাকলে এখন হয়তো ‎তিনি জেলে থাকতেন। দ্বিতীয়ত জামায়াতে ইসলামীকে বিলুপ্ত ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভুমিকার জন্য ক্ষমা ‎চাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ব্যারিস্টার রাজ্জাক পদত্যাগ করলেও তাঁর প্রতি জামায়াত দলীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শন ‎করে কথা বলছে। দলীয়ভাবে তাঁর চরিত্র হনন করা হচ্ছে না এবং দলে তাঁর অবদানকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। ‎অতীতে জামায়াত থেকে চলে যাওয়া কোন নেতার ভাগ্য এ রকম সুপ্রসন্ন ছিল না। ‎

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জামায়াত থেকে পদত্যাগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী ‎জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান ১৫ ফেব্রুয়ারী জামায়াতের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলেন, ‎‎‘ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকসহ আমরা দীর্ঘদিন একই সাথে এই সংগঠনে কাজ করেছি। তিনি জামায়াতে ‎ইসলামীর একজন সিনিয়র পর্যায়ের দায়িত্বশীল ছিলেন। তার অতীতের সকল অবদান আমরা শ্রদ্ধার সাথে ‎স্মরণ করি।’‎

‎‘তার পদত্যাগে আমরা ব্যথিত ও মর্মাহত। পদত্যাগ করা যে কোন সদস্যের স্বীকৃত অধিকার। আমরা দোয়া ‎করি তিনি যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। আমরা আশা করি তার সাথে আমাদের মহব্বতের ‎সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।’‎

দলত্যাগীদের ব্যাপারে ডা শফিকুর রহমানের এ বক্তব্যের সাথে সাংগঠনিকভাবে জামায়াতে ইসলামী এবং এর ‎কর্মীরা ঐকমত্য পোষণ করছেন, এ সুধারণা আমার দৃষ্টিতে অনেক বড় বিষয়। একজন ব্যক্তির কোনো দল ‎থেকে পদত্যাগ করার স্বীকৃত অধিকারকে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, তাঁকে জাহান্নামী বলে ঘোষণা দেননি। ‎ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক নিছক পদত্যাগ করেননি ৭১’র ভূমিকার কারণে জামায়াতে ইসলামীকে বিলুপ্ত করারও ‎পরামর্শ দিয়েছেন। এর মানে হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার কারণে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর কোন ‎ভবিষ্যৎ নেই বলে তিনি মনে করছেন, এ কারণেই দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিলুপ্তি চেয়েছেন। এর ‎পরও তাঁর প্রতি দলীয়ভাবে ঘৃণা প্রচার করা হয়নি, বরং তাঁর অতীত অবদানের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। ‎

আমার মনে হয় সময় ও পরিস্থিতি জামায়াতের দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে এ পরিবর্তন এনে দিয়েছে, এটা অবশ্যই ‎শুভলক্ষণ। বর্তমান জামায়াত নেতৃবৃন্দকে এ জন্যে ধন্যবাদ।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ